‘ফিরোজা’য় খালেদা জিয়াসহ ১০ জন করোনায় আক্রান্ত

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। রাজধানীর গুলশানের যে বাসায় তিনি থাকেন, ‘ফিরোজা’ নামের সেই বাসার আরো ৯ জন স্টাফও আক্রান্ত হয়েছেন। তবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রবিবার বিকেলে জানিয়েছেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) ভালো আছেন, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। বর্তমানে বাসায়ই ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।’

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আল মামুন বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে ম্যাডামের ফিজিক্যাল কন্ডিশন ভালো। কোনো উপসর্গ তাঁর নেই। জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট কোনো কিছুই নেই।’

তাহলে কেন তাঁর নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ল—এর ব্যাখ্যায় ডা. মামুন বলেন, ‘পাঁচ-ছয় দিন আগে বাসার একজন স্টাফের জ্বর জ্বর ভাব ছিল। তখন তার টেস্ট করা হলে রেজাল্ট পজিটিভ আসে। পজিটিভ আসার পর ওই স্টাফ যে রুমে থাকত, সেই রুমের বাকিদেরও আমরা টেস্ট করাই। তখন তাদেরও পজিটিভ আসে। পজিটিভ আসার পর সেফটি পারপাসে ম্যাডামের টেস্ট শনিবার করানো হয়। এরপর পজিটিভ আসে ম্যাডামের রেজাল্টও।’

ডা. মামুন জানান, আপাতত বাসায়ই খালেদা জিয়াসহ আক্রান্ত সবার চিকিৎসা চলছে। বাসায় হাসপাতালের মতোই অক্সিজেনসহ সব ধরনের সাপোর্ট রয়েছে। এর পরও প্রয়োজন হলে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়া হবে; সেখানে চেয়ারপারসনের জন্য একটি কেবিন প্রস্তুত করা আছে।

পারিবারিক সূত্র মতে, খালেদা জিয়ার বাসায় দায়িত্বরত নার্স রূপা আক্তার, গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও স্টাফ আবুল খায়ের, আলমগীর, চান্দু, লালু, বাবুর্চি রতন, ড্রাইভার জালাল ও রহিম করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এই স্টাফদের কারো অবস্থাই ততটা গুরুতর নয়। ওই বাসায় রান্না করা খাবারই এখন খালেদা জিয়া খাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

ডা. মামুন শনিবার রাত ও রবিবার সকাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরটি গোপন রেখে সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করেন। তবে গতকাল বিকেলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। গতকাল সকাল থেকেই খালেদার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর দলের পক্ষ থেকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মির্জা ফখরুল।

করোনার বিষয়টি কেন গোপন করা হয়েছিল—জানতে চাইলে ডা. মামুন বলেন, “একজন চিকিৎসক হিসেবে প্রত্যেকটি রোগীর ‘প্রাইভেসি’র বিষয়টি গোপন রাখাই আমার ঈমানি দায়িত্ব এবং আমি সেটিই করেছি। কিন্তু এখন ফলাফল পজিটিভ হওয়ায় আমি স্বীকার করলাম। তা ছাড়া ম্যাডামের চিকিৎসার জন্য একটি মেডিক্যাল বোর্ড রয়েছে। করোনার কোনো উপসর্গও তাঁর ছিল না।’

বিকেলে বাসভবন ‘ফিরোজা’র সামনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী গেটের বাইরে পাহারা দিচ্ছেন। তাঁরা জানান, খালেদা জিয়া বাসার দোতলায় কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ডাক্তার এসে তাঁকে দেখে গেছেন। ডাক্তার ছাড়া কারো এখন ভেতরে ঢোকার অনুমতি নেই। এমনিতে প্রতিদিনই কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন বাসায় আসতেন, গতকাল তাঁরা কেউ আসেননি, টেলিফোনে খোঁজখবর নিচ্ছেন। গতকাল বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শনিবার আইসিডিডিআরবিতে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখান থেকে যে রিপোর্ট পেয়েছি, তা পজিটিভ। অর্থাৎ তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রফেসর ডা. এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে এবং খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ইতিমধ্যে চিকিৎসা শুরু হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাঁর (খালেদা জিয়া) শারীরিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে, এখন পর্যন্ত অন্য কোনো উপসর্গ নেই। আমরা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, তিনি ভালো আছেন। চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অর্থাৎ যদি কোনো প্রয়োজন হয় তখন সেভাবেই ফারদার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাচ্ছি, এই ব্যাধি এখন যেভাবে সারা দেশে একটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসীকে আমরা আহ্বান জানাব, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াও আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁর জন্য, তাঁর রোগমুক্তির জন্য সবাই যেন দোয়া করেন। বিশেষ করে আমাদের দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান থাকবে যে তাঁরা দেশনেত্রীর রোগমুক্তির জন্য পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া চাইবেন এবং সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁরা যেন দোয়া করেন। আমাদের অনুরোধ থাকবে যে স্থানীয় মসজিদে তাঁর জন্য দোয়া করবেন।’

এদিকে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে বিবৃতি দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি সবার কাছে দোয়া ও আল্লাহর কাছে খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।