স্মৃতিকথা

বই পড়তে পড়তে রাত কেটে যেত

আমার বই পড়ার নেশা ইংরেজ লেখক আর,এম ব্যালেন্টাইন এর দ্যা কোরাল আইল্যান্ড এর বাংলা অনুবাদ-প্রবাল দ্বীপ দিয়েই শুরু। অমার মরহুম মফিজ কাকা তখন পড়তেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিষয়ে পড়তেন। তার কাছ থেকেই প্রথম উপহার পেলাম উপন্যাসের বই। তারপর তিনি প্রতি বার বাড়ি আসার সময় আমার জন্য এক গাদা ম্যাগাজিন নিয়ে আসতেন । এগুলোর মধ্যে ছিল রোববার, সুগন্ধা, তারকালোক,ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন পত্রিকার ঈদসংখ্যাগুলো পড়তাম। বিশেষ করে ভাতিজা ছাব্বির এর ঈদ সংখ্যা কেনার নেশা ছিল। ‍তার কাছ থেকে গল্প, কবিতা, উপন্যাস,স্মৃতি কথা , ভ্রমণ কাহিনী পড়তাম।।সেবা প্রকাশনীর বহু বই পড়েছি। পড়েছি পল্লী কবি জসিম উদ্দীন এর লেখা।জসিম উদ্দীনের রেশ মন থেকে শেষ না হতেই সন্ধান পাই শরৎসৃষ্টির। প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র। তার ‘বড়দিদিথ উপন্যাস কতবার পড়েছি, লেখাজোখা নেই। শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাসথ পাঠ শেষে নিজের হৃদয়ে পার্বতীর জন্য দাহ হতে শুরু করেছিল। প্রধান আকর্ষণ ‘পার্বতীথ। পার্বতীতে দেবদাসের বাশের কঞ্চি দিয়ে বেত্রাঘাত সহ্য করতে পারিনি। বইটি পড়ে কয়েক দিন ঘুম নষ্ট হয়েছিল।

রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ পাই ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালে। ‘ছুটিথ, ‘পোস্টমাস্টারথ, ‘হৈমন্তীথ ও ‘সমাপ্তিথ যতবার পাঠ করি, ততবারই লাগে নতুন। ‘সমাপ্তিথ গল্প সমাপ্ত করতে গিয়ে বারবার মনে পড়ত- ‘ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখ কথা/ নিতান্ত সহজ-সরল,/ সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি/ তারি দু-চারটি অশ্র“জল।/ নাহি বর্ণনার ছটা, ঘটনার ঘনঘটা,/ নাহি তত্ত নাহি উপদেশ।/ অন্তরে অতৃপ্তি রবে/ সাঙ্গ করি মনে হবে/ শেষ হয়েও হইল না শেষ।

ধারাবাহিক সিরিজ গ্রন্থের অন্যতম বনহুর ও মাসুদ রানা। সত্তরের দশকের শুরুতে এই দুই সিরিজের ঘোরের মধ্যে ছিলাম।
একসময় মনের মতো বই কেনার সামর্থ্য না থাকায় নানা কৌশলে বই হস্তগত করাসহ ধার কর্জ করে পড়তাম। সাব্বিরের মা ছিল গ্রামের বউদের মধ্যে ডিগ্রী পাস। সেই ভাবির অনেক বই ছিল ।সেগুলো এনে ধারাবাহিকভাবে পড়তাম। সাব্বির আহমেদ ও বইয়ের পোকা ছিলো। তার সাথে সবসময় গল্পের বই থাকতো ।এমনকি সে যদি ট্রেন যোগে কোথাও যেতো , তখনও বই নিয়ে যেত ।ট্রেনে লাইটের সমস্যা থাকলে মোমবাতি জ্বালিয়ে বই পড়ত। ওর কাছ থেকে বই নিয়ে পড়তাম। শুধু বই পড়ার জন্যই বন্ধুত্ব করতে হয়েছিল তার সাথেও। দস্যু বনহুর ও মাসুদ রানা একখÐ ধার করা বই সময় মতো ফিরিয়ে দেয়ার জন্য পড়তে পড়তে রাত পার হয়ে যেত। সম্পর্কিত এক চাচা পড়তেন সবজান্তা সিরিজের বই। বিচার-সালিশে তিনি অনেক দৃষ্টান্ত উপমা বলতেন। সাইমুম সিরিজের কয়েকটা বইয়ে রয়েছে শিক্ষণীয় কোথাও নতুন বইয়ের সন্ধান পেলে তা না পড়া পর্যন্ত স্বস্তি পেতাম না। বঙ্কিমের কপালকুÐলা ও বিষবৃক্ষ পাঠকালে মন চলে যেত অতিমর্ত্য জগতে। একসময় পাঠের পিপাসা এত বেশি ছিল যে, দুইদিন পর ফেরত দেবো এই কথা বলে বই এনে তাকে সাজিয়ে রাখতাম।‘চুরিথ করে বই এনে পিপাসা নিবৃত্ত করতাম। এখন পিপাসা এত কম যে, ‘গিফটথ হিসেবে বই দিয়েও পড়ানো যাচ্ছে না। এত দিন পাঠক বই খুঁজত- আর এখন বই পাঠক খোঁজে।

লেখক:
মমিনুল ইসলাম মোল্লা
কলামিস্ট, সাংবাদিক ও কিটো ক্যাম্পেইনার,