ঈদ আনন্দে বঞ্চিত গাইবান্ধার সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা

ছোটবেলা থেকেই আমরা জানি ঈদ মানে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন এবং আশেপাশের সবাইকে নিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠা। কিন্তু এই খুশির ঈদ সবার মাঝে সমানভাবে খুশির নাও হতে পারে। বরং কারো কারো জীবনে না পাওয়ার পাল্লাটা আরো ভারি হতে দেখা যায় উৎসবে। প্রায় প্রতি বছরই হতদরিদ্র মানুষদের, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এ ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়।

রোজার শুরু থেকেই অনেকেই ঈদের কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। ঈদে কোন পোশাক পরতে হবে, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে কখন যাওয়া হবে, কীভাবে অতিথি আপ্যায়ন করতে হবে- ঈদ নিয়ে এরকম হাজারো প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় ঈদের অনেক আগে থেকেই। ঈদ আয়োজনে ব্যস্ত এইসব মানুষের পাশাপাশি রয়েছে আরও এক শ্রেণির মানুষ। যাদের জীবনে ঈদ আসে ঠিকই কিন্তু সেখানে অনেক সময় আনন্দের বদলে থাকে কষ্টের অনুভূতি। বছরের অন্য দিনগুলোর মতোই কেটে যায় তাদের ঈদের দিনটিও। বরং দরিদ্রতার কারণে ছেলেমেয়েদের ভালো খাবার ও জামাকাপড় তুলে না দিতে পারার ব্যর্থতা গ্রাস করে এদিন অনেক বাবা-মাকেই।

সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুরাও দারিদ্র্যের বেড়াজালে থাকতে থাকতে যেন অনেক অভিজ্ঞ ও পরিপক্ক হয়ে যায়। তাদের সমবয়সী অন্য ছেলেমেয়েদের নতুন জামা পরে আনন্দে মেতে ওঠার দৃশ্যটি দেখে প্রথমে একটু হতাশা জাগলেও, পরবর্তী সময়ে পরিবারের আর্থিক সমস্যার কথা মাথায় নিয়ে সব না পাওয়াকে যেন হাসিমুখেই মেনে নেয়।

গাইবান্ধার রেলকলোনীতে এলাকায় বসবাসরত এমনই এক শিশু হৃদয়। সে জানায়, “লকডাউনে আমাদের আয় নেই বললেই চলে। এখন আমাদের সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই এবার ঈদে নতুন জামা কেনা হয়নি।”

গাইবান্ধার রেলকলোনীতে এলাকায় বসবাসরত আরেক সুবিধাবঞ্চিত শিশু মিতু আক্তার জানায়, “গত প্রায় ১ বছর ধরে পরিবারের অবস্থা ভালো না। পরিবারকে সাহায্য করতে আমি নিজেও এখন একটি বাসায় কাজ করি। ঈদ চলে গেলো কিন্তু টাকার অভাবে নতুন জামা পড়তে পারিনি।”

এতসব সমস্যার মধ্যেও কিছু পরিবার আছে, যারা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করে পরিবারের ছোট ছেলে-মেয়েগুলোকে অন্তত নতুন কাপড় কিনে দিতে। তবে এক্ষেত্রে একটু বেহিসাবি হলেই টান পড়ে সংসার খরচে।

গত এক বছরে করোনা মহামারির ছোবল যেন এই সমস্যাগুলোকে আরও তীব্র করে তুলেছে। কারণ নিম্ন আয়ের এসব মানুষের বেশিরভাগই গাড়িচালক, দিনমজুর অথবা অন্য কোনো পেশার খেটে খাওয়া মানুষ। লকডাউনে ও নানা বিধিনিষেধের কারণে তাদের আয় এখন অনেকটা শূন্যের কোঠায় গিয়ে পৌঁছেছে। কিছু কিছু পরিবারের নারীরা বাসা-বাড়িতে অথবা পোশাক কারখানায় কাজ করলেও করোনা মহামারিতে অনেকেই হারিয়েছেন কাজ। পর্যাপ্ত সাহায্যের অভাবে এখন কষ্টার্জিত সঞ্চয় ভাঙ্গিয়ে এবং এমনকি ধার-দেনা করে তারা বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছে। আর এমন পরিস্থিতিতে ঈদ আয়োজন নিয়ে ভাবা নিতান্তই বিলাসিতা মাত্র।

গাইবান্ধা রেলকলোনী এলাকার বাসিন্দা মন্টু মিয়া। যিনি পেশায় একজন রিকশাচালক। তিনি বলেন, “আগে দৈনিক আয় যতটুকু ছিল, এখন লকডাউনের মধ্যে তা তিন ভাগের এক ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে গত বছর যদিও কিছু সাহায্য পেয়েছি কিন্তু এবছর তাও তেমন একটা পাচ্ছি না। তাই ঈদ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই।”

বিগত বছরগুলোতে যদিও অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমাজের উচ্চবিত্তরা বছরের এই সময়টিতে দরিদ্র্য মানুষদের সেবায় এগিয়ে এসেছেন, কিন্তু এখন করোনা মহামারির কারণে সেটিও আর করা সম্ভব হয়ে ওঠছে না। তাই এখন কোনোদিক দিয়েই যেন আশার আলো দেখছেন না এইসব খেটে খাওয়া মানুষেরা।

এ বিষয়ে জুমবাংলা ইয়ূথ ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এসটি শাহীন বলেন, “প্রথমত প্রশাসনের উচিত দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সংখ্যা নির্ধারণ করা এবং এরপর তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা। এছাড়া সমাজের প্রতিটি মানুষের উচিত যার যার অবস্থান থেকে সুবিধাবঞ্চিতদের সাহায্যে এগিয়ে আসা।”