বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে বসছে পূর্বাভাস যন্ত্র

বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে সরকার নতুন একটি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। সেটি হলো বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় এই প্রাকৃতিক দুর্যোগটির পূর্বাভাস যন্ত্র বসানো হবে। এ তথ্য জানিয়েছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

সচিবালয়ে মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। গত ১০ বছরে বজ্রপাতের কারণে দেশে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২ হাজার মানুষ। প্রতিবছর বজ্রপাতে অন্তত শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ ও চলতি বছর প্রাণহানি হয়েছে গড়ে তিন শর বেশি।

এ ছাড়া ২০১১ সালে ১৭৯, ২০১২ সালে ২০১, ২০১৩ সালে ১৮৫, ২০১৪ সালে ১৭০, ২০১৫ সালে ২২৬, ২০১৯ সালে ১৯৮ এবং ২০২০ সালে ২৫৫ জনের প্রাণ গেছে বজ্রপাতে।

প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। ৪৭৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় তিন ধাপে কাজ করবে।

প্রথমত মানুষকে সচেতন করতে আমরা সচেতনতামূলক কাজ করা হবে। যেমন বজ্রপাতের আগে মেঘে গুড়গুড় ডাক হবে। এর ৪০ মিনিট পর বজ্রপাত হয়। এই গুড়গুড় ডাক শোনার পরেই যাতে মানুষ ঘরে থাকে বা মেঘ দেখে যাতে ঘরে থাকে সে বিষয়ে তাদের সচেতন করা হবে।

সেই সঙ্গে এখন আধুনিক বিশ্বে বজ্রপাতের জন্য সাইক্লোনের মতো আগাম সতর্কবার্তা দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কতগুলো মেশিন তৈরি করা হয়েছে যেগুলো ৪০ মিনিট আগে পূর্বাভাস দিতে পারে। এই মেশিনগুলো বসানো হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মেশিনগুলো বজ্রপাতপ্রবণ জেলাগুলোতে বসানো হবে, বিশেষ করে হাওড়-বাঁওড় এলাকায় আমরা গুরুত্ব বেশি দিয়েছি। এই সিগন্যাল একটি অ্যাপের মাধ্যমে যাতে স্থানীয়দের মোবাইলে যেতে পারে, সে জন্য একটি অ্যাপও তৈরি করা হবে। এর পাশাপাশি, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের মতো বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় বজ্রপাত আশ্রয় কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে’

তিনি বলেন, ‘আমরা যতগুলো মৃত্যুর খবর দেখেছি সবই কিন্তু খোলা মাঠ বা হাওড়ের মধ্যে। শহরাঞ্চলে কিন্তু বজ্রপাতে মৃত্যু হয় না। এ জন্য বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের মতো বজ্রপাতের আশ্রয় কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছি। বজ্রপাতপ্রবণ ও মুক্ত এলাকায় এগুলো করা হবে।’

এনামুর জানান, এ বিষয়ে প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এটার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই রিপোর্ট এলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আশ্রয় নেয়া ছাড়াও একাধিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে বলেও জানান এনামুর। বলেন, এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলো মাল্টিপারপাস হবে। এখানে কৃষক-মৎস্যজীবীরা সকালে নাশতা করতে পারবে, দুপুরে খাবার খেতে পারবে। অথবা ঝড়-বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টির সময় আশ্রয় নিতে পারবে। কেউ বিশ্রাম করতে চাইলে সেটাও করতে পারবে।