বরাদ্দ পেলো, টেন্ডার হলো কিন্তু সংস্কার হয়নি!

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়ক টেন্ডার হবার পরও সংস্কার না হওয়ায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পাশাপাশি জনগুরুত্বপ‚র্ণ এ সড়কের জরাজীর্ণ কালভার্টেরও কোনো মেরামতের ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ফলে, প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে সড়কের ভাঙা অংশ পানিতে ডুবে থাকে। আর দিনদিন জলাবদ্ধতায় নষ্ট হচ্ছে সড়ক।

যানবাহন ও জনগণের জন্য ওই সময় পথ চলাচল প্রায় বন্ধ থাকে। বিকল্প হিসেবে দুই কিলোমিটার দুরের আইকেসি সড়ক হয়ে ঘুরে আসতে হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে দ্রæত এটি মেরামত করে দুর্ভোগ নিরসনের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় সুত্রে জানায়, আয়ুব বিবি সড়কের শেষাংশ এমদাদ মাষ্টারের বাড়ির সামনে হতে লাল মিয়া কন্ডাক্টর সড়কটি সংযুক্ত হয়েছে হাজী আলীম উদ্দিন মার্কেটের কালাইয়ার দোকান পর্যন্ত। বর্তমানে খোয়াজনগর গ্রামের ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের এই সড়কটির অবস্থা বেশ শোচনীয়। সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ঝ‚কিপ‚র্ণ কালভার্ট। মোড় এলাকায় গভীর গর্ত। জোয়ারের পানি জমে জলাবদ্ধতায় প‚র্ণ থাকে। উঁচু জায়গা হওয়ায় কেবলমাত্র লালমিয়া মসজিদ সংলগ্ন বাজার এলাকায় কিছুটা ভালো রয়েছে। তবে সড়কটির আশি শতাংশ কোমায় চলে গেছে। এতে করে মাঝেমধ্যেই যানবাহন ও পথচারীরা দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। তবুও ভাঙা সড়ক চাঙা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিন্দুমাত্র ভ্রæক্ষেপ হচ্ছে না।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ থেকে ১০ মাস আগে এ বছরের ১৭ জানুয়ারি একটি প্যাকেজের আওতায় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এ সড়কটি নির্মাণ ও সংস্কার কাজের ই-টেন্ডার হয়। যার টেন্ডার আইডি ছিলো ৫২৭৩৯৯। রেফারেন্স নং ছিলো ৪৬.০২.১৫৩৯.০০০.১৪.০০১.২০। রাজস্ব খাত থেকে টেন্ডারটি অর্গানাইজ করেছিলেন কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ। ওই প্যাকেজের পার্ট এ’তে ছিল লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়ক ৫০০-৯০৭ মিটার পর্যন্ত আরসিসি দ্বারা উন্নয়ন। পার্ট বি’তে ছিল একই সড়কে অন্য অংশে ৫০ মিটার আরসিসি বক্স-কালভার্টসহ ৫৩৩ মিটার লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়ক নির্মাণ করা।

ওদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক মুখপাত্র জানান, ‘এটা শাহ জাব্বরিয়া লাইসেন্স এ ১ম লোয়েষ্ট হিসেবে কাজটি পেয়েছিল। পরবর্তীতে মেসার্স ফোরক আহমেদ এন্ড সন্স এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের দাখিলকৃত কার্য সম্পাদন সনদের সমস্যার কারণে কাজ না দিয়ে বিধি মোতাবেক ২য় সর্বনি¤œ দরপত্রদাতা হিসেবে তাদেরকে ও ওয়ার্ক অর্ডার না দিয়ে সরাসরি টেন্ডারটি বাতিল করে। উপজেলা পরিষদ অদ্যাবধি পূনঃটেন্ডারও না করে প্রকল্পটিই বাতিল করে দেন। যা রীতিমত অপরাধ ও পিপিআর মতে আইন বহির্ভ‚ত কাজ বলা যায়।’

সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আব্দুল শুক্কুর ও শাহাজান জানান, ‘খোয়াজনগর গ্রামের তিন ওয়ার্ডের বেশির ভাগ মানুষকে পুরাতন ব্রিজঘাট বাজার ও জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়ক ব্যবহার করতে হয়। তাছাড়া এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে আয়ুব বিবি স্কুল এন্ড কলেজ, আছিয়া মোতালেব রিজিয়া নাসরিন স্কুল এন্ড কলেজ, অহিদিয়া প্রি-ক্যাডেট স্কুল, হাজী আলিম উদ্দীন ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজের শত শত শিক্ষার্থী। তবুও এত জনগুরুত্বপ‚র্ণ এই সড়কটি দ্রæত সংস্কারের ব্যাপারে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই।’

এলাকাবাসীর ধারণা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের গাফলাতির কারণেই তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আরও অভিযোগ, পুরো উপজেলায় যখন বড় ধরণের উন্নয়ন যজ্ঞ চলমান, তখন এ সড়কটি টেন্ডার হওয়ার পরও কেন অবহেলিত থাকবে। তা তাদের বোধগম্য নয়।

নির্ভরযোগ্য স‚ত্র জানিয়েছে, সংযোগ সড়ক ও দুটি কালভার্টসহ সড়কটি নির্মাণে স্থানীয় সংসদ সদস্য ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী’র প্রচেষ্টায় ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দে টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু অজানা কোন কারণে মন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্বেও টেন্ডারটা বাতিল করে দেন কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা জানান, ‘আসলে উপজেলা রাজস্ব খাত থেকে ঐ সড়কের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রেখে টেন্ডার দেওয়া হলেও উপজেলা পরিষদ টেন্ডারটা বাতিল করে দেয়। কেন কি কারণে বাতিল করেছে তা আমি বলতে পারব না। আমরা এ সড়কটি আরসিসি ও কালভার্টসহ নির্মাণ করার জন্য নতুন প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠিয়েছি। প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়ে আসলে বাকি প্রসেসিং সম্পন্ন করা হবে।’

খোয়াজনগর এলাকার ইউরি সদস্য জালাল উদ্দিন ইকবাল বলেন, ‘এ সড়ক দিয়ে এখন কোন বড় গাড়ি চলে না। কারণ কালভার্ট ভাঙা। জোয়ারে সড়কের বেশির ভাগ অংশ নোনা পানিতে ডুবে যায়। ঝুঁকি নিয়ে তবুও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলে।’

এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, ‘উপজেলা রাজস্ব বিভাগ থেকে টেন্ডার দেওয়ার পরও চট্টগ্রাম ৩ প্রকল্পের অধীনে হওয়ায় কাজটি করা সম্ভব হয়নি। গ্রেটার চট্টগ্রাম ৩ প্রকল্প থেকে কাজটি শিগগিরই সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।’ তবে পরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও জানা সম্ভব হয়নি; কেন বরাদ্দ রেখে টেন্ডার শেষ করেও জনগুরুত্বপ‚র্ণ সড়কটির কাজ শুরু করা হয়নি।