বাংলাদেশে এইডস ঝুঁকি বাড়িয়েছে রোহিঙ্গারা

১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দেশকে এইডসের ঝুঁকিমুক্ত করতে বাংলাদেশেও এই দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে আসছে। শুধু তাই নয়, এইডস ঝুঁকি থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে সরকার আর বেসরকারি সংস্থার নানা উদ্যোগ ছিলো। এর ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ অনেকটা এইডস ঝুঁকিমুক্ত হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে ঢুকে পড়েছে রোহিঙ্গারা। আর রোহিঙ্গাদের মধ্যে একের পর এক সনাক্ত হচ্ছে এইডস রোগী। এর সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। আরো ৪০ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই ভাইরাস রয়েছে বলে আশংকা সংশ্লিষ্টদের। ফলে বাংলাদেশ আবার অত্যন্ত এইডস ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এতে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এনিয়ে সরকারও চিন্তিত।

কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ২৫ আগস্টের পর থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। নতুন আর পুরানো মিলে উখিয়া টেকনাফে এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। উখিয়া টেকনাফ আর ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের একটি বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা নানা রোগে আক্রান্ত। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক এইডস রোগী। এই পর্যন্ত ৯৭ জন রোহিঙ্গার শরীরে এইডস ধরা পড়েছে। এরাই সবাই অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এলে পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের এইডস সনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ বছরের শিশুও পাওয়া গেছে। আরো অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে এই মরণঘাতি ভাইরাস থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কক্সবাজার সিভিল সার্জনের তথ্য মতে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে সর্বশেষ ৯৭ জনের মধ্যে পাওয়া গেছে মরণ ব্যাধি রোগের এইডস ভাইরাস। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের রোহিঙ্গা ইউনিটে এইচআইভি পজেটিভসহ অন্য রোগে আক্রান্ত রোহিঙ্গারা চিকিৎসা নিচ্ছে। ধর্ষণ এবং সচেতনতার অভাবে এ রোগটি রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে বলে মনে করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগ।

সিভিল সার্জন আবদুস সালাম বলেন, আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী মিয়ানমারের মধ্যে এইডস এর প্রকোপ বেশি। মিয়ানমারে এইডস এর প্রকোপের হার ১০%। বাংলাদেশে .০১%। তাই মিয়ানমারে থেকে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস রোগী প্রতিদিন ৩-৪জন করে পাচ্ছে। তাদেরকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের এইডস রোগী বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে আমার মনে হয়, মেয়েরা আর্মিসহ বিভিন্নভাবে ধর্ষিত হয়। ফলে এইডস আক্রান্ত মায়েদের জন্ম দেয়া বাচ্চারাও এইডস আক্রান্ত হয়।

এদিকে আরো যে ৪০ হাজার এইডস আক্রান্ত রোহিঙ্গা থাকার বিষয়টি আতঙ্কের কথা বলছেন সচেতন লোকজন। এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশকে ভোগাবে বলে মনে করছেন তারা। বাংলাদেশের সুফল ধরে রাখতে এখন সচেতনতা খুবই জরুরি বলে জানিয়েছেন তারা।

এই প্রসঙ্গে নোঙর’র নির্বাহী পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ বলেন, ‘এইডস রোগ নিয়ে সচেতন বা আতঙ্কিত নন রোহিঙ্গারা। কিন্তু বিষয়টি আমাদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই রোগীর সংখ্যা বাড়লে তা আমাদের উপরও প্রবল প্রভাব ফেলবে। তাই সরকার এবং রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এই নিয়ে ভাবতে হবে এবং তা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে।’

সীমান্ত বিহীন চিকিৎসকদল (এমএসএফ) এর মাঠ সমন্বয়কারী মোহাম্মদ মাহাদী বলেন, ‘বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে এইডস ঝুঁকি অনেক কমে গিয়েছিল। কিন্তু নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক হারে এইডস রোগী থাকার কারণে এই দেশে ঝুঁকি ফের অনেক বেড়েছে। শুধু এইডস আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। তাদের কাছ থেকে এই মরণঘাতি ভাইরাস ছড়াতে না পারে তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’র চিকিৎসক দল প্রধান সুশান্ত মওলা চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস রোগীদের আমরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত থাকবে না। সমাধান হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের কোনোভাবেই বাইরে ছড়িয়ে দেয়া যেতে দেয়া যাবে না। কোনোভাবেই তাদের সাথে আমাদের দেশের লোকজনকে মিশতে দেয়া যাবে না। এছাড়াও অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে।’