বিরোধী দলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকবে জাপা?

বাংলাদেশের নতুন সংসদে জেনারেল এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির বিরোধীদল হিসেবে দায়িত্ব পালনের এবারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না বলে দলটির নেতারা দাবি করেছেন।

তারা বলেছেন, সরকারের নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনা করেই তারা বিরোধীদলে বসছেন। বিদায়ী সংসদে দলটি একই সাথে সরকারে এবং বিরোধীদল থাকায় এনিয়ে অনেক সমালোচনা ছিল।

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, বিভিন্ন সময় দলটির সিদ্ধান্ত বার বার পরিবর্তন হওয়ায় বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

তবে এবার সরকারের স্বার্থেই জাতীয় পার্টির বিরোধীদলে থাকার সিদ্ধান্ত টেকসই হতে পারে বলে তারা মনে করেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল এরশাদ শনিবার তার দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে সংসদে বিরোধী দলের চীফ হুইপ হিসেবে মনোনীত করেছেন।

দলটির পক্ষ থেকে এ সম্পর্কিত চিঠি সংসদের স্পিকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গতকাল জেনারেল এরশাদ ঘোষণা করেছেন, তিনি নিজে বিরোধী দলীয় নেতা এবং জিএম কাদের বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই চিঠিও গেছে স্পিকারের কাছে।

বিদায়ী সংসদে জেনারেল এরশাদের স্ত্রী এবং জাতীয় পার্টির নেত্রী রওশন এরশাদ বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন।

একইসাথে জেনারেল এরশাদ নিজে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে এবং জাতীয় পার্টির তিনজন নেতা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রীসভায় আছেন।

এখন নতুন সরকারে যোগ না দিয়ে সংসদে নির্ভেজাল বিরোধী দলের দায়িত্ব পালনের কথা বলছে দলটি।

মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, তারা বিরোধী দলে থাকবেন, সেটা সরকারও চাইছে।

“গতবার আমাদের তিনজন মন্ত্রী থাকার কারণে অনেকে অনেক কথা বলেছেন যে, একই সংসদে মন্ত্রিত্বে এবং বিরোধীদলে থাকা, এটা খারাপ দেখায়। এটা সাংবিধানিকভাবে সাংঘর্ষিক। সে কারণে মাননীয় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ চিন্তা করেছেন যে, আমাদের মন্ত্রীসভায় যাওয়ার দরকার নেই। আমরা বিরোধীদল মানে নির্ভেজাল বিরোধীদল যাকে বলে, সেই ভূমিকাটাই পালন করতে চাই দেশের মানুষের জন্য।”

“সরকারও চাচ্ছে যে, একটা নির্ভেজাল মানে সরকারে না থেকে একটা বিরোধীদল থাকুক।”

এবারের নির্বাচনসহ বিভিন্ন সময় জাতীয় পার্টি তাদের সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারেনি।

এমনকি দলটির শীর্ষ নেতা নিজে একটা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার অল্প সময়ের মধ্যে তিনি সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন, এমন অনেক নজির আছে। অনেক সময়ই দলটির বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

এছাড়া জেনারেল এরশাদ বা জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিজেদের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কিনা, সেই প্রশ্নও অনেকে তোলেন।

সিনিয়র সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন,যেহেতু বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাত্র সাতটি আসন পেয়ে ফলাফলই প্রত্যাখ্যান করেছে, ফলে সরকার এবার সংসদকে বিরোধীদলবিহীন দেখাতে চায় না। আর সেকারণে জাতীয় পার্টির বিরোধীদল থাকার সিদ্ধান্ত টেকসই বা স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, “সরকার বা সরকারি দলের জন্য একটা শক্তিশালী বিরোধীদল প্রয়োজন। এখন এই বিরোধীদল শক্তিশালী হওয়ার কোন কারণ নাই। কিন্তু এরশাদ যেহেতু প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং অনেকবারের এমপি, উনার ইমেজটা নিয়ে ২২জনকে দিয়ে একটা বিরোধীদল করলে মোটামুটি মুখ রক্ষার একটা সংসদ হবে যাতে বিরোধী দলও থাকবে। তা না হলে তো একদলীয় একটা সংসদ হবে। সেকারণে আমার ধারণা যে, জাতীয় পার্টির এই সিদ্ধান্তটা তাদের একার নাও হতে পারে। এটা মহাজোটের যৌথ সিদ্ধান্তও হতে পারে। এজন্য তাদের এই সিদ্ধান্ত টিকে যেতে পারে।”

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা অবশ্য বলেছেন, তারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে নির্বাচন করে ২২টি আসন পেয়েছেন।

কিন্তু আওয়ামী লীগ বা সরকারের নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতেই জাতীয় পার্টি এবার প্রধান বিরোধী দলের দায়িত্ব পালনের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মি: রাঙ্গা উল্লেখ করেছেন।

“সরকারে যারা নীতিনির্ধারণ করেন, তারাও বলেছেন যে, আপনারা বিরোধীদলে থাকলে আপনাদের জন্য ভাল হয়। আমাদের জন্যও ভাল হয়। কারণ মন্ত্রীসভায় বিরোধী দল থেকে লোক নিলে তাদেরও অনেক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।”

অন্যদিকে এবারও জাতীয় পার্টির সিনিয়র অনেক নেতার মাঝে মন্ত্রী হওয়ার সুপ্ত বাসনা আছে বলে তাদেরই অনেকে মনে করেন।

এরপরও সরকারে যোগ না দেওয়ার ব্যাপারে জাতীয় পার্টির সিদ্ধান্ত এবার পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে দলটির নীতিনির্ধারকরা দাবি করছেন।