বেনজীরের সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ আদালতের

সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (অবরুদ্ধ)করার আদেশ এসেছে ঢাকার একটি আদালত থেকে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এআদেশ দেন বলেদুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জানান।

সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আদালত বেনজীর আহমেদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ এবং গোপালগঞ্জের জমির ৮৩টি দলিল ক্রোকেরনির্দেশ দিয়েছে। অর্থাৎ এইসময়ে টাকা পয়সা ও জমি হস্তান্তর করা যাবে না।”

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদক বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ চেয়ে আবেদন করেছিল।

গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ ও ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠ। সেখানে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি ইকো রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন বেনজীর পরিবার। এছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে।

তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়ার কথাও বলা হয় প্রতিবেদনে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল।

বনের জমি দখল করে গাজীপুরে রিসোর্ট বানানোর অভিযোগও আনা হয়েছে দৈনিকটির আরেক প্রতিবেদনে। ওই রিসোর্টের এক-চতুর্থাংশের মালিকানা বেনজীর পরিবারের বলে পত্রিকাটি দাবি করেছে।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এপ্রিলের শেষে বেনজীর এবং তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদকে আবেদন করেন।

এরপর ২৩ এপ্রিল দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানান, বেনজীর আহমেদের ‘অবৈধ সম্পদ’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন তারা।

সেজন্য তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী এবং জয়নাল আবেদীন।

একই দিন হাই কোর্ট এক আদেশে দুই মাসের মধ্যে বেনজীরের বিষয়ে উঠা অভিযোগের তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়ে নির্দেশ দেয় হাই কোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদাত হোসেনের বেঞ্চ।

নির্দেশনার পর সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সম্পদের খোঁজে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ৮টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক।

এর আগে গত ২ এপ্রিল নিজের ফেইসবুক পাতায় বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান বেনজীর।

যারা লেখালেখি করছেন, তাদেরকে ধৈর্য ধরার ‘অনুরোধ’ জানিয়েছে সেদিন তিনি লিখেছেন, “দু একজন অনেক ক্ষিপ্ত, খুব ই উত্তেজিত হয়ে এক্ষুনি সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রবন্ধ লিখে ফেলছেন। দয়া করে সামান্য ধৈর্য ধরুন।”

পরে ২০ এপ্রিল নিজের ফেইসবুক পাতায় ২৫ মিনিটের একটি দীর্ঘ ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন সাবেক আইজিপি।

তার ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার বেশিরভাগই ‘মিথ্যা’ উল্লেখ করেন।

তিনি যেসব সম্পত্তি অর্জনের তথ্যকে ‘মিথ্যা’ বলছেন, কেউ যদি সেই তথ্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তবে সেই সম্পত্তি সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে হাসিমুখে লিখে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন বেনজীর।

১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়া বেনজীর সন্ত্রাস দমন বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্য হিসেবে বসনিয়া ও কসোভোতে কাজ করে এসেছেন তিনি।

২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি র‍্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার আগে বেনজীর আহমেদ ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন।

প্রায় সাড়ে চার বছর এলিট ফোর্স র‍্যাবের নেতৃত্ব দেওয়ার পর ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল পুলিশের মহাপরিদর্শকের দায়িত্বে আসনে বেনজীর আহমেদ।

‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর। ওই তালিকায় র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হিসেবে বেনজীর আহমেদের নামও আসে।

২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী তিনি অবসরে চলে যান।