দেশ ভাড়া দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই না: শেখ হাসিনা

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের একটি অংশ নিয়ে পূর্ব তিমুরের মতো খ্রিষ্টান দেশ বানানোর চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে ঘাঁটি বানানোর প্রস্তাবও দিয়েছে ‘সাদা চামড়ার’ দেশ।

তবে কোন দেশ সেই প্রস্তাব দিয়েছে তা স্পষ্ট করেননি সরকারপ্রধান।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকের শুরুতে বক্তব্য রাখছিলেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে যাতে কোনোভাবেই নির্বাচন না হয়, বিএনপি সেই ষড়যন্ত্র করেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তবে দেবে, আমার ক্ষমতায় আসতেও অসুবিধা হবে না, যদি আমি বাংলাদেশে কারও এয়ার বেজ করতে দিই, ঘাঁটি করতে দিই- তাহলে আমার কোনো অসুবিধা নাই। কোনো এক সাদা চামড়ারই প্রস্তাব।

“আমি একই জবাব দিয়েছি, আমি স্পষ্ট বলেছি- ‘আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি, দেশের অংশ ভাড়া দিয়ে বা কারও হাতে তুলে দিয়ে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না, ক্ষমতার দরকার নেই। যদি জনগণ চায় ক্ষমতায় আসব, না হলে আসব না।’ এই কথাগুলো বললাম, কারণ সকলের জানা উচিত।”

বহির্বিশ্বের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার যুদ্ধ ঘরে-বাইরে, সব জায়গায়। ওই অবস্থায় আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে ছেড়ে দিলাম। চক্রান্ত এখনো আছে। পূর্ব তিমুরের মত বাংলাদেশের একটি অংশ নিয়ে…তারপরে চট্টগ্রাম, মিয়ানমার এখানে একটা খ্রিষ্টান দেশ বানাবে, বঙ্গোপসাগরে একটা ঘাঁটি করবে।

“তার কারণ বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। এ জায়গাটার ওপর অনেকেরই নজর। সেটা আমি হতে দিচ্ছি না; এটাও আমার একটা অপরাধ।”

সরকারপ্রধান বলেন, “এখানে এয়ার বেজ করে কার ওপর হামলা করবে? যদি একটা দেশকে দেখানো হয়, সেটা তো না। আমি জানি আরও কোথায় যাবে। যে কারণে আমাদের সব সময় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, আরও হবে। কিন্তু এসব পাত্তা দিই না, সোজা কথা। দেশের মানুষ আমাদের শক্তি, মানুষ যদি ঠিক থাকে- আমরা আছি।”

বাংলাদেশের উন্নতি কারও পছন্দ হচ্ছে না মন্তব্য করে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করা শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যে খাদ্য উৎপাদন করি, খোদ এক বড় দেশ বলে ফেলল, ‘এতো খাদ্য উৎপাদনের দরকার কী? আমাদের তো যথেষ্ট আছে, আমরা তো দিতে পারি’।

“আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, ওই আশায় আমি বসে থাকব!’ আমরা বলেছি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলে গিয়েছে নিজের মাটি মানুষ দিয়ে দেশ গড়ব। আমরা সেটাই করব। নিজেদের মানুষের খাবার এখানেই যতটুকু পারি- উৎপাদন করে খাদ্য নিরাপত্তা দেব। আমরা দিয়েছিও সেটা। এই ধরনের কথা আছে।”

‘যার যা খুশি বলে যাচ্ছে’

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “৪৪ টেলিভিশনের মধ্যে প্রায় ৩৪টি চালু আছে। সবাই কথা বলে, টকশোতেও কথা বলে, সারা দিন সমালোচনা করে, এতগুলো সংবাদপত্র, এত কথা বলার পরে, সব কথার শেষ কথা, ‘কথা বলতে দেওয়া হয় না’।

“টেলিভিশনে সবাই যখন এইভাবে কথা বলে আমরাতো গলা টিপে ধরি না। কেউ বাধা দেয় না। যার যা খুশি বলে যাচ্ছে। তা সত্য-মিথ্যা, যা হোক।”

শেখ হাসিনা বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশে যে যার মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে সমালোচনা, মিথ্যা, অপবাদ ছড়াচ্ছে। আর ভবিষ্যতে সমস্যা যেটা হবে- আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা; সেটা করা হচ্ছে, নজরদারিতে আনার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।

“শুধু আমরা নয়, উন্নত দেশগুলোও এ ব্যাপারে চিন্তিত। এআই মোকাবিলা করার প্রক্রিয়া খুঁজে দেখা হচ্ছে।”

‘খাদ্য মজুত থাকলে রিজার্ভ কোনো চিন্তার বিষয় নয়’

মুদ্রাস্ফীতির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা শুধু বাংলাদেশ না, আমেরিকার অর্থনৈতিক রিপোর্ট দেখলাম, সেখানেও মুদ্রাস্ফীতি বিরাট সমস্যা। অনেক দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, আমাদেরও।

“কারণ কোভিডের সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, আমদানি-রপ্তানি সব বন্ধ ছিল; তখন বাহির থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারেনি, তাই টাকাটা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে, তাই আমাদের রিজার্ভটা বেড়ে গিয়েছিল। তারপর যখন সবকিছু চালু হল, তখন খরচ। খরচ হবেই।”

সরকারপ্রধান বলেন, “আপদকালীন সময়ের খাদ্য মজুত থাকলে রিজার্ভ কোনো চিন্তার বিষয় না। রিজার্ভ বলতে বলতে মানুষকে এত সচেতন করে দিয়েছি, সবাই রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে, জিডিপি নিয়ে কথা বলে, এটা ভালো লক্ষণ। এখন মুদ্রাস্ফীতি কমাতে পারলে মানুষের স্বস্তি হতো। উৎপাদন যথেষ্ট হচ্ছে। কোনো অভাব নেই।”

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এটা নিয়ে অনেক খেলা হয়, আজকে দেখলাম যেখানে আলু রাখে, সেখানে ডিম রাখছে। আলুর কোল্ড স্টোরেজে ডিম রাখার কথা না। এ রকম ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে।”

‘মুক্তিযুদ্ধের শক্তি ছাড়া দেশের কল্যাণ হবে না’

দেশের অর্জন ধরে রেখে সামনে আগানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশটাকে গড়ে তুলতে হবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা না নিলে দেশটাকে আগাতে পারব না। এখানে যে বাধাগুলো আসে, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আমাদের বিরোধী ছিল, এখনো তারা একটুও বদলায়নি। এটা হচ্ছে বাস্তবতা, এটা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে।”

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “১০ লাখের উপরে মিয়ানমারের বস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। সেখানে খুবই খারাপ অবস্থা। এরা কবে যে ফেরত যাবে, তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। আর প্রতিদিনই তাদের বাচ্চা হচ্ছে, সংখ্যা তাদের বেড়েই যাচ্ছে।”

১৪ দলের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদের মতামত শুনব, আলোচনা করব। ভবিষ্যতে আমরা কীভাবে এগোতে পারি- এটাই আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ছাড়া দেশের মানুষের কোনো কল্যাণ হবে না। গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, দুর্নীতিবাজ যদি বিদেশের মাটিতে রোজই আন্দোলন, সরকার উৎখাতের নানা রকম হুমকি-ধামকি দেয়, যতক্ষণ জনগণ সঙ্গে আছে ততক্ষণ ওইটা কেয়ার করি না।

“তারপরও দেশে জ্বালাও-পোড়াও অগ্নিসংযোগ যেন না করতে পারে, যারা করবে তাদের ছাড় নেই। যতই মুরুব্বি ধরুক, যাই ধরুক- এদের আমরা ছাড়ব না। মানুষের ক্ষতি যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।”