প্রেমের টানে বাংলাদেশে: ফিরতেই হলো ভারতীয় সেই তরুণীকে

প্রেমের টানে রাতের অন্ধকারে কাটাতার ভেদ করে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় তরুণী খুসনামাকে (১৭) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)।

শুক্রবার সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের তেলিপাড়া সীমান্তে ৪৪৩ নম্বর মেইন পিলার সীমান্তরেখায় বিজিবি বিএসএফ’র পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে হস্তান্তর করা হয়।

সাত সমুদ্র তের নদীর মতো প্রেমের টানে সীমান্তের কাটাতারকে অতিক্রম করতে পারলেও আইনি জটিলতায় প্রেমিকের সাথে ঘরবাধা হলো না প্রেমিকা খুসনামার। অবশেষে প্রেমিককে রেখে বুকফাটা কষ্ট নিয়েই ফেরত যেতে হলো তাকে।

তবে পাসপোর্ট করেই আবার এদেশে এসে প্রেমিকের সাথেই ঘর-সংসার করতে চান খুসনামা।

ভারতীয় তরুণী পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপুকুর থানার হারিয়ানী গ্রামের ইসরাইল হোসেনের কন্যা।

হস্তান্তরের সময় পতাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজিবি’র পক্ষে বিজিবির ১৮ ব্যাটালিয়ানের তেঁতুলিয়া কোম্পানী কমান্ডার আব্দুল মোতালেব ও ভারতের হাফটিয়াগঞ্জ বিএসএফ ক্যাম্পের অ্যাসিস্টেন্ট কমান্ডেন্ট কোম্পানী কমান্ডার কমল সিং।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ফুলবাড়ি বিএসএফ ইন্সপেক্টর উপেন্দ্র সিং, সোনামাটির এসআই দেওয়ান সিং, সিটি কে কর্মকার, গোয়ালপুকুর থানার কনস্টেবল দিলীপ কুমার সরকার, কনস্টেবল অতসী নাথ ও বিজিবির নায়েক আবুল হোসেনসহ সঙ্গীয় ফোর্স এবং মডেল থানার এসআই তপন কুমার, নুরুল হক, শাকিল ও এএসআই শাপলা ইয়াসমিন।

জানা যায়, দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ধরেই বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গির উপজেলার মোল্যেহাট ইউনিয়নের রতনদিঘী গ্রামের ইসরাইলের ছেলে আব্দুল লতিফ রকিব (২১)কে ভালোবেসে আসছিলেন। জীবিকার তাগিদে বাংলাদেশি তরুণ রকিব ভারতের কেরালা প্রদেশের হাজী আলী হোটেলে ভাইয়ের সাথে কাজ করতেন। ভাইয়ের সাথে বাড়িতে থাকার সুবাধে ধীরে ধীরে গড়ে উঠে সম্পর্ক। এক পর্যায়ে বিয়েও করেন। সম্প্রতি প্রেমিক রকিব দেশে ফেরার কারণে তার জন্য উতলা হয়ে উঠছিলেন তিনি।

তার কারণে প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ করে রাতের অন্ধকারে তেঁতুলিয়ার সীমান্তের কাটাতার ভেদ করে ৪৪৪ মেইন সাব পিলার-২ অতিক্রম করে মহানন্দা নদী পারি দিয়ে একাকী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে সরদারপাড়া এলাকার এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেই তাকে থানা পুলিশ আটক করে থানা হেফাজতে রাখেন। প্রেমিকা আসার খবরে ঠাকুরগঁাও থেকে ছুটে আসেন প্রেমিক রাকিব। কিন্তু ততোক্ষনে প্রেমিকা থানা হাজতের খবর শুনে ছুটে যান থানায়। রকিব খুসনামাকে নিজের প্রেমিকা বলে দাবি করে ছেড়ে দিতে বলেন। তিন মাস আগে তাদের ভারতে বিয়ে হওয়ার কথাও জানায়। কিন্তু বিয়ের কোন বৈধ কাগজ দেখাতে না পেরে দু’দেশের সীমান্ত আইনে প্রাচীর হয়ে পড়ে বন্ধন। দীর্ঘপথ পারি দিয়ে দেশে আসলেও প্রেমিকাকে না পাওয়ার কষ্টে হাউমাউ করে কঁাদতে থাকেন দুজনই।

বিষয়টি মডেল থানার ওসি আবু ছায়েম মিয়া বিজিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানালে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৪৪৩ নং মেইন পিলারে পতাকা বৈঠক বসে। পতাকা বৈঠকে ভারতীয় তরুণী খুসনামাকে হাজির করে তার কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় পারিবারিক সকল তথ্য। সে তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সকাল ১০টায় ওই মেইন পিলারে পতাকা বৈঠক বসে। মেয়ের খবরে ছুটে আসেন খুসনামার বাবা ইসরাইল ও মা জেলাফুন। মডেল থানা পুলিশ বিজিবির মাধ্যমে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেন খুসনামাকে।

এ বিষয়ে বিজিবির কোম্পানী কমান্ডার বক্তব্য দিতে না চাইলেও পুলিশ জানায়, ভারতীয় ওই তরুণী বয়সে নাবালিকা হওয়ায় মানবিক কারণে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে তাকে মা-বাবার হাতে তুলে দেয়া হয়। এ ঘটনায় মানবিকতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো এমনই মতামত ব্যক্ত করেছেন উৎসুক জনতার অনেকেই।