ভারত সরকারকে যে বার্তা দিল তালেবান

বর্ষা আসার ঠিক আগেই ভারত সরকার জানিয়ে দিয়েছিল, অতীতের নীতি বদলে তালেবানের সঙ্গেও আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। সেই শান্তি প্রক্রিয়ার হাল যে এই হবে, তা আন্দাজ ছিল না সাউথ ব্লকের। কাবুল দখলের মুখে দাঁড়িয়ে এখন তালিবান প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরে ভারতকে জানিয়ে দিল, আফগানিস্তানে সেনা পাঠালে বিপদ আছে!

আফগানিস্তানের অধিকাংশ জমি দখল করে নেওয়ার পর কাবুল থেকে অনতিদূরে দাঁড়িয়ে তালেবান। এই পরিস্থিতিতে সংবাদসংস্থাকে তালেবানের মুখপাত্র সুহেল শাহিন বলেন, ‘‘যদি ভারতীয় সেনা আফগান সেনাকে সাহায্য করার জন্য আসে, তা হলে সেটা তাদের জন্য ভাল হবে না। আফগানিস্তানে অন্য দেশের সেনাদের সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবাই দেখেছে। তারা এলে আগে থেকে সব জেনেই আসবে।’’ তবে সেই সঙ্গে আফগানিস্তানের মানুষের জন্য ভারতের অবদানের প্রশংসাও করেছেন শাহিন। তিনি বলেন, ‘‘আফগানিস্তানের মানুষের জন্য সেতু নির্মাণ, পরিকাঠামোর উন্নতিতে অনেক সাহায্য করেছে ভারত। এতে এখানকার অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। এই ভূমিকার আমরা প্রশংসা করছি।’’

আফগানিস্তানের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে থেকে নিজেদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে ভারত, আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশ। শাহিন অবশ্য বলেছেন, ‘‘দূতাবাস ও কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ব্যক্তিদের কোনও ক্ষতি আমরা করব না। তাদের নিশানা করা হবে না। আমরা সেটা জানিয়েও দিয়েছি। ভারত তাদের নাগরিকদের জন্য যে চিন্তা করছে, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমরা তাদের কিছু করব না।’’
এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তান বিষয়ক কাতার-জোটের পক্ষ থেকে (ভারত, জার্মানি, তাজিকিস্তান-সহ কিছু দেশ যার সদস্য) জানানো হয়েছে, সামরিক শক্তি খাটিয়ে আফগানিস্তানে সরকার গঠন করা হলে তাকে মান্যতা দেওয়া হবে না। রণকৌশলগত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই দেশগুলির মান্যতা দেওয়া বা না দেওয়ার উপর ঘটনার গতি আদৌ নির্ভর করছে না। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কোনও সন্দেহ নেই যে, বিশ বছর পর তালিবানের এই উত্থানের পিছনে সম্পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে দু’টি বড় দেশ চিন এবং রাশিয়ার। অন্য একটি দেশ পাকিস্তানও যদি আগাগোড়া তালিবানের পাশে না থাকত, তা হলে তারা এই অবিশ্বাস্য ঝড়ের গতিতে সামরিক ভাবে অগ্রসর হতে পারত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের জন্য তালিবানের হুমকি যথেষ্ট উদ্বেগের।

এত দ্রুত যে পরিস্থিতির অবনতি হবে, তা ভারতের যাবতীয় অঙ্কের বাইরে ছিল বলেই আজ আঞ্চলিক কূটনীতিতে হতচকিত অবস্থা নয়াদিল্লির। অথচ শুধু পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর নন, কাবুল এবং পাকিস্তান নীতিকে নতুন করে সাজাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে। তার তালিবান-দৌত্যও খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। অন্যদিকে, আফগানিস্তান সরকারও আজ ভঙ্গুর। বরং নিঃশব্দে পাকিস্তান এবং ইরান, রাশিয়ার মতো দেশগুলির সঙ্গে তালিবান নেতৃত্বের যোগাযোগ এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা