ভোগান্তি-লাঞ্ছনায় ক্ষমা চাইলেন শ্রমিক নেতারা

পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির চলাকালে জনভোগান্তি এবং বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন চালানোয় চালক ও যাত্রীদের লাঞ্ছনার ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন শ্রমিক নেতারা। এই ঘটনায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়ে গ্রেপ্তারেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।

রবি ও সোম-দুই দিনের কর্মবিরতিতে দুইদিনই ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন সড়কে গাড়ি নিয়ে বের হওয়া চালকদের হেনস্থা করেছে আন্দোলনকারীরা। গাড়ি এবং মুখ ও ছাত্রীর গায়ে পোড়া ইঞ্জিল অয়েল (মবিল নামে পরিচিত) মাখিয়ে দেয়া, কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনা ঘটেছে।

এই ঘটনাটিকে ‘আলকাতরা সন্ত্রাস’, ‘পোড়া মবিল সন্ত্রাস’ প্রভৃতি বিভিন্ন নামে আখ্যা দেয়া হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং নারায়ণগঞ্জে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে অভিযুক্ত শ্রমিকদের শাস্তির দাবিও জানাচ্ছে।

এরচেয়ে বড় ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজারে। সেখানে দেড় ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার ঘটনায় সাত দিন বয়সী একটি শিশুর মৃত্যু ঘটেছে সময় মতো চিকিৎসা না পাওয়ায়।

এসব ক্ষোভ, সমালোচনার বিষয়টি অজানা নয় কর্মবিরতি আহ্বান করা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদেরও। সোমবার সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক বাদল চৌধুরীর স্বাক্ষরিত সভাপতি ওয়াজি উদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী এক যুক্ত বিবৃতিতে শ্রমিকদের কাণ্ডে ক্ষমা চেয়েছেন।

বিবৃতিতে এসব লাঞ্ছনার ঘটনাটিকে ব্যক্তি বিশেষের অন্তর্ঘাতমুলক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পেছনে থেকে আঘাত করার ষড়যন্ত্র যারা করেছে’ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

যোগাযোগ করা হলে ওসমান আলী বলেন, ‘আমরা পুলিশ কমিশনারকে বলে দিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিক, এতে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না।’

পুলিশ যা করার করবে, কিন্তু আপনারা কী করেছেন- এমন প্রশ্নে এই শ্রমিক নেতা বলেন, ‘যারা যাত্রী ও সাধারণ চালকদের মুখে পোড়া মবিল মাখিয়েছে তাদের দুই জনকে আমাদের সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।’

বিবৃতিতে যে ষড়যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে, সেটি কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে- এমন প্রশ্নে ওসমান আলী বলেন, ‘এর আগে যারা পণ্য পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছিল তারাই আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এছাড়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ আমাদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে। তারাই এমন ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের কর্মবিরতিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চায়।’

বিবৃতিতে বলা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আখ্যা দিয়ে শ্রমিকদের অভিনন্দনও জানানো হয়। ভবিষ্যতে আন্দোলনেও শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ শাক্তি হিসেবে নিজেদের পরিচয় ধরে রাখার আহ্বান জানান হয়।

বিবৃতিতে আন্দোলন চলাকালে জনগণকে যে কষ্ট শিকার করতে হয়েছে তার জন্যও ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। তবে আগামী ২১ দিনের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে সারা দেশে ৯৬ ঘন্টা লাগাতার কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিতে বাধ্য হওয়ার কথা জানায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।

সড়ক দুর্ঘটনায় করা মামলায় জামিন অযোগ্য ধারা, চালকের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বাতিলসহ আট দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে পরিবহন শ্রমিকরা।