ভোটকেন্দ্র দখলের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে বিএনপি, অভিযোগ আ.লীগের

নিশ্চিত পরাজয় জেনে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচাল করতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুলের পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় ভোটকেন্দ্র দখল করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। নোয়াখালী দুই আসন ইফতেদায়ী মাদ্রাসা কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে মারধর করে ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়েছে এবং হামলায় ছয়জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। শনিবার মধ্যরাতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে আবদুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে কেন্দ্র দখলের সময় বিএনপির ১৪ নেতা-কর্মী আটক হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভোট কেনার সময় নয়জন বিএনপি নেতা-কর্মী আটক হয়েছে। কেন্দ্র দখলের সময় যশোরে দুজন বিএনপি নেতা আটক হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এক অডিও বার্তায় কর্নেল অলি আহমেদ লাঠিসোঁটা নিয়ে ভোট কেন্দ্র দখলের নির্দেশ দিয়েছেন। জামায়াতের সন্ত্রাসীরা বরগুনার আমতলীর হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভোটকেন্দ্রে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছে। সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা করে পাঁচজনকে আহত করেছে। একইভাবে সারা দেশে তারা সহিংসতা ছড়াচ্ছে।

আবদুর রহমান জানান, রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি আমতলী ইউনিয়নের যুবদলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ওপর হামলা চালিয়ে পাঁচজনকে আহত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ভোট কেনার জন্য আইএসআই-এর পাঠানো হাজার কোটি টাকা দিয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে আজ রাতে সুনামগঞ্জের ধরমপাশায় আওয়ামী লীগের সাইফুল ইসলাম ও চট্টগ্রামের পটিয়ায় যুবলীগ নেতাকে নৃশংসভাবে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। এর মাধ্যমে তারা নির্বাচনের নৈরাজ্য সৃষ্টির নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে।

আবদুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগের রাতেই জামায়াত-বিএনপির ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের পরিবেশকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করতে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী বাহিনী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপরে হামলা চালাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, লন্ডনে বসে দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত পলাতক আসামি তারেক রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজগুবি, মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়াচ্ছে। সারা দেশে ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভোটকেন্দ্র দখলের অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

বিএনপি নির্বাচন নিয়ে মিথ্যাচার করছে দাবি করে আবদুর রহমান বলেন, নয়াপল্টন আর গুলশানে বসে বিএনপি নেতারা একের পর এক নির্লজ্জ মিথ্যাচার ও কল্পকাহিনীর মাধ্যমে জাতিকে বোকা বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা সারা দেশের জনগণকে অত্যন্ত সতর্ক ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বলতে চাই, দেশের এক বিশেষ মুহূর্তে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে।

ঐক্যফ্রন্টকে হুঁশিয়ার করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমরা বিএনপি-জামায়াত ও ঐক্যফ্রন্ট অশুভ জোট নেতাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে চাই, জনগণের সাংবিধানিক ভোটাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশের জনগণকে নিরাপদে, নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিন। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, সহিংসতা ও গুজব বন্ধ করুন অথবা জনগণ আপনাদের ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নির্বাচন বানচালের কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করবে না।

সন্ত্রাস সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত বিজয় ঠেকানো সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন আবদুর রহমান। তিনি দেশবাসীকে এ ধরনের সন্ত্রাসী এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হোসেন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।