ভোলার মেঘনা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না ইলিশসহ অন্য মাছ!!

করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে সারা বিশ্বে মৃত্যুর মিছিল চলছে। দেশে সংক্রমণ রোধে চলছে কঠোর লকডাউন। তেমনি নদীতেও যেন মাছের কঠোর লকডাউন চলছে।

লাখ টাকা খরচ করে জেলেরা নদীতে গেলেও জালে ধরা পড়ছে না ইলিশসহ অন্যান্য মাছ। মার্চ-এপ্রিল দু’মাস নদীতে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা শেষে গত শুক্রবার ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে মেঘনা নদীতে মাছ ধরার জন্য নেমেছেন জেলেরা। কিন্তু নদীতে জাল ফেলে তিন দিনেও মাছের দেখা না পেয়ে খালি ট্রলার নিয়ে তীরে ফিরেছেন অনেকেই।

এতে রমজানের কারণে বাড়তি চাহিদা থাকলেও বাজারে মাছের দেখা নেই। কোনো কোনো ট্রলারের ভাগ্যে যা জুটছে, সেই সামান্য মাছ বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে।

দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে এখন মাছ ধরতে নৌকা নিয়ে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে গিয়ে খালি হাতে তীরে ফিরে আসছেন জেলেরা। ফলে অনেকটা হতাশায় রয়েছেন জেলার দুই লক্ষাধিক জেলে।

জেলেরা জানান, ইলিশের অভয়াশ্রমে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মাছ শিকার বন্ধ ছিল। ১ মে থেকে ইলিশ শিকারে নেমেছেন তারা। কিন্তু এ দুই দিন নদীতে গিয়ে মাছ না পাওয়ায় জেলেদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

সোমবার দুপুরে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা, তুলাতলি,শিবপুর এলাকার মেঘনা পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, মৎস্য ঘাটে সুনসান নীরবতা। নেই জেলে, মাছ ব্যবসায়ী কিংবা বেপারীদের কোলাহল। মাছের বাটখারায় মাছশূণ্য। মাছের আড়তে নেই কোন জমজমাট।

সেখানকার জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, অভিযানের সময় কিছু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করায় এবং বৃষ্টি না হওয়ায় ইলিশসহ কোন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।

তুলাতলি ইউনিয়নের জেলে শাজাহান (৩৫) বলেন, অভিযানের কারনে আমরা ২ মাস নদীতে জাল ফেলতে পারিনি। কিন্তু ২ মাস অভিযানের মধ্যেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যেসব প্রভাবশালী কিছু জেলে অভিযানের মধ্যেও নদীতে জাল ফেলে মাছ শিকার করেছেন তারা সব জাটকা ইলিশ মাছ ও চাপলি মাছ(ছোট ইলিশ) ধরে নিয়ে গেছে।

শিবপুর ইউনিয়নের জেলে রহিম (২৯) বলেন, দুই মাসের অভিযান শেষ হলেও নদীতে মাছ না থাকায় জেলেদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

নদীতে মাছ না পড়ায় প্রায় একই হতাশার কথা জানালেন ওই এলাকার জেলে হোসেন (৩৫), আসিব (৪০), মিজান (৩২), জামাল মাঝি (৩৪) ও হোসাইন মাঝি (৩৭)। তারা বলেন, একদিকে অভিযানের মধ্যে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় যেসব জেলে সরকরি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ শিকার করেছেন তারা কিছু মাছ মেরে ফেলেছেন। আর কিছু মাছ সাগরের মিঠা পানিতে চলে গেছে। ফলে মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে এখন আর কোন মাছ নেই। জেলেদের জালে এখন আর তেমন মাছ ধরা পড়ছে না।

নদীর মোহনা থেকে নৌকাসহ জাল ফেলে মাছ শিকার করে স্বামী-সন্তান নিয়ে ভোলা খালে ফিরেছেন নারী জেলে নাজমা বেগম। তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, সকালে নৌকা ও জাল নিয়ে মাছ শিকারে গিয়েছিলাম নদীর মোহনায়। প্রায় সারাদিন জাল ফেলে মাত্র ৩ কেজি পোয়া মাছ পেয়েছি।

ভোলা খালের মাছ ব্যবসায়ী সালে আহমেদ বলেন, বিগত ২৫ বছরের মধ্যে এ বছরই জেলেদের জালে সবচেয়ে কম মাছ ধরা পড়ছে। তিনি বলেন, গত বছর যেখানে ৩ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছিলাম। সেখানে এ বছর মাত্র ২৯ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি। গত বছর ২২ দিনের অভিযানের পর যেখানে একদিনে ৪০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি। কিন্তু এবার অভিযানের পর নদীতে জেলেদের জালে মাছ পড়ছে না।

মাছের বেপারী আব্দুল রহিম বলেন, এ বছর এখনো বর্ষা না হওয়ায় নদীতে জেলেদের জালে রুপালী ইলিশ সহ কোন মাছ ধরা পড়ছে না। বর্ষার পর হয়তো মাছের দেখা মিলতে পারে।

সূত্র জানায়, উৎপাদন ও জাটকা সংরক্ষণে বছরের প্রায় তিনমাস মেঘনায় ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পর গত দুই মৌসুমে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী এলাকায় আশানুরুপ ইলিশ পাওয়া যায়নি। জেলেদের দাবি নদীতে ইলিশ খুব কম আসে।

তবে মৎস্য কর্মকর্তাদের দাবি, প্রায় ৯০ শতাংশ জেলে মাছ শিকারে বঙ্গপোসাগর ও সাগরের কাছাকাছি অবস্থান করে। এ জন্য ইলিশ নদীতে আসার সুযোগ কম পায়। এ ছাড়া ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর বিভিন্ন স্থানে গভীরতা কম। ইলিশ গভীর জলের মাছ হওয়ায় কম গভীর এলাকায় পাওয়া যায় না।

এ ব্যাপারে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলাম বলেন, এ বছর এখনো বর্ষা শুরু হয়নি। এবং তীব্র খরা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া নদীর পানিতে লবনাক্ততাও বেড়ে গেছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে এসব কারণেই হয়তো জেলেদের জালে ছোট ছোট অন্যান্য মাছ ধরা পড়লেও কাঙ্খিত রুপালী ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে না।
তবে, বর্ষা শুরু হলে এর একটা পরিবর্তন আসবে বলেও মনে করেন এ মৎস্য কর্মকর্তা।