মাটি ও বালু উত্তোলন: রংপুরের পীরগঞ্জে বিস্তীর্ণ এলাকায় ভূমি ধ্বসের শঙ্কা

রংপুরের পীরগঞ্জে কৃষি জমি থেকে যত্রতত্রভাবে মাটি ও বালু উত্তোলনের ফলে বিস্তীর্ণ এলাকায় ভূমি ধ্বসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কতিপয় প্রভাবশালী মাটি ও ভূমিখেকো প্রশাসনিক নিশেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবাধে মাটি ও বালু উত্তোলন করেই চলছে। ফলে নদী, আবাদি জমি, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভাট, খাল-বিলসহ পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

এমনভাবে চলতে থাকলে আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাত কিংবা ছোট-খাটো ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভূমি ধ্বসে গিয়ে প্রাণহানীসহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে ৩০/৩৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।

উপজেলায় প্রায় অর্ধ শতাধিক অবৈধ ইটভাটা এবং রংপুর- ঢাকা মহাসড়কে ফোর লেন রাস্তা নির্মাণ কাজের জন্য টুকুরিয়া, বড় আলমপুর, চতরা, কাবিলপুর ও চৈত্রকোল ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রামের অর্ধশতাধিক স্থানে বালু উত্তোলনকারী এস্কেভেটর, ড্রেজার মেশিন ও ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে গ্রাম সংলগ্ন সমতল, কৃষি জমির মাটি এবং বালু কেটে উজাড় করা হচ্ছে। ভাটা মালিকরা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ভাটা সংলগ্ন আবাদি জমির টপসয়েল কেটে নেয়ায় মাটির উর্বরতা শক্তি বিনষ্ট করছে। কোথাও কোথাও মাটির ৩০-৪০ ফুট গভীরে গর্ত করে মেশিন বসিয়ে প্রায় ৭০ থেকে ৯০ ফুট গভীর হতে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

এতে সমতল ভূমি হতে মাটি ও বালু উত্তোলনের যায়গাগুলো খাড়াকাতি হওয়ায় আশপাশের গ্রাম ও কৃষি জমি চরম হুমকীর মধ্যে পড়েছে। ইতিমধ্যে নির্বিচারে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের ফলে অধিকাংশ এলাকায় আবাদি জমি ধ্বসে গিয়ে ভ‚মির শ্রেণী পরিবর্তন ঘটেছে।

এছাড়া পীরগঞ্জ বিভক্তকারী করতোয়া নদী থেকে অবাধে প্রত্যহ শতশত ট্রাক বালু উত্তোলনের ফলে নদী তার গতিপথ হারিয়ে নদীপাড়ের নতুন নতুন এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জয়ন্তীপুর ঘাট এলাকার ভূক্তভোগী আব্দুর রহিম, সোবহান, কাঁচদহ ঘাট এলাকার মহসিন আলী, নুনদহ ঘাট এলাকার শফিয়াল হোসেন, রব্বানী, ঝোরারঘাট এলাকার মমিন ও আব্দুর রহমানের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তারা জানান, আমরা ভীষনভাবে চিন্তিত, যে হারে গ্রাম সংলগ্ন করতোয়া নদী হতে নির্বিচারে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে গ্রামগুলো ধ্বসে গিয়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমরা প্রতিবাদ করেও কোন কাজ হচ্ছে না।

এদিকে বড়দরগা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রাম সংলগ্ন মাত্র ৫০ থেকে দেড়’শ গজ দুরত্বের মধ্যেই ৪টি ইটভাটা।

এসব ভাটা এলাকার কৃষক জাকির হোসেন, পলাশ মিয়া ও তাহারত আলী তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানান, অপরিকল্পিত এসব ইট ভাটার কালো ধোঁয়া আর ধুলা-বালির কারণে আশপাশের জমিতে কোন প্রকার চাষাবাদ ভালো হয়না। তাছাড়া ভাটা মালিকরা জমি মালিকদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করে প্রতি বিঘা ১ লক্ষ টাকা দরে জমির উপরিভাগ (টপ সয়েল) কেটে নিয়ে ঐসব এলাকার জমিগুলোর উর্বরতা শক্তি শেষ করে দিচ্ছে।

এ বিষয়ে আশিস (আদর্শ শিক্ষা সহায়ক) ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আজহারুল হক রতন বলেন, পীরগঞ্জে যেভাবে মাটি আর বালু ভূগর্ভস্থ হতে অবাধে তোলা হচ্ছে এতে অনিবার্য কৃতিম দুর্যোগ নিজেরাই আমরা ডেকে আনছি। কোন এক সময় পীরগঞ্জের মানচিত্র অচেনা হয়ে যাবে।