মাদ্রাসার ছাত্ররা জঙ্গি নয়, জঙ্গি হতে পারে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ নয়। আমি বিশ্বাস করি, যারা কোরআনকে ধারণ করে তারা কখনও জঙ্গি হতে পারে না। যারা প্রকৃত মুসলমান তারা কখনও জঙ্গি হয় না। তারা শান্তির পক্ষে। প্রথমে বলা হতো মাদ্রাসার ছেলেরা জঙ্গি। কিন্তু আমিই প্রথম উচ্চগলায় বলেছিলাম, মাদ্রাসার সঙ্গে জঙ্গিবাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মাদ্রাসার ছাত্ররা জঙ্গি নয়। জঙ্গি হতে পারে না।
শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আয়োজিত আলিয়া মাদরাসা শিক্ষকদের মহাসমাবেশ উদ্বোধন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
ইবতেদায়ি থেকে কামিল পর্যন্ত দেশের আলিয়া মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিসহ চার দফা দাবিতে মহাসমাবেশে প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
আলিয়া মাদরাসার আলেমরা শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দেন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটা শ্রেণি ইসলাম ও মুসলমানকে কালিমালেপন করতে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করছে। তারা ইসলাম ও মানবতার শত্রু। আমি বলতে চাই, ইসলাম এবং মুসলমানরা কখনোই জঙ্গিবাদ বিশ্বাস করে না, তাদের কেউই এই জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, শান্তির পক্ষে।
তিনি বলেন, আলেমরা জঙ্গিবাদের বিরোধিতা করে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে কাজ করছেন। আমি আপনাদের বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী আপনাদের প্রতি সহায়ক। তিনি আপনাদের ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন। আপনাদের সব চাওয়া-পাওয়া বাস্তবায়নে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, ধর্মবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বিএইচ হারুন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর হোসেন।
মহাসমাবেশে আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এএমএম বাহাউদ্দীন সভাপতিত্ব করেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলে ইসলামি শিক্ষার সর্বোচ্চ উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন হয়েছে, যা বিগত সরকারের আমলে হয়নি। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাদরাসা অধিদফতর তৈরি করা হয়েছে। এ শিক্ষায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। ৩০ একর জমির ওপর ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। সাধারণ বিষয়ের মতো আইসিটি ও বিজ্ঞান বিষয় চালু করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মাদরাসা শিক্ষকদের অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ কারণে ঘোষণা দিয়েছেন যে, দেশে কোরআন-হাদিসের পরিপন্থী কোনো আইন প্রতিষ্ঠা হবে না। তিনি বলেন, কওমি মাদরাসাকে সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। মাদরাসা জঙ্গিবাদের কারখানা নয়। দেশকে ধ্বংস করতে অনেকে ইসলামের নামে অপপ্রচার চালিয়ে আমাদের সন্তানকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলছে। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের সন্তানদের জঙ্গিবাদের সহিংস কর্মকাণ্ড থেকে রক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি এএমএম বাহাউদ্দীন বলেন, মাদরাসা জঙ্গিবাদের কারখানা নয়। দেশকে ধ্বংস করতে অনেকে ইসলামের নামে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত আছি। আমরা শান্তির পক্ষে।
আমরা বিশ্বাস করি, অতি দ্রুত জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দাবিগুলো বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ বিবেচনা করবেন। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, বর্তমান সরকারের মাধ্যমে আমাদের শত বছরের প্রাণের দাবি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর হয়েছে। মাদরাসা অধিদফতর তৈরি হয়েছে। এখন আমাদের ৪ দফা দাবিও মেনে নেবেন সরকার।
সংগঠনের পক্ষ থেকে মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ, শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির বয়সমীমা ৬৫ বছর, শিক্ষার্থী সংকট দূরীকরণে সংযুক্ত ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাকে প্রাইমারি স্কুলের মতো জাতীয়করণের আওতাভুক্ত, উপবৃত্তি ও টিফিনের ব্যবস্থা এবং নতুন ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, শিক্ষক সংকট দূরীকরণে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কর্তৃক জনবল কাঠামো অনুমোদন ও মাদরাসার সহকারী মৌলভীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণের দাবি জানানো হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন