মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণে জীবন দিয়েছেন ছয় সেনা

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন ছয় সেনা সদস্য। ২০১০ সালের জুনে ক্যাম্প করে থাকা সেনা সদস্যদের ওপর পাহাড় ধসে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়কটি উদ্বোধন করেন। দৃষ্টিনন্দন এই সড়কটি পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ বলে জানানো হয় এই অনুষ্ঠানে। এ সময় সেনা সদস্যদের প্রাণহানির কথা উল্লেখ করে তাদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

১৯৮৯ সালেই এই সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এর কাজ শুরু হয় বলে জানান সড়কমন্ত্রী। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কাজ থেমে যায়। এরপর ২০০৮ সালে আবার কাজ শুরু হয়।

এই সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে সেনাবাহিনীকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। নির্মিত সড়ক সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়া, লোনা পানিতে নির্মাণ সামগ্রীর ক্ষতি হওয়া, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের আঘাত ও ভূমিধসসহ নানা সমস্যা মোকাবেলা করে কাজ করেছে সেনাবাহিনী।

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়টি ঘটে ২০১০ সালের ১৪ জুন রাতে। কক্সবাজারের হিমছড়ির ১৭ ইসিবি ক্যাম্পে পাহাড় ধসে ছয় পাঁচ সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়। পরদিন বিকালে তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এঁরা হলেন ওই ব্যারাকের সার্জেন্ট মো. আবছার (সৈনিক নং-১৪৩৬), কর্পোরাল মো. হাবির (১৪৩৮৫২৭), মো. হুমায়ুন (১৪৪৩০৯৯), সৈনিক মো. ইসমাইল (১৪৪৭৩০৬), মো. মালেক (১৪৪৭৪৯৬)। পরে উদ্ধার হয় নিখোঁজ সৈনিক মো. আসলাম (১৪৪৭৫৯১) এর মরদেহ।

দুর্ঘটনার পর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর জানায়, এই সেনা সদস্যরা কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়কটির নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

সেই প্রাণহানির ঘটনাটি উল্লেখ করে সড়কটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার খুব কষ্ট লাগছে, আমরা এক দিকে আনন্দিত, আবার এতগুলো মানুষ জীবন দিয়েছে। তারা এখানে ক্যাম্প করেছিল কিন্তু তারা মাটি চাপা পড়ে জীবন দিয়ে যায়। তাদের কথা আমার সব সময় মনে হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের জন্য সেনাবাহিনী যে কষ্ট করেছে, তারা যখন কাজ শুরু করলো সেই ২০১০ সালে এখানে কাজ করতে গেলে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মোকাবেলা করেই কাজ করতে হয়। সে সময় সেই বাধ ধসে মাটি চাপা পড়ে সেনাবাহিনীর ছয় জন জীবন দিয়েছে। আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের জন্য সমবেদনা জানাই।’

সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে মাটির কাজটা ছিল সবচেয়ে দুরূহ, সবচেয়ে কঠিন কাজ। আমি নিজের চোখে দেখেছি সেনাবাহিনীর সদস্যরা একদিকে বিক্ষুব্ধ সাগরের উত্তেজনা প্রশমিত করছিল অন্যদিকে মাটির কাজ করছেন। এই অসাধ্য সাধন চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাদের কষ্ট দেখেছি, তাদের পরিশ্রম দেখেছি। এত পরিশ্রম, এত কষ্ট তারা সয়েছে, এমনকি তাদের প্রাণহানি পর্যন্ত হয়েছে।’