মেয়াদউর্ত্তীণ কমিটি নড়াইল জেলা বিএনপি’র।। একযুগেও গঠিত হয়নি চারটি থানাসহ সাতটি ইউনিট কমিটি

মেয়াদউর্ত্তীণ কমিটি দিয়ে চলছে নড়াইল জেলা বিএনপি। শুধু তাই নয়, একযুগেও গঠিত হয়নি চারটি থানা কমিটিসহ সাতটি ইউনিট কমিটি।

এছাড়া প্রবাসে থেকেও দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা বনে আছেন এই কমিটিতে। তবে উপেক্ষিত ত্যাগীরা।

এদিকে, বর্তমান কমিটির সভাপতি সবসময় থাকেন ঢাকায়; আর সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়িক কাজে বিভিন্ন জেলায়! এ পরিস্থিতিতে দলের সাংগঠনিক অবস্থা ‘হ-য-ব-র-ল’।

তাই গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও জেলা বিএনপির কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন হয়নি, এমনটি জানিয়েছেন অনেক নেতাকর্মী।

বছরের পর বছর নিরবে-নিভৃতে পড়ে আছে দলীয় কার্যালয়। এ অবস্থায় কার্যালয়ের প্রধান ফটকের তালায় ধরেছে মরিচা, আর ভেতরে পোকামাকড়ের বসতি! বর্তমান কমিটির সময়ে জেলা বিএনপির কার্যালয় কখনো খোলা হয়নি, এমন অভিযোগ ত্যাগী নেতাকর্মীদের।

এমনকি দলীয় চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যও কোনো কর্মসূচী চোখে পড়েনি বিগত সময়ে। গত সংসদ নির্বাচনেও নড়াইল-২ আসনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীর পক্ষে কোনো কাজ করেননি জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তৃণমূল নেতাকর্মীরা চাঙ্গা থাকলেও এক প্রকার ঝিমিয়ে পড়েছেন বর্তমান জেলা বিএনপির প্রথম সারির নেতারা।

এ পরিস্থিতিতে মেয়াদউর্ত্তীণ কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করে দ্রুত নতুন কমিটি দেয়ার দাবি উঠেছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত ১৬৪ সদস্য বিশিষ্ট নড়াইল জেলা বিএনপির দুই বছর মেয়াদী কমিটি ঘোষিত হয়। এছাড়া উপদেষ্টা আছেন ১৬জন। এ কমিটিতে সভাপতি পদে বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম এবং সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামকে মনোনীত করা হয়। এর মধ্যে বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম ব্যবসায়িক কাজে প্রায় সারাবছরই ঢাকায় এবং বিদেশে থাকেন। এদিকে মনিরুল ইসলামও ব্যবসায়িক কাজে বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করেন। দলীয় কোনো কর্মসূচীতে তাদের তেমন একটা দেখা যায় না বলে অভিযোগ একাধিক নেতাকর্মী।

সর্বশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনেও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি জেলা বিএনপির কার্যালয়ে।

এছাড়া করোনা সংকটের আগেও কেন্দ্র ঘোষিত অন্য কর্মসূচী তেমন একটা পালিত হয় না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক নেতাকর্মী।

আর সুদুর যুক্তরাষ্ট্রে থেকেও জাকারিয়া মাহমুদ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি পদে আছেন।

এছাড়া আরো অনেক পদধারী নেতা দুর-দুরান্তে আছেন। সংগঠনের কোনো খোঁজখবর নেন না, সাংগঠনিক কাজে অংশগ্রহণ করেন না।

অন্যদিকে দলের ২ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক হেমায়েত হোসেন ফারুক ব্যক্তিগত অক্ষমতার কারণ দেখিয়ে প্রায় দেড়মাস আগে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।

এদিকে, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি মনিরুল ইসলাম ২০০৮ সাল থেকে প্রায় ১২ বছর নড়াইল সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদও আকড়ে আছেন। এমনকি ওইপদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবেও কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এছাড়া সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান আলেকও দলীয় কর্মকান্ড থেকে দুরে আছেন।

এক্ষেত্রে সদর উপজেলাসহ লোহাগড়া, কালিয়া ও নড়াগাতি থানা ইউনিট এবং তিনটি পৌর ইউনিটে (নড়াইল, লোহাগড়া ও কালিয়া পৌরসভা) নতুন কমিটি গঠিত হয়নি একযুগ ধরে।

অপরদিকে বিগত সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনে ২০ দলীয় জোট প্রার্থী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) একাংশের চেয়ারম্যান ডক্টর ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামসহ অনেক নেতাকে নির্বাচনী প্রচারণায় পাওয়া যায়নি। এতে প্রতীকের (ধানের শীষ) সঙ্গে বেঈমানি করা হয়েছে, দলীয় প্রধানের সঙ্গে বেঈমানি করা হয়েছে। এতে ব্যক্তি মনিরুল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি। জনসাধারণ এটাকে ভালো চোখে দেখেননি।

আর জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম নিজে নড়াইল-১ আসনের প্রার্থী হওয়ায় তার নির্বাচনী এলাকায় ব্যস্ত ছিলেন।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, দলীয় কার্যালয়ে প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আমার বাসাতে করা হয়েছে। এছাড়া দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচীগুলো পালন করার চেষ্টা করেছি। তবে পুলিশের বাঁধার কারণে সম্ভব হয়নি। এছাড়া চারটি থানাসহ সাতটি ইউনিটের নতুন কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি আগেই শেষ হয়েছে। করোনা সংকটের কারণে তা আটকে আছে।

বিগত নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনে ২০ দলীয় জোটপ্রার্থী ডক্টর ফরিদুজ্জামান ফরহাদের পক্ষে কাজ করেননি-এমন অভিযোগের ব্যাপারে বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, জোটের মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি (ফরিদুজ্জামান ফরহাদ) আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করেনি। আর জেলা বিএনপির কার্যালয় শুধু আমাদের সময় নয়, আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে।

জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জেলা কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। এছাড়া অন্য সময়েও প্রশাসনিক বাঁধার কারণে দলীয় কর্মসূচী সফল করা যায়নি। অন্যদিকে কিছু সুবিধাভোগী নেতাকর্মী দলের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন।

ঢাকায় এবং বিদেশে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান বিষয়টি অবগত আছেন।