যে সড়ক ১২ মাস থাকে পানির নিচে!

রিকশার বেয়ারিং লালচে। সিএনজিচালিত অটোরিকশার সামনের লোহার রংও লালচে। ১২ মাস পানির মধ্যে চলতে চলতে যানবাহনের এমন অবস্থা। সেখানকার মানুষ দুঃখে বলছেন, ‘কেবল গাড়িতে নয়, এভাবে চলতে চলতে আমাদের মনেও মরিচা ধরেছে। ১২ মাস পানির নিচে থাকা এ সড়ক জুরাইনের কমিশনার রোড নামে পরিচিত।’

বৃষ্টি হলে রাজধানীর কদমতলী এলাকায় এ সড়কের মানুষদের ভোগান্তি আরও বাড়ে। এ সময় হাঁটুর ওপরে পানি জমে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এভাবে বছরের পর বছর পানি জমে থাকে এই সড়কে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলেছে, সমস্যা সমাধানের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

গত শনিবার দুপুরে কমিশনার সড়কে দেখা গেল, সড়কে হাঁটুর ওপরে পানি। সেই পানির মধ্যে চলছে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা। বছরের পর বছর পানি থাকায় সড়কের দুই পাশের দোকানপাটের নিচের অংশ স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। রিকশাওয়ালা মোহাম্মদ সবুজ বলছিলেন, ‘আর কত বছর পানির মধ্যে থাকতে হবে আমাদের?’ চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রিয়াজ উদ্দিন বলছিল, ‘পানি ভেঙে আর স্কুলে যেতে ভালো লাগে না। এক-দুই দিন হলে হয়, সারা বছর এভাবে চলতে হয়। পায়ে ঘা হয়ে যায়।’ এলাকাবাসী বলছেন, ‘বর্ষাকালে রাস্তায় এত পানি জমে যে বাজারেও পানি ঢুকে পড়ে। দোকানপাট তলিয়ে যায়।’ তাঁদের অভিযোগ, বছরের পর বছর সড়কটি জলাবদ্ধ থাকলেও এর সমাধানে কেউ কাজ করেননি।

সড়কের দুই পাশের অন্তত ১০০ মানুষের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। প্রায় প্রত্যেক মানুষের মুখে একটাই কথা ছিল, আর কত বছর পানিতে থাকতে হবে? কেউ কি দেখার নেই? এভাবে কী মানুষ বেঁচে থাকতে পারে? একটা রাজধানীর সড়ক যদি ১২ মাস পানির নিচে থাকে, এই লজ্জা কার? যেসব মানুষের যাওয়ার জায়গা আছে তাঁরা সবাই এলাকা ছেড়েছেন। যাঁদের উপায় নেই, তাঁরাই কেবল সেখানে বসবাস করছেন। গভীর রাতে যখন কোনো মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন কোনো যানবাহন পাওয়া যায় না। স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীরা চরম কষ্টে আছে। এভাবে আর তাদের পক্ষে এভাবে বসবাস সম্ভব নয়।

এলাকার মানুষের এই ক্ষোভের কথা জানানো হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মাদ বিলাল বলেন, ‘জুরাইনের কমিশনার সড়ক ১২ মাস পানির তলে থাকে, এটা তিনি জানেন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’