আগত সন্তানের স্বীকৃতি চাওয়ায় বাড়ি ছাড়া

রংপুরের পীরগঞ্জে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী ৬ মাসের অন্তসত্ত্বা,

পীরগঞ্জে প্রতিবেশী বড় ভাইয়ের লাম্পট্যের শিকার হয়ে এক ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। আগত সন্তানের স্বীকৃতি চাওয়ায় অসহায় ওই অন্তসত্ত্বা স্কুলছাত্রীসহ তার পরিবারকে নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখানোর ফলে ছাত্রীটি বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। গ্রাম্য মসজিদে বিচার চেয়েও ব্যর্থ স্কুলছাত্রীর পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার টুকুরিয়া ইউনিয়নের সুজারকুটি গ্রামে।

অন্তসত্ত্বা স্কুলছাত্রী ও তার পরিবার সূত্র জানায়, সুজারকুটি গ্রামের মৃত- ইসমাঈল আলীর পুত্র দু’সন্তানের জনক মোনতাজ ওরফে মমতাজ আলী (৬২) প্রতিেিবশী হতদরিদ্র শ্রবণ প্রতিবন্ধী বাবা ও শারিরীক প্রতিবন্ধী মা’য়ের একমাত্র কন্যা ওই স্কুলছাত্রীকে নির্জন বাড়িতে ভাত রান্নার ছলনা দিয়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে মুখে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যার হুমকী দেখিয়ে বলপূর্বক ধর্ষণ করে। গ্রাম্য সম্পর্কে ওই স্কুলছাত্রী মমতাজের ছোট বোন। সে স্থানীয় সুজারকুটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। প্রায় ৬মাস পূর্বে লম্পট মমতাজ আলীর পুত্রবধু শাহানাজ পারভীন সন্তানসম্ভবা হওয়ায় তাকে সিজারের জন্য রংপুর মেডিকেল ভর্তি করা হয়। এ সময় পুত্র লিটন মিয়া, কন্যা স্বপ্না বেগম (এক সন্তানের জননী) ও তার স্ত্রী ছানোয়ারা বেগমও মেডিকেলে গেলে ৩দিন বাড়ি ফাঁকা ছিল। এ সুযোগে মমতাজ আলী ওই স্কুলছাত্রীকে নানা ভয়-ভীতি, অর্থের প্রলোভন ও মেরে ফেলার হুমকী দেখিয়ে প্রায়ই ভোগ করে আসছিল।

এদিকে প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়মে ওই স্কুল ছাত্রী তার অজান্তে অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গ্রাম প্রতিবেশীরা তার শারিরীক গঠন পরিবর্তনের ঘটনায় নানাভাবে প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে থাকে। বিষয়টি ওই স্কুল ছাত্রী বরাবরই অস্বীকার করে আসছিল। সে তখনও জানতো না যে, তার গর্ভে সন্তান। এক পর্যায়ে গত ৭ আগষ্ট ‘ডিআর ইমার উদ্দিন কমিউনিটি হাসপাতাল’এ নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ৬ মাসের অন্তঃস্বত্ত¡া বলে জানান। এ বিষয়ে পরিবারের লোকজন ওই স্কুলছাত্রীর নিকট জানতে চাইলে সে উল্লেখিত ঘটনা খুলে বলে। বিষয়টি গত ইদুল-আজহা’র ২দিন পূর্বে গ্রামে জানাজানি হলে প্রভাবশালী মোনতাজ ওরফে মমতাজ আলী ও তার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওই অসহায় স্কুলছাত্রীর বাড়িতে হামলা চালায়। অব্যাহত ভয়-ভীতি ও হুমকীর কারণে প্রাণভয়ে ওই স্কুলছাত্রী গত ৪ আগষ্ট বাড়ি থেকে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। বাবা-মা প্রতিবন্ধী হওয়ায় তারা ভয়ে আইনের আশ্রয় নেয়ারও সাহস করেনি।

ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার জন্য স্কুলছাত্রীর চাচা বুলু মিয়া ও তার স্ত্রী সমস্ত বেগম স্থানীয় সুজারকুটি মসজিদে বিচার প্রার্থণা করলে গত রোববার (৮ আগষ্ট) রাতে সালিস বৈঠক হয়। বৈঠকে মমতাজ আলী ওই স্কুলছাত্রীকে তার অপকর্মের জন্য এক লক্ষ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও গর্ভের সন্তানের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন। ফলে মিমাংসা বৈঠক ভেস্তে যায়। স্কুলছাত্রীটি অশ্রুসিক্ত চোখে তার ভবিষ্যৎ ও তার আগত সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ও (মমতাজ আলী) আমার জীবনটা শেষ করে দিলো। আমি কি আমার সন্তানের পিতৃ পরিচয় পাবো না! হবে না বিচার? (ভিডিও সংরক্ষিত) এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মমতাজ আলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।