রওশনপন্থিরা নেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকায়

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ময়মনসিংহ-৪ ফাঁকা রেখে মোট ২৮৭ আসনে প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। গতকাল সোমবার বনানী কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। রওশনপুত্র রাহগীর আল মাহি এরশাদ সাদসহ তাঁর অনুসারীদের নাম নেই তালিকায়। অনুসারীদের মনোনয়ন না দিলে ক্ষুব্ধ রওশন আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়েছেন তাঁর রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ।

জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ঢাকা-১৭ ও সাদ এরশাদের রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। রওশনপুত্র ছাড়াও এমপিদের মধ্যে রংপুর-১ আসনের মসিউর রহমান রাঙ্গা ও পিরোজপুর-৩ আসনের রুস্তম আলী ফরাজী মনোনয়ন পাননি। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একই কথা জানিয়ে রুস্তম আলী ফরাজী বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয় নিশ্চিত।

প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর গুলশানে বৈঠকে বসেন রওশনপন্থিরা। গোলাম মসীহ সমকালকে বলেন, একতরফা প্রার্থী তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে দলকে ভেঙেছেন জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নু। রওশন এরশাদ যাদের মনোনয়ন দিতে বলেছেন, তাদের প্রার্থী করলেই তিনি নির্বাচন করবেন।

রওশনের জন্য আসন ফাঁকা রাখার বিষয়ে গোলাম মসীহ বলেছেন, তিনি একা নির্বাচনে যাবেন না; জি এম কাদেরের নেতৃত্বে নির্বাচন করবেন না। বিরোধীদলীয় নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কিনা প্রশ্নে বলেন, লাঙ্গলের মালিক রওশন এরশাদ। তিনি কেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন?

রওশনপন্থিদের সূত্র জানিয়েছে, পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতের অপেক্ষায় রয়েছেন রওশন। তবে ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে তিনি সাক্ষাৎ পাবেন কিনা, তা নিশ্চিত নয়। সাক্ষাৎ না পেলে স্পষ্ট হয়ে যাবে, আওয়ামী লীগের কাছে আর গুরুত্ব পাচ্ছেন না রওশন এবং জি এম কাদেরের একক নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, রওশন এরশাদ এবং জি এম কাদেরের মধ্যে পারিবারিকভাবে মান-অভিমান আছে কিনা, জানি না। রওশন এরশাদ অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি প্রথমে ফোন করে দুটি মনোনয়ন ফরম চেয়েছিলেন। পরে তিনটি ফরমের কথা বলেন। জি এম কাদের জানার পর বলেছেন, উনি তিনটা ফরমের কথা বলেছেন। উনি এলে তিনটা ফরমই দিও।

রওশন এরশাদের জন্য সময়ের বাধ্যবাধকতা নেই, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে যখন চাইবেন, তখনই মনোনয়ন দেওয়া হবে উল্লেখ করে চুন্নু বলেন, ‘আমি বলেছি, তিনি যদি লোক পাঠান বা হুকুম করেন, আমি নিজে দিয়ে আসব। তিনি আমাকে মনোনয়ন ফরম নিয়ে যেতে নির্দেশ দেননি; আবার লোকও পাঠাননি।’

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করে গত তিনটি নির্বাচন করেছে জাপা। এবার তেমন হবে না বলে চুন্নু দাবি করলও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থী দেয়নি জাপা। যদিও চুন্নু বলেছেন, কারও সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতাও হবে না।

জাপা সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার শঙ্কার কথা বললেও ফের বিরোধী দল হওয়ার আশ্বাসে নির্বাচনে যাচ্ছে দলটি। আওয়ামী লীগের কাছে ৫০ আসনে ছাড় চায় তারা। জাপার শর্ত, এসব আসনে নৌকার বা আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও থাকতে পারবে না। তবে ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে এ ধরনের কোনো আশ্বাস এখনও পায়নি তারা।

রওশনের আসন ছাড়াও শেরপুর-২, ফরিদপুর-২, ফরিদপুর-৪, গোপালগঞ্জ-৩, শরীয়তপুর-১, সুনামগঞ্জ-২, সুনামগঞ্জ-৩, মৌলভীবাজার-৪, হবিগঞ্জ-২, লক্ষ্মীপুর-৪, চট্টগ্রাম-১০ ও চট্টগ্রাম-১১ আসন ফাঁকা রেখেছে জাপা। প্রায় ১ হাজার ৮০০ মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে দাবি করলেও এই ১২ আসনে প্রার্থী খুঁজে পায়নি দলটি। তবে ৯টি আসনে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চট্টগ্রাম-৫, মুজিবুল হক চুন্নু কিশোরগঞ্জ-৩, কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার পটুয়াখালী-১, কাজী ফিরোজ রশীদ ঢাকা-৬, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ঢাকা-৪ এবং সালমা ইসলাম ঢাকা-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। মনোনয়ন পাওয়ার পর বাবলা সমর্থকদের নিয়ে শ্যামপুর-কদমতলীতে শোডাউন করেন।