রোজার আগেই খেঁজুরের চড়া দাম

রোজায় ইফতারির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ খেঁজুর। প্রতি বছর দেশের বাজারে আসে নানা রকম খেঁজুর। এসব খেজুর কিনতে গিয়ে নাম আর মান নিয়ে দ্বন্দ্বের পাশাপাশি এবার দাম শুনেও কপালে ভাঁজ পড়ছে ক্রেতাদের।

কিছুটা সাশ্রয়ী দামে পাওয়ার আশায় কেউ পুরো রমজান মাসের জন্য বেশি করে খেজুর কেনেন পাইকারি বাজারে থেকে।

ঢাকার খেজুরের বাজারের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বছর ঘুরে জাতভেদে ’৩০ থেকে ৫০ শতাংশ’ দাম বেড়েছে খেজুরের। রমজানে এই দাম আরও ‘বাড়তে পারে’ বলে আভাস তাদের।

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাদামতলীর পাইকারী খেঁজুর ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের দোকানের দুই কর্মী জানান, “এখন এক গাড়ি খেঁজুর আনতে যে টাকা লাগে, এক বছর আগে সে টাকায় তিনগাড়ি খেজুর মিলত।”

পাইকারিতে নামী খেজুরের দাম বাড়ার রেশ টের পাওয়া যাচ্ছে খুচরা বাজারেও। তবে খুচরা বাজারে বাড়তি দামের প্রভাব পড়েছে ক্রেতার কেনাকাটায়। দাম বেশি হওয়ায় কেনার পরিমাণ কমাতে হচ্ছে অনেককে।

খেজুরের এই দাম বৃদ্ধির পেছনে ডলার সংকট ও আমদানি নির্ভরতাকে দায়ী করছেন অনেকে।

এক ব্যবসায়ী বলেন, “সব জিনিসের দাম বাড়ছে, খেঁজুরের দাম তো বাড়বোই। ডলারের দাম বেশি হইলে বাড়ব না? এইটা তো আর দেশে হয় না।”

প্রকারভেদে খেঁজুরের দাম কেমন বেড়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তরে এই দোকানি জানান, তার দোকানে ১০-১২ পদের খেঁজুর আছে। সব খেঁজুরেই কেজিতে গড়ে ৫০-১০০ টাকা দাম বেড়েছে।

পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে কী পরিমাণ খেজুর আমদানি করা হচ্ছে তা ‘জানতে পারেন না’ তারা। ফলে, বাজারে পর্যাপ্ত খেজুর এনে আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে মজুদ করলে তাদের ‘বোঝার উপায় থাকে না’।

তবে মজুদ সিন্ডিকেট বা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণের অভিযোগগুলো মানতে নারাজ ঢাকা মহানগর ফল আমদানি ও রপ্তানিকারক আড়তদার ও ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল করিম।

আমদানিকারক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, “সবাই মিলে বসি। যদি তারা বলে যে আমরা বেশি নিচ্ছি, তাহলে সেটা আপনারা লিখবেন।

“আমার হিসাবে ৩০% দাম বাড়ছে। হাজিরা না যাওয়ায় গতবছর দাম কম ছিল। এখন তো মধ্যপ্রাচ্যের চাহিদাই মেটানো যাচ্ছে না। এটা সত্য কথা।

“দেড় মাস থেকে আমরা ন্যূনতম হলেও এলসি খুলতে পারছি। রমজান সামনে রেখে সরকার কিছু সুযোগ করে দিয়েছে। সমস্যা হচ্ছে ডলার রেইট আগে যেখানে ৮৫-৮৬ ছিল এখন তা ১০৮-১১০ টাকা। ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ ডলারে আগে কন্টেইনার বুক করা যেত, এখন সেটা ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৫ হাজার ৬০০ ডলার পড়ছে। এসব কারণে দাম বাড়তি। শুধু শুধু আমদানিকারকের দোষ দিয়ে লাভ নেই।”

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, “বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের ব্যবসায়ীরা সবাই তার আপার হ্যান্ডকে অভিযোগ করে। কেউই তো ঠিক নেই।

“পাইকারী ব্যবসায়ীদের কত খেঁজুর এসেছে, তা জানার ইচ্ছে থাকলে খেঁজুরের বিপরীতে কতো এলসি খোলা হয়েছে তা জানতে পারে। এটা এমন কোনো গোপন তথ্য নয়। সিন্ডিকেট নিয়ে কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করলে সেটা প্রতিযোগিতা কমিশন দেখবে।”