‘রোহিঙ্গা নিপীড়নে গণহত্যার আলামত দেখেছি’

গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে মানবাধিকার-বিষয়ক জাতিসংঘের দূত ইয়াং লি বলেছেন, `রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যার বৈশিষ্ট্য’ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে সরেজমিনে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখার পর গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে এক সংবাদ সম্মেলনে ইয়াং লি এই মন্তব্য করেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, `বিশ্বাসযোগ্য কোনো আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বা আদালতে সাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত আমি গণহত্যার ব্যাপারে সরাসরি কোনো ঘোষণা দিতে পারি না।’

তবে তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের আলামতকে গণহত্যা বলেই উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এ ধরনের আলামত দেখছি এবং ধীরে ধীরে তা জোরালো হচ্ছে।’

গত ডিসেম্বরে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের নিযুক্ত মিয়ানমারের মানবাধিকার–বিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার ইয়াংহি লির মিয়ানমার সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে অং সান সু চির সরকার।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ রয়েছে, তা দূর করার স্বার্থে দেশটির দায়িত্বশীলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন।

লি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ও তাদের পরিবারের প্রতেক্যেরই একটা উত্তর পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাই সবধরনের পদক্ষেপই নেওয়া দরকার।’

গত ১৮ জানুয়ারি এক সপ্তাহের জন্য রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশে আসেন ইয়াং লি। এ সময় তিনি কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। পরে থাইল্যান্ড হয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ফিরে যান। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে প্রতিবেদন দেবেন।

এর আগে তিনি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ এসেছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক ইয়াং লিকে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ ২০১৪ সালে এই পদে নিয়োগ দেয়।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। বিরতি দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা এখনো চলছে।