লালমাই পাহাড়ে ফুলের সাথে পাখি-প্রজাপতি আর ভ্রমরের মিতালী

চম্পা পারুল যূথী টগর চামেলা/ আর সই সইতে নারী ফুল ঝামেলা বা মহুয়ার মালা গলে কে তুমি এলে, নয়ন ভুলানো রূপে কে তুমি গেলে- গান, সাহিত্য বা পাঠ্যবইয়ে উল্লেখিত নানা ফুল ও উদ্ভিদের কথা বর্ণনা করা হলেও বর্তমানে এসব উদ্ভিদের সামান্যই দেখা মেলে। এসব উদ্ভিদের কিছু বিলুপ্তপ্রায় আবার কিছু পাওয়া যায় লোকালয়ে। বর্তমান প্রজন্মকে নতুন করে জানাতে কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের চূড়ায় সংরক্ষণ করা হয়েছে শতাধিক প্রজাতির বিরল উদ্ভিদ। এ উদ্যানে রোপণ করা হয়েছে বিরল উদ্ভিদের কয়েক লাখ চারা। এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বিরল উদ্ভিদ উদ্যান। উদ্যানটি স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ১৭কোটি টাকা।

উদ্যানটিতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে বেড়াচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি। প্রজাপতি ও মৌমাছিরা খেলা করছে ফুলে ফুলে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে ফুলের ঘ্রাণ। আঁকাবাঁকা পাহাড়ের নির্জনতায় একইসাথে এত প্রজাতির বিরল উদ্ভিদ ও ফুলের সুবাস বিমোহিত করবে যেকোনো দর্শনার্থীকে।

উদ্যানটিতে রয়েছে বৈলাম, চম্পা, লোহাকাঠ, স্বর্ণকমুদ, সিভিট, অশোক, চাপালিশ, বহেরা, হরিতকি, তেলশুর, আগর, নাগলিঙ্গম, নাগেশ^র, শাল, মহুয়া, ধূপ, উড়ি আম, বন পেয়ারা, বাঁশপাতা, সাকড়া, চালমুগরা, কাঞ্চন, পিতরাজ, জারুল, কনক, তমাল, রাধাচূড়া, করমচা, অড়বরই, হারগোজা, ডেফল, সুরুজ ,ধারমারা, এলামেন্ডা,জুমু জবা, কার্নিভাল কর্ডিলাইন, ডুরান্ডু, কুপিয়া ও কাটামেহেদিসহ শতাধিক প্রজাতির বিরল উদ্ভিদ। এছাড়া রয়েছে অর্কিড ও ক্যাকটাস হাউজ। আছে পরিচিত ফুল, ফল, পাতাবাহার ও ভেষজ উদ্ভিদও।

২০১৫ সালে ১৭ একর ভূমির ওপরে শুরু হয় বিরল উদ্ভিদ উদ্যানটির কাজ। ২০২০ সালে শুরুর দিকে উদ্যানটির এ অংশের কাজ সমাপ্ত হয়। ২০২০ সালের এপ্রিলে এ উদ্যানটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা থাকলেও করোনার প্রভাবের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর এ উদ্যানটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এতে প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ছাত্রদের জন্য প্রবেশমূল্য ৫টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য প্রবেশমূল্য ৪০০ টাকা। উদ্যানটির ভেতরে আছে পার্ক অফিস। নারী ও পুরুষ পর্যটকদের জন্য আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কুমিল্লা বনবিভাগ কার্যালয় থেকে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া লালমাই পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপিত এ উদ্যানের আশেপাশে তিনভাগে বনবিভাগের আরও ৩৩ একর জায়গা রয়েছে। বিরল উদ্ভিদ উদ্যান কেন্দ্রটিসহ মোট ৫০একর জায়গার দখলে আছে কুমিল্লা বনবিভাগ। এটিকে আরও সম্প্রসারিত, পর্যটনমুখী ও বন্য প্রাণীর অভায়রণ্য করে তুলতে দরকার আরও ৩০ একর জায়গা। মোট ৮০ একর জায়গা হলে একটি পরিকল্পিত দৃষ্টিনন্দন বিরল উদ্ভিদকেন্দ্র ও বন্যপ্রাণীর অভায়রণ্য হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন বন কর্মকর্তারা।

দর্শনার্থী রবিউল ইসলাম জানান, ‘উদ্যানটিতে একাধিকবার গিয়েছি। চমৎকার জায়গা, যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো। আশেপাশে শালবন বৌদ্ধবিহারসহ অনেকগুলো ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে অনায়াসেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারবে।’

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র রুবেল হোসেন বলেন, ‘কুমিল্লায় এমন উদ্ভিদ উদ্যান গড়ে তোলা দারুণ ব্যাপার। শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য এটা ভালো ক্ষেত্র।’

কুমিল্লার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নুরুল করিম জানান,‘ উদ্ভিদ উদ্যান কেন্দ্রটি করা হয়েছে এ প্রজন্মকে শেখানোর জন্য। শিক্ষার্থীরা বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদগুলো দেখে জ্ঞানার্জন করবে। তাই তাদের জন্য সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক নামমাত্র মূল্যে টিকিট নির্ধারণ করা হয়েছে।’
এ কর্মকর্তা আরও জানান, ‘আমাদের ৫০ একর জায়গা আছে। আরও ৩০ একর জায়গা হলে একটি পরিকল্পিত উদ্ভিদ উদ্যান কেন্দ্র ও বন্যপ্রাণীর অভায়রণ্য গড়ে তোলা সম্ভব। আমরা ঊর্ধ্বতন মহলে যোগাযোগ করেছি। এটা হবে, তবে কিছুটা সময় লাগবে।’