শেরপুরে স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মবিরতি: শিশুরা টিকা না পাওয়ায় চিন্তিত অভিভাবকরা!

শেরপুরে জেলার সদর উপজেলাসহ সব কয়টি উপজেলায় স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োগ বিধি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশোধন করে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবীতে ১৩তম দিনে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এ কর্মসূচিতে নকলা উপজেলায় কর্মরত স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীসহ সকল সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মবিরতির কারণে ১৩ দিন ধরে টিকা না পাওয়ায় চিন্তিত শিশুদের বাবা-মাসহ অভিভাবকরা।

৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার নকলা হাসপাতালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালের সামনে কর্মবিরতির ব্যানার ও মনি পতাকা ঝুলিয়ে ভারাক্রান্ত মনে সারিবদ্ধ ভাবে বসে আছেন। বাংলাদেশ হেল্থ এসিসট্যান্ট এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নকলা উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে ২৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে এ কর্মবিরতি কর্মসূচি শুরু করছেন বলে জানান স্বাস্থ্যকর্মীরা।

নকলায় চলমান এ কর্মবিরতিতে হেল্থ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশনের জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীবৃন্দ অংশ নিয়েছেন।

কর্মবিরতি কর্মসূচিতে অংশ গ্রহনকারীরা জানান, ১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ভ্যাক্সিন হিরো খ্যাত জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বেতন বৈষম্য নিরসনের ঘোষনা দেন। অত:পর ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারী তৎকালীন মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের ন্যায্যদাবী সমূহ মেনেনিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত কার্যকর না হওয়ায় চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারীতে আমরা হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইনের কার্যক্রম বর্জন করলে মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মহোদয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় আমাদের দাবী সমূহ পুনরায় মেনে নিয়ে লিখিত সমঝোতা পত্রে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু দু:খ জনক হলেও সত্যি যে, ওই লিখিত সমঝোতা পত্রের সিদ্ধান্ত অজ্ঞাত কারনে বাস্তবায়নের পরিবর্তে ফাইল বন্দি হয়ে আছে। তাই তাদের ন্যায্যদাবী আদায়ের লক্ষে সকল প্রকার ক্যাম্পেইনের কার্যক্রম বর্জনসহ কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২ নভেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে জেলা, বিভাগ, এনএসআই, মহাপরিচালক ও দাতা সংস্থার বরাবরে স্মারক লিপি প্রদান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্মেলন, ২৬ নভেম্বর থেকে ইপিআইসহ যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষনা করেন। তাঁরা আরও জানান, তাদের চাকুরীর প্রারম্ভিক কাল হতে অবহেলিত, সুবিধা বঞ্চিত হয়ে চরম বৈষম্যের শিকার; অথচ টিকাদান কর্মসুচিতে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল। শুধু টিকাদান নয় এর ধারবাহিকতা বজায় রেখে আমরা নিরলস কাজ করে আসছি। এর বদৌলতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব দরবারে ভ্যাক্সিন হিরোর খ্যাতাব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

তারা বলেন, আমাদের নিয়োগ বিধি সংশোধন করে বেতন বৈষম্যদূর করতে বেশ আগে থেকেই দাবী জানিয়ে আসছি। তখনকার সময় থেকেই আমরা বলে আসছি, সরকারের পক্ষ থেকে মেনে নেওয়া আমাদের দাবী সমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন না করলে ২৬ নভেম্বর থেকে সকল প্রকার কার্যক্রম বর্জন করা হবে। কিন্তু মেনে নেওয়া আমাদের ন্যায্য দাবী বাস্তবায়নের প্রতি কর্ণপাত না করায় আমাদের নেতৃবৃন্দরা নিরুপায় হয়েই সারাদেশ ব্যাপী এ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন।

জানা গেছে, নিয়োগ বিধি সংশোধন করে স্বাস্থ্য সহকারীদের ১৩ তম গ্রেড, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের ১২ তম গ্রেড ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের ১১ তম গ্রেড প্রদানের মাধ্যমে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবীতে ২৫ নভেম্বর বুধবার সারাদেশের উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), এনএসআই ও দাতা সংস্থাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।