সংখ্যালঘু হওয়ায় প্রধান বিচারপতিকে হেয় করা হচ্ছে : হিন্দু মহাজোট

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন হওয়ার কারণেই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ‘হেয় প্রতিপন্ন’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এনেছেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতারা। সোমবার(২৮ আগস্ট) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ এনে তারা বলছেন, সরকারদলীয় মন্ত্রী ও নেতারা প্রকারান্তরে আদালতকেই ‘বিতর্কিত’ করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পর সরকারদলীয় মন্ত্রী ও নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, বিভিন্ন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকেও প্রধান বিচারপতিকে ‘হেয় প্রতিপন্ন করে গালাগাল করা হচ্ছে’।

প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে রেখে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করেছেন আপিলের বিভাগ। তারই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সমালোচনা করে আসছে ক্ষমতাসীনরা।

রায়ের পর্যবেক্ষণে ‘অপ্রাসঙ্গিক ও আপত্তিকর’ কথা এসেছে আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করে বলেন, রায়ে সংসদ ও সাংসদদের সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্যের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে অস্বীকার করার চেষ্টা করা হয়েছে। এজন্য প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে বাক-আক্রমণ করার পাশাপাশি ক্ষমতাসীনরা তার পদত্যাগও দাবি করে আসছে।

গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রী থেকে সরকারি দলের বড় বড় নেতানেত্রী যেভাবে, যে ভাষায় প্রধান বিচারপতিকে আক্রমণ করে কথা বলছে, তা ইতিহাসে বিরল। দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে নিয়ে ইতিপূর্বে আমরা এমন কথা শুনিনি। রায়ে সরকারপক্ষ অসন্তুষ্ট, কিন্তু সেই অসন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ এতই নগ্ন যে- আমরা ভাষায় প্রকাশ করতে আমরা লজ্জা পাই। বিচার বিভাগের উপর এই নগ্ন আক্রমণ ইতিহাসে নজিরবিহীন।’

প্রধান বিচারপতিকে একটি ‘প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করলে, নগ্ন হস্তক্ষেপ করলে সাধারণ জনগণের আশা ভরসা শেষ হয়ে যাবে। বিচার ব্যবস্থাকে মান্য করার রীতি শেষ হয়ে যাবে। দেশ ‘জোর যার, মুল্লুক তার’- এ পরিণত হবে।”

ভোট বয়কটের ডাক

দেশব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণের ঘটনায় আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এই রাজনৈতিক দলের কাছে হিন্দু সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের অত্যাচার-অনাচারে হিন্দু সম্প্রদায় আজ দিশেহারা।’

গোবিন্দ প্রামাণিক পরে আলাদা একটি সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজায় তিন দিনের সরকারি ছুটির দাবি জানান। একইসঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৫০টি আসন সংরক্ষণ ও আলাদা নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিও জানান।

এ দাবিগুলো পূরণ করা না হলে আগামী নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায় ভোট বয়কট করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।