সংসদ নির্বাচন : ইভিএম ব্যবহারের ঝুঁকি কোথায়?

এখনো ঠিক কতগুলো আসনে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম ব্যবহার হবে তা নিশ্চিত করেনি নির্বাচন কমিশন। তবে এটা নিয়ে শঙ্কা, আলোচনা আর সমালোচনা থেমে নেই।

এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার হয়। তবে প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের আগে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ আছে নির্বাচন কমিশনের সামনে। আর তা হল এটার বিশ্বাসযোগ্যতা ও আস্থা অর্জন।

যেভাবে কাজ করে ইভিএম?

ইভিএম মেশিনগুলোর তিনটা অংশ থাকে। প্রথমত, কন্ট্রোল ইউনিট-যাতে ভোট ও ভোটারদের তথ্য জমা থাকে, দ্বিতীয়ত ডিসপ্লে ইউনিট, সেই তথ্যগুলো প্রদর্শন করে এবং ব্যালট ইউনিট, যেটাতে সুইচ টিপে ভোটাররা গোপন কক্ষে তাদের ভোট প্রদান করে থাকেন।

ইভিএম কেনা নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের দাবী এই ইভিএমটি “সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ও নতুন এমন কিছু ফিচার” যোগ করা আছে এতে যা এর আগে বিশ্বের কোথাও ব্যবহার হয়নি।

“ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনের বড় সুবিধা হল, দিনব্যাপী ভোটগ্রহণ শেষে সহজেই মূহুর্তের মধ্যে ভোট গণনা করে ফেলা যাবে,” বলছিলেন নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা ও যোগাযোগ বিভাগের অপারেশন ইনচার্জ মাহমুদ আরাফাত।

কিন্তু এটি নিয়ে এত সমালোচনা কেন? আর যুক্তরাষ্ট্র, ভারতে ইভিএম নিয়ে বিতর্কটা কোথায়?

বাংলাদেশে ইভিএমের উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত বুয়েট অধ্যাপক লুৎফুল কবীর বলছিলেন ইভিএম মেশিনের দুটো প্রধান ঝুঁকির কথা।

১. পছন্দের প্রতীকে ভোট দিলেও নির্দিষ্ট প্রতীকে জমা হতে পারে

মেশিনটি চাইলে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা সম্ভব যে, নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক ভোটের পর বাকি সব ভোট একটা প্রতীকেই জমা হবে।

হয়তো ভোটার দেখবে যে সে তার পছন্দের প্রতীকে ভোট দিয়েছে, কিন্তু আসলে তা হবে না।

মি কবীর বলছিলেন, “এখন এইটা নিশ্চিত করার জন্য সব দলের অংশগ্রহণে একটা টেকনিক্যাল কমিটি করা যেত, যারা মেশিনটি ভেরিফাইড করবে।”

২. পুনর্গণনার সুযোগ নেই

ইভিএম মেশিনে ভোটার ভ্যারিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল বা ভিভিপিএটি নেই। একজন ভোটার ভোট দেবার পর তাঁর কাছে একটা প্রিন্টেড স্লিপ আসতো, যাতে কোন কারণে ভোট পুনর্গণনার প্রয়োজন হলে এটি কাজে আসতো।

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমও জানালেন ইভিএম তৈরীর কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এই অপশনটি রাখতে চেয়েছিলেন তারা।

“এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, ঐ ফিচারটি রাখতে গেলে অন্য কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা হচ্ছে।”

শুধু অর্থ ও লোকবল সাশ্রয়?

ইভিএম – এ কোন ঝুঁকি আছে বলে মনে করেন না নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “আমরা তো দেখলাম মানুষ খুব সহজে ভোট দিতে পারছে।”

“এছাড়া ম্যানুয়্যাল পদ্ধতিতে আমাদের যে পরিমাণ লোকবল, অর্থ, ট্রান্সপোর্ট ও ম্যাটেরিয়াল লাগতো তা থেকেও মুক্তি মিলছে।”

এই কমিশনার আরো জানান যদি আরো বাড়তি কিছু যোগ করতে হয় ইভিএমের শঙ্কা দূর করতে তাহলে কমিশন সেটা পরিপত্র জারী করেও করতে পারে।

অন্যদিকে প্রোগ্রামিংয়ের ব্যাপারটার ব্যাখ্যা করেন মি. আরাফাত বলেন, “মেশিনটি এমনভাবে প্রোগ্রাম করা যে এটি ভোটের দিন সকাল ৭টার আগে কোনভাবেই চালু হবেনা। আর ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত শুধু ডেমো ভোট দেয়া যাবে।”

“তাই কেউ যদি কোনভাবে মেশিনটি নিয়েও যায় কোন লাভ হবেনা। আর ভোট শুরুর আগে সবার উপস্থিতিতে মেশিনটি চেক করে নিশ্চিত হওয়ার ব্যবস্থা আছে যে এই মেশিনে কোন ভোট পড়েনি।”

ইভিএম শুধু মাত্র যেসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে

ইভিএমের ৪৮ ঘন্টার ব্যাটারি ব্যাকআপ থাকলেও আপাতত শুধু যেসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে সেখানেই সীমিত আকারে ব্যবহারের চিন্তা নির্বাচন কমিশনের।

আর সাধারণ মানুষকে এর সাথে পরিচয় করাতে দেশব্যাপী নানা প্রচারণা চালিয়েছে কমিশন।

কিন্তু এটি ঘিরে বিতর্ক বন্ধ করা যায়নি তাতে।

-বিবিসি বাংলা