সাতক্ষীরাঞ্চলে ফোন করলেই রোগীর বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ অ্যাম্বুলেন্স

তালা উপজেলাসহ গোটা সাতক্ষীরা জেলায় মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এ আক্রান্ত রোগীরা পাচ্ছেন বিনামূল্যে অক্সিজেন ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা।

বে-সরকারী সংস্থা উত্তরণের পক্ষ থেকে একদল কোভিডযোদ্ধা স্বেচ্ছাসেবক জীবন বাজি রেখে হটলাইনে কল করা মাত্রই রোগীর বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার। রোগী বহনের জন্য চালু করেছে অ্যাম্বুলেন্স সেবা।
ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ৭৫৮ জন রোগিকে অক্সিজেন এবং ২৬ জন রোগিকে অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুনের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি সংস্থার পক্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে বিনামূল্যে প্রায় ৬০ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়।

জানা গেছে, হঠাৎ করে সাতক্ষীরা জেলা জুড়ে করোনা ভাইরস ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
আশঙ্কাজনকহারে বাড়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এমনকি অক্সিজেনের অভাবে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। অক্সিজেনের অভাবে মানুষের দুর্ভোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারেই সীমিত। এছাড়া করোনা রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য কোন ব্যবস্থা ছিল না। এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে করোনায় আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উত্তরণ। দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তারা চালু করে অক্সিজেন ব্যাংক ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা।

সাতক্ষীরা জেলার তালা, আশাশুনী, কলারোয়া, শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, দেবহাটা, সাতক্ষীরা সদর, খুলনা জেলার পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া এবং যশোরের কেশবপুর উপজেলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থা উত্তরণ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিশেষ করে করোনা রোগীদের নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

উত্তরণের প্রকল্প সমন্বয়কারী জাহিদ আমিন শাশ্বত জানান, ‘গ্রামে বসবাসরত মানুষ যাতে জরুরি প্রয়োজনে অক্সিজেনসেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য প্রতিষ্ঠা করেছে ‘উত্তরণ অক্সিজেন ব্যাংক’। অক্সিজেন সিলিন্ডার করোনা সংক্রমিত রোগীর বাড়িতে পৌঁছে দেয়া ও প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য উত্তরণ অক্সিজেন ব্যাংকের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম রয়েছে। উক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে কোভিড রোগীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে চালু করা হয় অ্যাম্বুলেন্স সেবা। বর্তমানে উত্তরণ অক্সিজেন ব্যাংকে ৯৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আনুষঙ্গিত উকরণসহ সম্পূর্ণ ব্যবহার উপযোগী আছে। এ ছাড়া সংগ্রহে আছে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ৭৫৮ জন রোগিকে অক্সিজেন সেবা এবং ২৬ জন রোগিকে অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উত্তরণ অক্সিজেন ব্যাংকের পক্ষ থেকে হটলাইন নাম্বারও খোলা হয়েছে। যার নম্বর- ০১৯৩৭-৫৯৪৪৬৮ এবং ০১৯৫৪-১৪৪৪৫৩। রাত-দিনের যেকোনো সময় যেকোনো দিন তাদের হটলাইন নাম্বারে ফোন করলেই রোগীর বাড়িতে পৌঁছে যাবে অক্সিজেনসহ অ্যাম্বুলেন্স।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের সহযোগী হিসেবে তারা এসব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।’
এই কার্যক্রমকে আরো বেগবান ও জনগণের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দিতে সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি নাগরিক সমাজ এবং বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

তালা উপজেলার দাসকাটি গ্রামের ওহাব গাজীর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, নোয়াকাটি গ্রামের মৃত শেখ চান মিয়ার স্ত্রী পারুল বেগম, ভবানীপুর গ্রামের মায়া রাণী, আশাশুনীর শ্রীউলা গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী তাছলিমা সুলতানাসহ অনেকেই বলেন, ‘উত্তরণ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করেছে। করোকালীন তাদের এ সেবার কথা চিরদিন মনে থাকবে বলে জানান তারা।’

এ বিষয়ে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজীব সরদার বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ শুরুর সময়ে অর্থাৎ বিগত বছরের এপ্রিল-মে মাসে উত্তরণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করেছিল। চলতি বছর করোনার প্রাদূর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় উত্তরণ তাদের কার্যক্রম আরো বেগবান করে। এ বছরও মাস্ক বিতরণসহ সংস্থাটি বিনামূল্যে অক্সিজেন ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করাসহ তাদের মহতী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।’

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তারিফ-উল-হাসান বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে অত্র এলাকায় কাজ করে যাচ্ছে উত্তরণ। এই কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে সরকারের পাশাপাশি সংস্থার কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’