সাতক্ষীরার কলারোয়ার ১০ ইউপি নির্বাচনে ১৩ চেয়ারম্যান ও ১৯ মেম্বর প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার || থাকলেন যারা
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত আসন্ন কলারোয়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ১৯ জন মেম্বর প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর পদের কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।
বুধবার (২৪ মার্চ) প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলারোয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মনোরঞ্জন বিশ্বাস।
তিনি জানান, ‘১০টি ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেন চেয়ারম্যান পদে ৩৮ জন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১২৪ জন ও সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩৮৬ জন।’
উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টি ইউনিয়নে আগামি ১১ এপ্রিল ভোটগ্রহণ হবে।
নির্বাচন অফিসার মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, ‘চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন ২নং জয়নগর ইউনিয়ন জামায়াত নেতা শওকত আলী ও আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমান, ৩নং কয়লা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ ইমরান হোসেন, জি এম জাহাঙ্গীর হোসেন ও বাবু আহমেদ, ৫নং কেঁড়াগাছি ইউনিয়নে বিএনপি নেতা মফিজুল ইসলাম রানা, ৬নং সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম ও অধ্যাপক আবদুর রহিম, ৭নং চন্দনপুর ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা ডাক্তার রমজান আলী ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, ৯নং হেলাতলা ইউনিয়নে বিএনপি নেতা সরদার মুনছুর আলী ও আবু জাফর এবং ১২নং যুগিখালী ইউনিয়নে মনিরুজ্জামান।’
তিনি আরো জানান, ‘সাধারণ ওয়ার্ডের মেম্বর পদে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন জয়নগরে ১জন, জালালাবাদে ৪জন, কয়লায় ২জন, লাঙ্গলঝাড়ায় ২জন, কেঁড়াগাছিতে ৩জন, সোনাবাড়িয়ায় ২জন, হেলাতলায় ১জন, দেয়াড়ায় ২জন ও যুগিখালীতে ২জন সহ সর্বমোট ১৯জন।’
এর আগে চেয়ারম্যান প্রার্থী জালালাবাদ ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ মনোনীত আমজাদ হোসেন ও সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহিমের মনোনয়নপত্র ব্যাংকে ঋণখেলাপির কারণে সাময়িক বাতিল হলেও আপিলে তাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।
নির্বাচন অফিসার মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, ১০টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেন ১নং জয়নগর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫জন তারা হলেন- আওয়ামীলীগ মনোনীত শামছুদ্দীন আল মাসুদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিদ্দিকুর রহমান, জয়দেব কুমার সাহা, বিশাখা সাহা ও আব্দুল আজিজ, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১৫জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪০জন, ২নং জালালাবাদ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩জন তারা হলেন- আ.লীগের অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহাফুজুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১৪জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪০জন, ৩নং কয়লা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩জন তারা হলেন- আওয়ামীলীগের আসাদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.রফিক ও শেখ সোহেল রানা, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১০জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩১জন, ৪নং লাঙ্গলাঝাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২জন, তারা হলেন- আওয়ামীলীগের আবুল কালাম ও স্বতন্ত্র নুরুল ইসলাম, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১২জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৭জন, ৫নং কেঁড়াগাছি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩জন, তারা হলেন- আওয়ামীলীগের ভূট্টোলাল গাইন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মারুফ হোসেন ও এসএম আফজাল হোসেন হাবিল, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১০জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৫জন, ৬নং সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪জন, তারা হলেন- আওয়ামীলীগের বেনজির হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম শহিদুল ও মো.আকবর ও আলমগীর আজাদ, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১২জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪৭জন, ৭নং চন্দনপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩জন তারা হলেন- আওয়ামীলীগের মনিরুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ ও ডালিম হোসেন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ৯জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪৭জন, ৯নং হেলাতলা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫জন, তারা হলেন- আওয়ামীলীগের আনছার আলী সরদার, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তালেব সরদার, মাজেদ বিশ্বাস, ইকবাল হোসেন ও মোয়াজ্জেম হোসেন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১৮জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৮জন, ১১নং দেয়াড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৬জন, তারা হলেন- আওয়ামীলীগের মাহবুবুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন, মিনাজ উদ্দিন, আবু বককার সিদ্দীক, নাজমা পারভীন ও আব্দুল মান্নান, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১২জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪৫জন, ১২নং যুগিখালী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪জন, তারা হলেন- আওয়ামীলীগের রবিউল হাসান, স্বতন্ত্র প্রার্থী এরশাদ আলী, আবুল বাশার ও ওজিয়ার রহমান, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১২জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৬জন।’
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ‘২৫ মার্চ প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে, সেদিন থেকেই বিধি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারবেন চূড়ান্ত প্রার্থীরা।’
আসন্ন ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫জন সরকারি কর্মকর্তাকে ২টি করে ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- ১নং জয়নগর ও ২নং জালালাবাদ ইউনিয়নে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো.নুরে আলম, ৩নং কয়লা ও ৯নং হেলাতলা ইউনিয়নে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মনোরঞ্জন বিশ্বাস, ৪নং লাঙ্গলঝাড়া ও ৫নং কেঁড়াগাছি ইউনিয়নে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম, ৬নং সোনাবাড়িয়া ও ৭নং চন্দনপুর ইউনিয়নে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল হামিদ এবং ১১নং দেয়াড়া ও ১২নং যুগিখালী ইউনিয়নে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার এসএমএ সোহেল।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, ‘আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটার রয়েছে ১নং জয়নগর ইউনিয়নে ১২৭৫৫জন, এর মধ্যে পুরুষ ৬৩৪৯ ও মহিলা ৬৪০৬, ২নং জালালাবাদ ইউনিয়নে ১৫৬১২জন, এর মধ্যে পুরুষ ৭৮৮০ ও মহিলা ৭৭৩২, ৩নং কয়লা ইউনিয়নে ৭৫৭৪জন, এর মধ্যে পুরুষ ৩৭৬১ ও মহিলা ৩৮১৩, ৪নং লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নে ৯৬২৭জন, এর মধ্যে পুরুষ ৪৭৪১ ও মহিলা ৪৮৮৬, ৫নং কেঁড়াগাছি ইউনিয়নে ১৯২২৪জন, এর মধ্যে পুরুষ ৯৬৬২ ও মহিলা ৯৫৬২, ৭নং চন্দনপুর ইউনিয়নে ২২২০৫জন, এর মধ্যে পুরুষ ১১১৬৭ ও মহিলা ১১০৩৮, ৯নং হেলাতলা ইউনিয়নে ১৮১৫১জন, এর মধ্যে পুরুষ ৯০৯৮ ও মহিলা ৯০৫৩, ১১নং দেয়াড়া ইউনিয়নে ১৭৯৮৭জন, এর মধ্যে পুরুষ ৯০৪৮ ও মহিলা ৮৯৩৯ এবং ১২নং যুগিখালী ইউনিয়নে ১৩৪৪৬জন, এর মধ্যে পুরুষ ৬৭৬৯ ও মহিলা ৬৬৭৭জন।’
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জামায়াত ঘরণার নেতা রয়েছেন। রয়েছেন আ.লীগের মনোনয়ন না পাওয়া বর্তমানের ২জন চেয়ারম্যান ও ১জন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তারা হলেন লাঙ্গলঝাড়ার বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও কেঁড়াগাছির বর্তমান চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিল এবং জালালাবাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। আবার গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনয়নে ধানেরশীষ প্রতীক পাওয়া প্রার্থীও রয়েছেন। তারা হলেন সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের এসএম শহিদুল ও দেয়াড়ার ইব্রাহিম হোসেন। এর বাইরে সরাসরি জামায়াত ঘরণার নেতা হেলাতলার আবু তালেব সরদারও রয়েছেন। আবার সবগুলো ইউনিয়নে বেশিরভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থীই সরাসরি আওয়ামীলীগের স্থানীয় ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাও রয়েছেন।
‘নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন’- এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, ‘যোগ্য প্রার্থীকেই তারা ভোট দিতে চান। নির্বাচন মূলত সকল ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠির তথা সার্বজনীন আনন্দ উৎসব। সেই উৎসব যেনো অটুট থাকে। হার-জিত যেটাই হোক, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা থাকাটা জরুরী। আমরা সবাই কলারোয়ার সন্তান, দিন শেষে আমরা আমরা-ই।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন