সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে শিক্ষক স্ত্রী কর্তৃক বেকার স্বামীকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর বাজার এলাকার রওশান কাগুচীর ভাড়া বাসায় স্ত্রী মহুহা দেবনাথ (৩৫) কর্তৃক স্বামী সুজন কুমার নাথ (৪২) কে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠছে।

এ ঘটনায় সুজন কুমার নাথ কালিগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত মঙ্গলবার (১১জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে কৃষ্ণনগর বাজার এলাকার ভাড়া বাসায় মহুহা দেবনাথ তার স্বামী সুজন কুমার নাথকে হত্যার উদ্দেশ্য চেতনা নাশক খাওয়ায়। সুজন চেতনা নাশকের প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্ত্রী মহুয়া দেবনাথ তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু সুজনের চিৎকারে স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়।

গুরুতর অসুস্থ সুজন নাথ চিকিৎসা শেষে গত ১৭ জুলাই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ভাড়া বাসার মালিক রওশান কাগুচী জানান, সুজন মহুয়া দম্পতির মধ্য প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হত। ঘটনার দিন মহুয়া দেবনাথের ফোন পেয়ে বাসায় এসে সুজন কুমার নাথকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান।

এ ব্যাপারে সুজন নাথ বলেন, তার স্ত্রী তাকে প্রায়ই শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করত। এর আগে কয়েকবার তাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছিল স্ত্রী মহুয়া দেবনাথ।

সুজন নাথের মা জানান, তার ছেলের বউ মহুয়া তার ছেলেকে প্রায়ই নির্যাতন করত এবং সর্বশেষ তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। তিনি তার ছেলে সুজন নাথকে এ ধরনের দুর্ধর্ষ স্ত্রীর নিকট থেকে উদ্ধার এবং স্ত্রী মহুয়াকে শাস্তির দাবি জানান।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়- খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চি়ংড়া গ্রামের তুলসী দেবনাথের বিধবা কন্যা মহুয়া দেবনাথের সাথে প্রেমের মায়ায় জড়িয়ে পাইকগাছা উপজেলার‌ কৃষ্ণনগরের সোনাতন নাথের পুত্র সুজন নাথের সাথে ২০১৫ সালে বিয়ে হয়। বিয়েতে সুজনের বাবা মায়ের দ্বিমত থাকলেও ছেলের আকুতিতে শেষ পর্যন্ত মহুয়ার দেবনাথের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে। বিয়ের পর সুজনের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করার সুবাদে ঢাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকে এ দম্পতি।

এর মধ্যে ২০২২ সালে মহুয়া দেবনাথ এনটিআরসিএ এর মাধ্যমে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের কালিকাপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসায় ইংরেজি শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন। চাকুরির সুবাদে কৃষ্ণনগর বাজার এলাকায় রওশান কাগুচীর বাসা ভাড়া করে সেখানে অবস্থান করে মহুয়া। অন্যদিকে স্বামী সুজন দেবনাথ ঢাকায় কোম্পানিতে চাকুরী করায় মহুয়া অসস্তিতে পড়ে এবং সুজনকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ও প্রলোভন দেখাইয়া চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় এবং দুজনে একসাথে কৃষ্ণনগরের ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকে। কর্মহীন স্বামী মহুয়ার কাছে আস্তে আস্তে বোঝা হয়ে উঠে এবং স্বামীর উপর বিভিন্ন সময় নির্যাতন চালাতে শুরু করে। নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর উপর অভিমান করে পূর্বের কর্মস্থলে ফিরে যায় সুজন। কিছুদিন যেতে না যেতেই সুজন নাথ স্ত্রীর কাছে পুনরায় ফিরে আসে। কিন্তু প্রেমিক পুরুষ সুজনের অভিমানে স্ত্রী মহুয়ার মনে দাগ কাটেনি। সে পূর্বের ন্যায় স্বামীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে। লোক লজ্জার ভয়ে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করে স্ত্রীর সাথে বসবাস করতে থাকে সুজন। এর মধ্যে গত ১১ জুলাই স্বামী স্ত্রীর বাগ বিতাণ্ডতা হয় এবং মহুয়া তাকে হত্যার উদ্দেশ্য চেতনা নাশক প্রয়োগ ও শ্বাষরোধ করার চেষ্টা করে।

তবে শিক্ষিকা স্ত্রী মহুয়া তার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান তার স্বামী সুজন নাথ আত্নহত্যার চেষ্টা করলে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। আরও জানায় তার স্বামী অপরিস্কার-অপরিচ্ছন থাকে এবং তাদের দত্তক নেওয়া ২২ মাস বয়সী একটি ছেলে আছে যার প্রতি সুজন নাথ মোটেও যত্নশীল না হওয়ার কারনে তাদের মধ্য প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ হত। তার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট।

গত ১১ জুলাইয়ে সুজন নাথের অসুস্থতার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে এবং সেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্য ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছে।