সামাজিক সংগঠনগুলোর এগিয়ে আসা জরুরি করোনা স্বাস্থ্যবিধির প্রচারে

মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে জনগণকে উৎসাহিত করতে সামাজিক সংগঠনগুলো আগের মতো এগিয়ে আসছে না! ইউরোপের মতো বাংলাদেশেও করোনার সেকেন্ড ওয়েভের (দ্বিতীয় ঢেউ) আশঙ্কা করছেন রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা। এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের পরিসংখ্যান খুব বেশি উদ্বেগজনক না হলেও যেকোনো সময় এর তীব্রতা বাড়তে পারে। এ কারণে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে নির্দেশনা ও পরামর্শ দিলেও সাধারণ জনগণ তা মানছে না। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতরা উদ্বিগ্ন।

দেশে করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি, ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে জানতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের একার প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। আইন প্রয়োগ করে মানুষকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করা যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। এক্ষেত্রে সামাজিক সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

তিনি বলেন, ২০০০ সালে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণরোধে এডিসমশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস, বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও মানুষকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অবহিত করতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় স্বেচ্ছাসেবীরা ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন করতে লিফলেট তৈরি করে মানুষের মাঝে বিতরণ করেছিল। এতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যায়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে গত আট মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশে করোনার সংক্রমণ অব্যাহত থাকলেও সামাজিক সংগঠনগুলোকে তেমন তৎপর হয়ে কাজ করতে দেখা যায়নি। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে সামাজিক সংগঠনগুলো সক্রিয় হলে সকলেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

করোনাভাইরাসের গতিপ্রকৃতি কেমন জানতে চাইলে ড. আলমগীর বলেন, ভাইরাসের সিকোয়েন্স পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- ভাইরাসটির তীব্রতা না বাড়লেও একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে সংক্রমণের হার বেড়েছে।

তিনি বলেন, গত দুই-তিন মাস ধরে করোনা শনাক্তের হার ১০ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এটা সাত-আটে এ নামলে তবেই সংক্রমণ কমেছে বলা যাবে।

তিনি আরও বলেন, রাস্তাঘাটে অধিকাংশ মানুষ যেভাবে মাস্ক ছাড়া ও জনসমাগমে ফ্রি স্টাইলে চলাফেরা করছে তাতে যেকোনো সময় সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধি পেতে পারে। এক্ষেত্রে সামাজিক সংগঠনগুলো নিজস্ব উদ্যোগে মানুষের মাঝে বিনামূল্যে মাস্কবিতরণসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালালে তা সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেবে। করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রমে অধিকতর সফলতা আসবে।

করোনা ভ্যাকসিন এলে প্রতিরোধ কার্যক্রমে শতভাগ সফলতা আসবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আলমগীর হোসেন বলেন, আগামী বছরের মে-জুনের আগে ভ্যাকসিন আসতে পারে। আর ভ্যাকসিন এলেও শতভাগ সফলতা আসবে না। সেক্ষেত্রে শতভাগ সংক্রমণরোধ করা যাবে। এক্ষেত্রে শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বিশেষ করে ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক পরিধান ভ্যাকসিনের মতো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি ১১৫টি ল্যাবরেটরিতে করোনা শনাক্তে সর্বমোট ২৫ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৯টি নমুনা পরীক্ষা করে চার লাখ ২৮ হাজার ৯৬৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়।

এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ছয় হাজার ১৫৯ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ চার হাজার ৭৪১ জন ও নারী এক হাজার ৪১৮ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিন লাখ ৪৬ হাজার ৩৮৭ জন।