সিনহা কাঠগড়ায় তুলবেন মনে হয়েছিল আইনমন্ত্রীর

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরি ও শৃঙ্খলা বিধিমালা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে বিরোধের অবসানের কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ নিয়ে সদ্য পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নানা বক্তব্য ও আচরণের কথা তুলে ধরে তিনি জানিয়েছেন, সে সময় তার মনে হয়েছিল তাকে কাঠগড়ায় তোলা হতে পারে।

শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী। সারাদেশের বিচারকদের নিয়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধি প্রকাশ নিয়ে পদত্যাগী প্রধান বিচারপতির নানা মন্তব্যকে ঝড়-তুফানের মতো বক্তব্য বলেও আখ্যা দেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাকে কোনোভাবেই বোঝানো যাচ্ছিল না, এটা মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ক্ষমতা। এ ক্ষমতা আইন মন্ত্রণালয় প্রধান বিচারপতিকে দিতে পারে না। যাই হোক, আল্লাহর বিশেষ রহমতে সেই অবস্থার অবসান হয়েছে।’

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বারবার তার নির্দেশনা অনুসারে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেলকে। কিন্তু সরকার বারবার সময় নিয়েছে। পরে চলতি বছরের মাঝামাঝি যে খসড়া পাঠানো হয় গত ৩০ জুলাই তা ফিরিয়ে দেন সিনহা। এরপর এ নিয়ে আলোচনার জন্য আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডাকেন সে সময়ের প্রধান বিচারপতি। কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে যাননি আইনমন্ত্রী। পরে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিনহা।

সিনহা সে সময় অভিযোগ করে আসছিলেন, বিচারালয়ে দ্বৈত শাসন চলছে। এ ছাড়াও তার নানা বক্তব্য তখন নিয়মিত সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়ে আসতো।

আইনমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, ‘এ নিয়ে সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি মহোদয় যে ঝড়-তুফান তুলেছিলেন তা আপনাদের সকলেরই জানা আছে।’

এই বিষয়টি নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তলব করে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন। সেই বিষয়টি তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, মনে হচ্ছিল আমার মন্ত্রণালয়ের সচিবের মত আমাকেও কখন যেন আদালত তলব করে কাঠগড়ায় দাঁড় করান।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (সিনহা) কোনোভাবেই বোঝানো যাচ্ছিল না, এটা মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ক্ষমতা। এ ক্ষমতা আইন মন্ত্রণালয় প্রধান বিচারপতিকে দিতে পারে না। যাই হোক, আল্লাহর বিশেষ রহমতে সেই অবস্থার অবসান হয়েছে।’

সর্বশেষ গত মাসের ৫ নভেম্বর বিষয়টি নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ গেজেট প্রকাশে আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেন।

গত ১০ নভেম্বর সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগের ছয় দিন পর আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রীর বৈঠকে এই বিষয়ে ঐক্যমত হয়। এরপর ২১ নভেম্বর আইনমন্ত্রী জানান, গেজেটের খসড়াটি সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়েছে। গত বুধবার তিনি জানান, খসড়াটি সুপ্রিমকোর্ট থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে ফিরে এসেছে। বর্তমানে খসড়াটি এটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে রয়েছে বলে গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী।

চলতি সপ্তাহেই এই বিধিমালা প্রকাশ হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১১৫ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করেন, তাদের নিয়োগ দেন। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে তাকে শৃঙ্খলা বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।…যিনি বিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করেন, বিচারকদের নিয়োগ দেন তিনিই তাদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন করবেন- এটাই স্বাভাবিক।’