সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের মুদি দোকানির সন্তান হাফেজ আবু রাহাতের বিশ্ব জয়

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের চর কৈজুরি গ্রামের মুদি দোকানি মোঃ রমজান আলীর পুত্র হাফেজ আবু রাহাত। মোঃ রমজান আলীর ৪ পুত্রের মধ্যে আবু রাহাত তৃতীয়।

চমৎকার প্রতিভার অধিকারী আবু রাহাত মাত্র ৯ মাসেই হয়েছিলেন কোরআনের হাফেজ। একেবারে অজপাড়াগাঁ থেকে উঠে আসা হাফেজ আবু রাহাত দেশের মধ্যে প্রতিভার ঝলক দেখানোর পর এবার বিশ্ব জয় করেই ঘরে ফিরছেন।

হাফেজ আবু রাহাতের পিতা মোঃ রমজান আলী পেশায় একজন মুদি দোকানি। গ্রামের বাড়িতেই একটি ছোট্ট ঘর তুলে দোকান খুলে বসেছেন। এই দোকান থেকে যা আয় হয় তাই দিয়েই চলে সংসার। আর আবু রাহাতের মা একজন আদর্শ গৃহিণী। সারাদিন গৃহস্থের কাজ করেই দিন কেটে যায় মায়ের। আবু রাহাতের কলেজ পড়ুয়া বড় দুই ভাই পড়াশোনার পাশাপাশি বাবাকে দোকানে সহযোগিতা করেন। আর রাহাতের একেবারে ছোট যে ভাইটি সে গুড়িগুড়ি পায়ে হেটে সারা বাড়ি মুখরিত করে রাখে।

আবু রাহাতের প্রতিবেশি ও পরিবারের সদস্যরা জানান, ছোটবেলা থেকেই আবু রাহাত অত্যন্ত মেধাবী। একেবারে নিভৃত পল্লীর আলোবাতাসে বেড়ে ওঠা রাহাতের শৈশবে দূরন্তপনা থাকলেও ছিলোনা দুষ্টুমি। খুব সাধাসিধে রাহাত বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনার বুকে লাফিয়ে বেড়িয়েই ধুয়ে নিয়েছেন দূরন্ত শৈশব। ছোটবেলায় প্রথমে স্থানীয় একটি কেজি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেও মাত্র একবছরে মাথায়ই রাহাতকে নিয়ে এসে মাদরাসায় দিয়ে দেন তার পিতা। আর মাদরাসায় ভর্তি করার মাত্র ৯ মাসেই পুরো কুরআন হেফজো করেন।

মূলত আবু রাহাতের পিতা-মাতা স্বপ্ন দেখতেন মৃত্যুর পর যেন তার নিজের সন্তান জানাজা করেন। সেই জন্যই তার ৪ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান আবু রাহাতকে ২০১৭ সালে স্থানীয় গোপালপুর আল মদিনাতুলমনাওয়ারা হাফিজিয়া মাদরাসায় ভর্তি করে দেন। অসম্ভব প্রতিভার অধিকারী এই আবু রাহাত মাত্র ৯ মাসেই কোরআনের হাফেজ হন।

এরপর রাহাতের চমৎকার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে মাদ্রাসার শিক্ষকরা আবু রাহাতের বাবাকে পরামর্শ দেন ঢাকায় ভর্তি করে দিতে। শিক্ষকদের পরামর্শ অনুযায়ী ছোট্ট রাহাতকে গ্রাম থেকে নিয়ে গিয়ে ২০১৮ সালে রাজধানী ঢাকায় কোরআনের আলো ইন্সটিটিউটে ভর্তি করে দেন পিতা মোঃ রমজান আলী।

এসময় ছোট্ট রাহাত পিতা-মাতাকে ছেড়ে দূরে থাকতে অনেক কান্নাকাটি করতো, চলে আসতে চাইতো বাড়িতে। রাহাতের পিতা মাতা শত কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে রাহাতকে বুঝিয়ে সেখানেই থাকতে বলেন। ওখানে পড়াশোনা করা অবস্থায় ২০২০ সালে এনটিভির পিএইচপি কোরআনের আলো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরবর্তীতে ঢাকার মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এখান থেকেই হাফেজ আবু রাহাত কুয়েত আমিরের তত্ত্বাবধানে দেশটিতে অনুষ্ঠিত ১১তম বিশ্ব কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। দেশটিতে তিন ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় ১১৭টি দেশকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন হাফেজআবু রাহাত। স্থানীয় সময় বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকালেসালওয়ার নিকটবর্তী হোটেল রেজিন্সিতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় তিন ক্যাটাগরির চুড়ান্ত বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। অনূর্ধ্ব ১৩ বছরের গ্রুপে তৃতীয় স্থান অর্জন করায় আবু রাহাতকে পুরস্কার ও সম্মাননা দেওয়া হয়।

এদিকে পবিত্র কোরআনের হাফেজ আবু রাহাতের তৃতীয় হওয়ার খবর পেয়ে আবু রাহাতের পিতা মোঃ রমজান আলী এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেন। সেই সাথে শাহজাদপুরের সন্তান আবু রাহাতের এই অর্জনে বিভিন্ন মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়ে আনন্দে উৎফুল্ল্য হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। এখন কৈজুরি ইউনিয়নবাসী ও শাহজাদপুরের মানুষ এলাকার সম্মান বয়ে আনা বিশ্বজয়ী হাফেজ আবু রাহাতকে দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন ।

এ বিষয়ে কথা হয় হাফেজ আবু রাহাতের পিতা মোঃ রমজান আলীর সাথে। তিনি জানান,’ আমি বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে শুনেছি, মৃত্যুর পর আপন সন্তান জানাজা পড়ালে আল্লাহ কবর আজাব মাফ করে দেন। সেই থেকেই স্বপ্ন দেখতাম আমার সন্তানকে হাফেজ বানাবো। আল্লাহ আমার স্বপ্ন পূরন করেছেন। দোয়া করবেন আবু রাহাতকে যেন আল্লাহ অনেক বড় আলেম হিসেবে কবুল করেন।’