সৌদি জোটকে সংলাপের প্রস্তাব দিলেন সালেহ

ইয়েমেন সংকট সমাধানের একটি ক্ষীণ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর দেওয়া আলোচনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট।

এত দিন ধরে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রেসিডেন্ট আবদ-রাবু মানসুর হাদির (হাদি বাহিনী) বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চলছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহর সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের। এবার হাদির বাহিনীকে সহায়তাকারী সৌদি জোটের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ায় হুতিদের সঙ্গে সালেহর সম্পর্কে ভাঙন ধরেছে। দুই পক্ষের মধ্যে হামলা-পাল্টাহামলা ও হতাহতের খবরও পাওয়া গেছে।

এক টেলিভিশন ভাষণে শনিবার সালেহ বলেন, জোট বাহিনী যদি ইয়েমেনের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে তাদের হামলা বন্ধ করতে রাজি থাকে তাহলে তিনিও ‘পাতা ওল্টাতে’ প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলোর ভাই এবং জোটের প্রতি আমি আগ্রাসন বন্ধ করে অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বিমানবন্দরগুলো খুলে দেওয়ার মাধ্যমে খাদ্য সহায়তার পথ তৈরি করে দিন। এতে করে আহতরা বাঁচার সুযোগ পাবে। আমরাও প্রতিবেশীসুলভ আচরণের মধ্য দিয়ে নতুন পাতা ওল্টাব। ’ তিনি আরো বলেন, ‘ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই আমরা তাদের সঙ্গে চুক্তি করব।

এখন পর্যন্ত ইয়েমেনের সঙ্গে যথেষ্ট হয়েছে। ’
পরে সৌদি জোটের তরফ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে সালেহর অবস্থানকে স্বাগত জানানো হয়। প্রেসিডেন্ট হাদিও এই বিবৃতির প্রশংসা করে বলেন, হুতিদের বিরুদ্ধে সালেহর সঙ্গে কাজ করতে তিনি প্রস্তুত। বিদ্রোহীদের অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নতুন যুগের সূচনা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগেই অবশ্য ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা সালেহকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে অভিযুক্ত করে। বিদ্রোহীদের নেতা আবদুল মালিক আল-হুতি বলেন, সালেহ সৌদিদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। আগেই তাঁদের এমন সন্দেহ ছিল। এখন বিষয়টি স্পষ্ট হলো। তিনি আরো বলেন, ‘এটা বিশ্বাসঘাতকতা। খুবই লজ্জাজনক। ’ সালেহর প্রস্তাবকে নিজেদের জোটের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

সালেহ ও হুতি গ্রুপের মধ্যে রাজধানী সানার হাদ্দা জেলায় গত বুধবার থেকেই লড়াই চলছে। এই জেলায় সালেহর পরিজন বাস করে। গত শনিবারও এই লড়াই অব্যাহত ছিল। রেড ক্রস জানায়, এই সংঘর্ষে কয়েক ডজন লোক নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে। সৌদি জোট গতকাল হুতি বিদ্রোহীদের এই অবস্থান লক্ষ্য করে বোমা ফেলে।

২০১৪ সালের শেষ দিকে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা সানায় গিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলে সংকট শুরু হয়। সে সময় সালেহর সমর্থকরাও হুতিদের সহায়তা করে। প্রেসিডেন্ট হাদি সানা থেকে পালিয়ে এডেনে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানেই অন্তর্বর্তীকালীন রাজধানী গড়ে তোলা হয়। পরের বছর সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনী হাদির পক্ষে এই লড়াইয়ে যোগ দেয়।

জাতিসংঘের হিসাবে, এই লড়াইয়ে আট হাজার ৬৭০ জনের বেশি লোক নিহত এবং প্রায় ৫০ হাজার লোক আহত হয়েছে। এরপর সৌদি জোট যে অবরোধ আরোপ করে তাতে অন্তত দুই কোটি লোকের মানবিক সহায়তা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যেই কলেরা ছাড়িয়ে পড়লে ওষুধের অভাবে দুই হাজার ২১১ জন মারা যায়। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।