হাকিম নড়বে, হুকুম নড়বে না : সিইসি

আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সৎ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, হাকিম নড়বে তবু হুকুম নড়বে না।

নির্বাচন ভবনে ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে রোববার এসব কথা বলেন তিনি।

সিইসি বলেন, ‘নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে আপনাদের দায়িত্ব হবে রাজনৈতিকভাবে সৎ। সবাইকে সমান চোখে দেখা। কারো জন্য বেশি দেখা, কারো জন্য কম দেখা – এ ধরনের আচরণ কখনো আপনারা করবেন না।’

সিইসি বলেন, ‘কথায় আছে, হাকিম নড়ে কিন্তু হুকুম নড়ে না। এরকম যেন হুকুম হয়, যেটা নড়বে না কখনো। এই জিনিসগুলো আপনাদের দেখতে হবে।’

কেএম নূরুল হুদা বলেন, ‘কঠোরভাবে যেটা দেখবেন, প্রিজাইডিং অফিসার যেন নিরাপদে থাকে। প্রিজাইডিং অফিসারের ওপর প্রচুর চাপ থাকে। তার ওপরে সব দায়িত্ব থাকে ওই এলাকার। তাদেরকে সহযোগিতা করা আপনাদের দায়িত্ব, তাদেরকে কখনো পরিচালনা করতে যাবেন না। তাহলে ভুল হয়ে যাবে। তারা যখন যে সহযোগিতা চাইবে, সেটা করবেন। সহযোগিতা চাওয়ার পরিস্থিতি না থাকলে সেখানে আপনাদের বিবেক-বিবেচনার প্রয়োগ করবেন।’

কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘একটা কথা বলা হয়ে থাকে নির্বাচন আইনানুগ হতে হবে। এ কথাটা অবশ্যই ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। আইনকে নিজস্ব পথে চলতে না দিলে নির্বাচন কখনো আইনানুগ হতে পারে না। সুতরাং যখনই আমরা বলব, নির্বাচন আইনানুগ হতে হবে তখন এর সঙ্গে এও বলতে হবে, আইনকে তার নিজস্ব পথেই চলতে দিতে হবে। এটা করার দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের। নিরপেক্ষভাবে আইনের প্রয়োগ না করলে সে আইন- আইন নয়, কালো আইন।’

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব অপরিসীম। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটদের সমান দায়িত্ব। যারা নির্বাচন আচরণ বিধি লঙ্ঘন করবেন তারা যারাই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আপনারা (ম্যাজিস্ট্রেটদের) কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

জ্যেষ্ঠ এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমরা শপথ গ্রহণ করলেও নির্বাচন সংশ্লিষ্টরাও আমাদের নির্বাচনী শপথের অংশিদার। শপথ আমরা গ্রহণ করলেও নির্বাচন আমরা করি না। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনারা (ম্যাজিস্ট্রেট)। আপনাদের মধ্যে শপথ সঞ্চালিত হয়ে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি অংশগ্রহণমূলক, পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন হবে। আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে, সব রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। সারা জাতি এই নির্বাচন নিয়ে উদ্দিপ্ত, উচ্ছ্বাসিত। এই উদ্দিপনাকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে। নির্বাচন অবশ্যিই নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য হতে হবে।

তিনি বলেন, এতে আপনাদের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেনা বাহিনীও আপনাদের অধীনে দায়িত্ব পালন করবেন। শুধু দেশ নয়, বিশ্ববাসীও আমাদের জাতীয় নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে।

নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও সবার জন্য মান সুযোগ তৈরি করার জন্য আপনাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব পালনের সময় অতি-উৎসাহী হবেন না। আবার নির্লিপ্তও থাকবেন না।’

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশে আছে। তবে পক্ষপাতমূলক আচরণ খাটো করে দেখবে না কমিশন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সেনা বাহিনী আপনাদের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবে। আপনারা তাদেরকে যথা সময়ে নির্দেশনা দেবেন।’

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু অবাধ ও আইনানুগ করতে পারি, এ ক্ষেত্রে আপনাদের কর্মকাণ্ড একদম নিরপেক্ষ থাকতে হবে। কোনো রকম প্রতিহিংসার সুযোগ যাতে না থাকে। আপনাদের আদেশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালাবে। এ ক্ষেত্রে আপনাদের জুডিশিয়াল মাইন্ড প্রয়োগ করতে হবে।’

এ সময় অন্যদের মধ্যে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।