হাসিনার সঙ্গে আমার বিরোধ নেই, মূল্যবোধের পার্থক্য : ড. কামাল

ড. কামাল হোসেনের চোখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন স্বৈরাচারী শাসক, যিনি তার স্বাধীনতার নায়ক পিতার আদর্শের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

ভারতের ওয়ার্ল্ড ইজ ওয়ান নিউজ (ডব্লিউআইওএন) চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মনোভাবই প্রকাশ করেছেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক।

চ্যানেলটির সদর দপ্তর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে।

ডব্লিউআইওএনের ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছে শুক্রবার।

বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর ৮২ বছর বয়সী ড. কামাল রোববারের নির্বাচনে শেখ হাসিনার চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসা ঠেকাতে বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিবেন।

ডব্লিউআইওএন জানায়, ড. কামালের অভিযোগ, বহু ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হাসিনার আওয়ামী লীগ পদদলিত করছে। নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বন্দী ও আক্রমণ করা হচ্ছে।

ডব্লিউআইওএনকে ড. কামাল বলেন, ‘আমি কেবলমাত্র রাজনীতির বর্তমান অবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি। আমরা গণতন্ত্রকে সমর্থন করছি। গণতন্ত্রের জন্য ভোট দেয়ার প্রথম জায়গা ছিল পূর্ব বাংলা। আমরা বাঙ্গালিরা সবাই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমি বুঝতে পারছি না এই সরকার কেন এই কথাটা বুঝতে পারছে না।’

শেখ হাসিনার সঙ্গে তার মতপার্থক্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এটা শেখ হাসিনা আর আমার মধ্যে কোনও বিরোধ নয়। এটা হচ্ছে রাজনীতি। এটা সম্পূর্ণ টাকা আর পেশিশক্তির বিষয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবসময়ই যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমরা সেটাই জীবিত রাখতে চাই – এটা হচ্ছে মূল্যবোধ, আরও টাকা কিংবা আরও পেশিশক্তি অর্জন করা নয়।’

‘সংখ্যালঘু ইস্যুতে পার্টির মধ্যে ব্যাপক কুস্তাকুস্তি হয়েছে। ওরা পার্টির ছেলেদের পকেটে অস্ত্র দেয়ার পক্ষে ছিল, আমি তার বিরোধিতা করেছি। আমি কখনও রাজনীতির জন্য টাকা ব্যবহার করব না বা টাকা কামানোর জন্য রাজনীতিকে ব্যবহার করব না। এখন আমার ৮০ চলছে। আমার চেয়ে কত কম বয়সীরা এখন রাজনীতিতে এসেছে। আমি ভেবেছিলাম পিছনে থেকে দিকনির্দেশনা দিয়ে যাব। আগেও আমি কখনো পুরোটা সময়ের জন্য রাজনীতি করিনি। আমি শিক্ষকতা আর আইন পেশায় ছিলাম। এখন সবচেয়ে বাজে ব্যাপারটা হচ্ছে আপনি কত লাখ দিতে পারবেন। আগে এটা লাখের অংকে থাকলেও এখন এটা কোটি কোটিতে গিয়ে ঠেকেছে,’ বলেন তিনি।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি। বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধী ও সর্দার স্মরণ সিংহের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি। আমরা স্থলসীমান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। আপনাদের দার্জিলিং, ক্যালিম্পং আর শিলং আছে, শেখ মুজিবুর রহমান একটা হিল স্টেশন চেয়েছিলেন। মন্ত্রীরা মনে হলো এতে বিরক্ত হয়েছেন। পরে সবাই হাসিতে ফেটে পড়েন।’

কামাল হোসেন ১৯৯৮-২০০৩ এই পাঁচ বছর আফগানিস্তানে জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবেও কাজ করেছেন।

‘তালেবানদের যে প্রধান অস্ত্রটা দেয়া হয়েছিল তা হচ্ছে ‘দুর্নীতি’। তালেবানরা এটার পুরো ফায়দা তুলে নিচ্ছে। এর সর্বশেষ হচ্ছে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার। পাকিস্তানও এতে জড়িত এবং একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে ওদের সঙ্গে ডিল করা যেতে পারে। ট্রাম্পের মতো লোকের কোনও বিষয়েই কোনও বিচারবুদ্ধি নেই। উনি ভাবেন উনি সব বিষয়েই মনভোলানো চটক দেখিয়ে যাবেন এবং তিনি আফগানিস্তানের ক্ষতি করছেন। যদিও আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সরাসরি সীমান্ত নেই, তবুও আফগানিস্তানে ভারতের খুব গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে, এবং পুরো দক্ষিণ এশিয়ারও সেখানে স্বার্থ রয়েছে।’

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের প্রথম আইনমন্ত্রী হন ড. কামাল হোসেন এবং পরের বছর দেশের সংবিধান প্রণয়নে তিনি ভূমিকা রাখেন।