১৪ বছরেই গাঁজা-ইয়াবা ধরেছিল ঐশী

পুলিশ কর্মকর্তা বাবা মাহফুজুর রহমান ও মা স্বপ্না রহমানকে হত্যাকারী ঐশী রহমান ১৪ বছর বয়স থেকেই নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছিল। কিশোরী ঐশী সিসা, অ্যালকোহল, গাঁজা ও ইয়াবা সেবন করতো। এ কারণে সে ছিল আশাহীন ও সাহায্যহীন। আদালতের কাছে সে বলেছে, বাবা-মাকে হত্যার পর এ বিষয়ে তার কোনো অনুশোচনা নেই।

বাবা-মাকে হত্যার দায়ে ঐশীর মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি কমিয়ে সোমবার (৫ জুন) যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে রায় ঘোষণার আগে দেয়া পর্যবেক্ষণে ঐশীর মাদকাসক্ত বিষয়ে এসব কথা বলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

ঐশীর মামা-দাদি মানসিক রোগী ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন আদালত। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ঐশী রহমানের দণ্ড কমানোর জন্য তার পক্ষের আইনজীবীরা বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষও নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেছেন।

সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেখা যায়, একজন সন্তান কর্তৃক পিতামাতা হত্যাকাণ্ড সামাজিক অবক্ষয় ছাড়া আর কিছু নয়। তবে ঐশী রহমানের মানসিক পরীক্ষা এবং ডাক্তারি সনেদের পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর।’

আদালত আরো বলেন, ‘ঐশী রহমানের বাবা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা ছিলেন একটি প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাবা-মা দুজনেই ব্যস্ত থাকায় সে ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত। বাবা-মায়ের উচিত ছিল সন্তানকে সময় দেয়া। পিতামাতা সময় না দেয়ায় সে সচেতনতা এবং সুশাসন থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

ঐশী অ্যাজমা ও মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল এবং ঘটনার পর আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অপরাধ নেই। এসব বিবেচনায় নিয়ে ঐশী রহমানকে আমরা ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছি। কিন্তু সাজার ক্ষেত্রে তাকে বিবেচনা করে যাবজ্জীবন দণ্ড প্রদান করলাম।

এর আগে ঐশী রহমানকে ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর দুবার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। প্রত্যেক মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, অনাদায়ে দুই বছর কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর অন্যটি সরাসরি বাতিল হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরের দিন ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মশিউর রহমান রুবেল পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করেন ঐশী।