৮ ডিসেম্বর পলাশবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস

৮ ডিসেম্বর পলাশবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস। ৫১ বছর আগে শত্রুমুক্ত হয়ে বিজয় এসেছিল পলাশবাড়ীতে। স্থানীয়ভাবে দিনটি বেদনা বিঁধুর। হানাদার বাহিনী পতনের পর এলাকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। আনন্দে উদ্বেলিত কন্ঠে বিজয় উৎসবের কাফেলা ‘জয় বাংলা’-‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল পলাশবাড়ীর আকাশ বাতাস।

সেদিনের আজ অনেকেই বেঁচে নেই। বীরমুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অধিকাংশই পরলোকগত। পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে কত মানুষ নিহত হয়েছে। কত মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়েছে তার সঠিক তথ্য কেউ জানে না। হানাদার বাহিনী কথা বলতো বায়োনেট দিয়ে এবং হাসতো মেশিনগানের ব্রাশফায়ারে মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে তাজা রক্ত ঝড়িয়ে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫২ বছরে নির্দিষ্ট কিছু স্থান ছাড়া বহু গণকবর ও বধ্যভূমি এখন নিশ্চিহ্ন প্রায়।

ইতিমধ্যেই বহু গণকবর ও বধ্যভূমির নাম নিশানা মুছে ফেলা হয়েছে। সেখানে গড়ে উঠেছে আবাদি জমি ছাড়াও স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দালান-বাড়ি। অযত্নে অবহেলায় অনেক গণকবর আজ বন-জংগলে ঢাকা পড়েছে। দিন-মাস-বছর ও যুগ পেরিয়ে গণকবর গুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে লোক চক্ষুর অন্তরালে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্থানীয় পিয়ারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাকিন্তানী হানাদার প্রতিরোধ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। গোটা মার্চ মাস জুড়ে পলাশবাড়ী এলাকা ছিল উত্তাল। এই উত্তাল দিনগুলোতে পাকবাহিনী বীর সেনাসহ ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। পাকবাহিনী সেদিন পাবনা জেলার ঐতিহ্যবাহী নারিন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎসময়ের প্রধান শিক্ষক গর্বিত পিতা আব্দুল আজিজ ও রতœগর্ভা মাতা ফাতেমা বেগম দম্প্রতির বীর সন্তান লেফঃ রফিককে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাকবাহিনী। ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সবসম্পদ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী ভারতে শরণার্থী হয়ে প্রবেশ করেছিল এদেশীয় ৩৫ হাজার নর-নারী। তৎসময়ে স্থানীয় কালীবাড়ী বাজার ছাড়াও প্রত্যন্ত পল্লীর ২ কোটির্ধ্ব টাকা মূল্যের বাড়ী-ঘর জ্বালিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন সম্পদ বিনষ্ট করেছিল। পাকবাহিনীর নানা শিঁহরিত ও লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ চালানোর এক পর্যায়ে সেদিন পলাশবাড়ী এলাকা পাক হানাদার মুক্ত হয়। বিজয়ের উল্লাসে সেদিন ‘জয় বাংলা’-‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পলাশবাড়ীর আকাশ-বাতাস।

৮ ডিসেম্বর পাক হানাদার মুক্ত দিবস, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস যথাযথ পালনে উপজেলা প্রশাসন, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ছাড়াও অন্যান্য সংগঠন সমূহ বিভিন্ন পৃথক কর্মসূচি পালন করবে।