কেমন প্রতিক্রিয়া পাকিস্তানে?
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার পর পদত্যাগ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সর্বোচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তে নওয়াজের দল স্বাভাবিকভাবেই হতাশ। তবে দলের নেতারা এ-ও বলছেন, নওয়াজের দিন শেষ হয়ে যায়নি। তবে বিরোধী দলের নেতারা উল্লসিত।
নওয়াজের পদত্যাগ ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, তারকা, সাধারণ মানুষ। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই নওয়াজের পদত্যাগে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। কাউকে কাউকে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কেউ আবার এখনই বেশি খুশি হওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন।
পানামা পেপারসে ফাঁস হওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে নওয়াজ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় পাঞ্জাবের আইনমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ডনকে জানান, এটি ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) বা পিএমএল-এনের জন্য কঠিন সময়। তবে দলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নওয়াজ শরিফেরই থাকবে।
প্রায় একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব। রায়ের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নওয়াজের চেয়ার দরকার নেই। তাঁকে চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত করা হবে, এমন দিন বেশি দূরে নেই।
তবে সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ে আনন্দ প্রকাশ করে বিজয় উদ্যাপন করেছেন বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতারা।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মেহমুদ কোরেশি রায়ের পরপরই গণমাধ্যমকে বলেন, এটি ঐতিহাসিক রায়। আসুন, পাকিস্তানকে শক্তিশালী ও সন্ত্রাসমুক্ত করি। তিনি সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সেই সঙ্গে নওয়াজ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তকারী যৌথ তদন্ত দলকে (জেআইটি) ধন্যবাদ জানান।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা কামার জামান কাইরা বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় হয়েছে। এতে বিরোধী সব দলের ভূমিকা রয়েছে। তবে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এবং ইমরান খানের কৃতিত্ব বেশি। তিনি এ বিষয়টিকে আদালত পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। আইনি লড়াই লড়েছেন।
পিটিআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা জাহাঙ্গীর তারিন বলেন, আদালতের আজকের সিদ্ধান্ত পিটিআই এবং জাতির জয়। গণতন্ত্রের সেরা সময় এটি। আমি সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
জামায়াতে-ই-ইসলামির সিরাজুল হক বলেন, আদালত, সাংবাদিক, আইনজীবী, রাজনৈতিক কর্মী যাঁরা আমাদের সমর্থন দিয়েছেন, সবাইকে অভিনন্দন জানাই।
নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা।
পিপিপির সিনেটর সাইদ ঘানি এক টুইটে বলেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে নওয়াজ শরিফকে সমর্থন দিয়ে আসছেন, তাঁদের আর কোনো উপায় থাকল না। কারণ, নওয়াজ শরিফ ও তাঁর পুরো পরিবারকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলো।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য ও পিপিপি নেতা নাফিসা শাহ টুইট করেন, এ সময় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করা প্রয়োজন।
রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি টুইটে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাংবাদিকেরাও। পাকিস্তানের তারকা সাংবাদিক হামিদ মিরের টুইট ছিল এমন, এই সর্বসম্মত রায় পিটিআইয়ের জন্য নতুন শুরু। তবে তাঁদের খুব বেশি উদ্যাপন করা ঠিক না। কারণ, শিগগিরই আবার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
লেখক ও সাংবাদিক জারার কুহরো টুইটে বলেন, গিলানির অপসারণের পর পিপিপির উদাহরণ অনুসরণ করার সময় এসেছে পিএমএল-এনের।
টুইটে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারকারাও। পাকিস্তানের মঞ্চ অভিনেতা হামজা আলী আব্বাসী বলেন, দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলেন নওয়াজ। সুপ্রিম কোর্ট অযোগ্য ঘোষণার পর তিনি পদত্যাগ করলেন। নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা আছেন।
পাকিস্তানের পরিচালক খাদিজা শাহ বলেন, বিচার বিভাগ নিজেদের স্বাধীনতা প্রমাণ করেছে। এভাবে চলতে থাকলে পাকিস্তানে উন্নতি আসবে।
পাকিস্তানের পপ সংগীতশিল্পী ও গীতিকার বিলাল খান টুইটে বলেন, পাকিস্তানের ভবিষ্যতের জন্য এটি আনন্দের দিন।
নাগরিকদের অনেকেই টুইটে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। হারিশ নামে একজন লিখেছেন, নওয়াজ শরিফ নেহি র্যাহে।
লারাইব তালাত টুইট করেন, মনে হচ্ছে আজ ঈদ। নওয়াজ শরিফ নেই। বাই।
তাহজিব নামে একজনকে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তাঁর টুইট ছিল এমন, নওয়াজ, আপনি আমার নায়ক। সব সময় তাই থাকবেন। সূত্র: ডন ও জিও নিউজ
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন