স্মার্টফোন কেনার আগে যে জিনিসগুলো যাচাই করা উচিত

বর্তমান যুগ প্রযুক্তি নির্ভর। দৈনন্দিন জীবনের সবকিছুতেই আজ প্রযুক্তির ছোঁয়া।

আর এসবের মাঝে অপরিহার্য উপাদান স্মার্টফোন। যোগাযোগ, ছবি তোলা, ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং প্রভৃতি কাজে আমরা স্মার্টফোন ব্যবহার করি। তবে বাজারের নানা ধরনের স্মার্টফোনের মধ্যে প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম সেরা ফোনটি বাছাই করা আমাদের জন্য একটু কঠিনই হয়ে যায়।

এক্ষেত্রে স্মার্টফোন কেনার সময় কিছু জিনিস অবশ্যই যাচাই করে নেয়া উচিত।

১. নির্মাণ গুণমান: স্মার্টফোনের স্থায়িত্ব নির্ভর করে এর নির্মাণ গুণমানের ওপর। পুরো স্মার্টফোন বাজার প্রধানত দুই ধরনের নির্মাণ গুণমানে বিভক্ত। ধাতব এবং প্লাস্টিক। আবার গ্লাসে মোড়ানো প্যানেলযুক্ত ফোনও আছে। কিন্তু সেসব সংখ্যায় খুবই সীমিত।

তবে ধাতব এবং প্লাস্টিক নির্মিত হ্যান্ডসেটই বেশি টেকসই।
এসব হ্যান্ডসেট ২-৩ ফুট ওপর থেকে পড়লেও ভাঙবে না।

২. প্রসেসর: ওএস ভার্সন, ইউআই, ব্লটওয়্যার প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে স্মার্টফোনের প্রসেসিং পাওয়ারও বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।

আপনি যদি ভারি কোনো কাজ করতে চান, যেমন, ছবি/ভিডিও/ডকুমেন্ট অনলাইনে এডিট করা, ভারি কোনো গেমস খেলা, ভিডি স্ট্রিমিং বা প্রায়ই স্প্লিট মোডে অ্যাপস ব্যবহার করার কাজ করতে চান তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৫২ বা স্ন্যাপড্রাগন ৮২০/৮২১ প্রসেসরযুক্ত স্মার্টফোন।

আর হালকা ইউজারদের জন্য মিডিয়াটেক প্রসেসরযুক্ত স্মার্টফোনই যথেষ্ট।

৩. ব্যাটারি: ইউজারভেদে ব্যাটারিও ভিন্ন ভিন্ন হয়। আপনি যদি ভারি ইউজার হন এবং অ্যাপমে কাজ করা, গেমস খেলা, ভিডিও স্ট্রিমিং এবং অন্যান্য ভারি কাজ করা দরকার হয় তাহলে আপনাকে কিনতে হবে ৩৫০০ এমএএইচ বা এর বেশি এমএএইচ ব্যাটারিযুক্ত স্মার্টফোন। আর আপনি যদি হালকা ইউজার হন তাহলে আপনার জন্য ৩০০০ এমএএইচ এর ব্যাটারিযুক্ত স্মার্টফোনই যথেষ্ট যা একবার চার্জ করলে সারাদিন চলবে।

৪. ডিসপ্লে: আপনি যদি ভিডিও স্ট্রিমিং, ফটো বা ভিডিও এডিট বা ডাউনলোড এবং মুভি দেখার কাজ করতে চান তাহলে ৫.৫ ইঞ্চি থেকে ৬ ইঞ্চি ডিসপ্লেযুক্ত স্মার্টফোন কিনুন। ফুল এইচডি বা কিউএইচডি রেজ্যুলেশনই এ ক্ষেত্রে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে।

৬ ইঞ্চির বড় ডিসপ্লে হলে তা বহন করাটা অসুবিধাজনক হবে এবং ওজনও বেশি হবে।

আর আপনি যদি রেগুলার ইউজার হন এবং প্রধানত ই-মেইল চেক, চ্যাটিং এবং সোশাল মিডিয়া ব্রাউজিং করাই হয় আপনার উদ্দেশ্য তাহলে ৫ থেকে ৫.৫ ইঞ্চি এইচডি বা ফুল এইচডি ডিসপ্লেযুক্ত স্মার্টফোনই আপনার জন্য যথাযথ হবে।

৫. স্টোরেজ: ১৬জিবি/৩২জিবি/৬৪জিবি বা আরো বেশি স্টোরেজযুক্ত স্মার্টফোনের পুরোটাই খালি থাকে না। বরং আগে থেকেই এতে যে ওএস এবং অ্যাপস ইনস্টল করা থাকে তাতেই বিশাল অংশ ভরে যায়। আপনি যদি আপনার ফোনে স্বল্প সংখ্যক অ্যাপস রাখতে চান তাহলে ৩২জিবি স্টোরেজযুক্ত স্মার্টফোন কিনতে পারেন।

আর যারা একটু বেশি সংখ্যক অ্যাপস রাখতে চান তাদের জন্য উচিত হবে ৬৪জিবি বা ১২৮জিবি স্টোরেজ সুবিধা সম্পন্ন স্মার্টফোন কেনা। তবে আপনি মাইক্রোএসডি কার্ড লাগানো যায় এমন ১৬জিবির মডেলও কিনতে পারেন।

৬. ক্যামেরা: মেগাপিক্সেলের সংখ্যা বেশি হলেই যে স্মার্টফোনের ক্যামেরা ভালো হবে এমনটা নয়। এ ক্ষেত্রে ক্যামেরার অ্যাপারচার, আইএসও লেভেল, পিক্সেল সাইজ, অটোফাকাস এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যও গুরুত্বপূর্ণ। একটি ১৬ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা একটি ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা থেকে ভালো হবে এমন কোনো কথা নেই। ফ্রন্ট ক্যামেরার বেলায়ও একই কথা।

পিক্সেলের সংখ্যা বেশি হওয়ার মানে হলো ছবির আকার বড় হবে। যে ছবি ছোট স্ক্রিনের আরো বেশি স্পষ্ট দেখা যাবে। আপনি একজন আবেগী ফটোগ্রাফার হন তাহলে আপনার জন্য দরকার ১৬ বা ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা যার সেন্সরটি হবে এফ/২.০ এর নিচে বা আরো কম যাতে দ্রুত গতিতে শট নেওয়া যায়। আর শখের ফটোগ্রাফির জন্য দরকার ৮ মেগাপিক্সেল বা ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা। যার সেন্সরটি হবে এফ/২.০ থেকে এফ/২.২ অ্যাপারচারের।

৭. সিকিউরিটি/এক্সট্রা ফিচার: আমরা যেহেতু স্মার্টফোনে অনেক ব্যক্তিগত এবং গোপনীয় জিনিসি রাখি সেহেতু অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রদানকারী ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং আইরিস সেন্সরযুক্ত স্মার্টফোন কেনাই ভালো। এখন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার স্মার্টফোনেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর থাকে। তবে আইরিস স্ক্যানারযুক্ত স্মার্টফোনের সংখ্যা একটু কমই আছে।

৮. অডিও/স্পিকার: ভারি ভিডিও স্ট্রিমিং বা ভিডিও কনফারেন্সের জন্য শক্তিশালী স্পিকার এবং অডিও কোয়ালিটি ভালো হতে হবে। আপনি চলতে চলতেই বিনোদন চান তাহলে ফ্রন্টফেসিং স্পিকারযুক্ত স্মার্টফোন কিনুন। এতে এমনকি ল্যান্ডস্কেপ মোডেও পরিষ্কার আওয়াজ শোনা যাবে।

আর আপনার যদি ভিডিও স্ট্রিমিং বা ভিডিও কনফারেন্স খুব একটা দরকার না হয় তাহলে একটি রেগুলার হ্যান্ডসেটই যথেষ্ট। যার তলার দিকে থাকবে স্পিকার। পেছনে স্পিকারযুক্ত ফোনও চলবে।

৯. হেডফোন জ্যাক/ইউএসবি পোর্ট: মাইক্রো-ইউএসবি এবং ইউএসবি টাইপ-সি এই দুটোই বেশিই দেখা যায় স্মার্টফোনে। তবে ইউএসবি টাইপ-সি বেশি ভালো হবে। কেননা এটা টেকসই।