আজিজুর রহমান আজিজকে একুশে ও স্বাধীনতা পুরষ্কার প্রদানের দাবী

নিভৃতচারী ও শক্তিমান কবি, কথাসাহিত্যিক, গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী আজিজুর রহমান আজিজকে অমর একুশে ও স্বাধীনতা পুরষ্কার প্রদানের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানাই।

প্রতিবছর একুশে বইমেলার সময় দেখি তার টেবিলের সামনে প্রকাশকদের অপেক্ষার সারি একটি পান্ডুলিপি পাওয়ার আশায়। প্রতি বইমেলাতেই তার একাধিক কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস, গল্পের বই প্রকাশিত হয়। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে সমসাময়িক জীবনের জটিল সমীকরন সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় ফুটে উঠে তার প্রতিটি লেখায়। ভবিষ্যৎ ভাবনা ও জীবন গতির সুক্ষ নির্দেশনাগুলোও রঙিন হয় তার তুলির আঁচড়ে। বয়সে প্রবীন হলেও মন ও শারিরীক সক্ষমতায় তিনি আমাদের মত তরুণদেরও হারিয়ে দেন। বার্ধক্যজনিত কোন অসুখ-বিসুখের ছিটেফোঁটাও তার ভিতরে দেখিনা। এই চিরতরুণ ও সবুজ মানুষটি এখনো সমাজ, দেশকে দিয়ে চলেছেন তার সামর্থ্যের সবটুকু।

বর্নাঢ্য ও কর্মময় জীবনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ অলংকৃত করে তিনি অবসর নেন। আজন্ম বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের কল্যান তার সাধনা। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে তিনি সমার্থক মনে করেন। জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে জনকের কন্যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরলস পরিশ্রম ও উদ্যোগের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক ও শুভাকাংখী জনাব আজিজুর রহমান আজিজ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে তথ্য কমিশন বাংলাদেশের প্রথম প্রধান তথ্য কমিশনার পদে কাজ করার সুযোগ দিয়ে তাকে করেছেন সম্মানিত। জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত চেয়্যারম্যান হয়ে পর পর ২ মেয়াদ সফলভাবে অতিবাহিত করার সুযোগ তার হয়েছে। বর্তমানে তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, রবীন্দ্র একাডেমি সহ অনেক সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।

১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার রয়েছে বড় অবদান যদিও তিনি তার স্বীকৃতি কখনো চাননি কোথাও। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা হিসাবে তিনি ১৯৭১ সালে এক দুঃসাহসিক ভূমিকা নেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনের পরে দাপ্তিরিক চিঠিপিত্রে তিনি বাংলাদেশ সরকার লেখা শুরু করেন। এজন্য তাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, পাক সেনাবাহিনীর বন্দুকের নলের মুখে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন, বলা যায় অলৌকিক কোন কারনে। রাতের আঁধারে তিনি চষে বেড়িয়েছেন সীমান্তের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প, তাদের দিয়েছেন সাহস, অনেককে করেছেন কারামুক্ত তার প্রশাসনিক ক্ষমতা ও বিচক্ষনতা ব্যাবহার করে।

এই মানুষটির অনেক অবদান। কিন্তু তিনি হাত পেতে কিছু চেয়ে নেয়ার মানুষ নন। সারাজীবন নিরবে নিভৃতে কাজ করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে তার নিরলস পরিশ্রম চোখে দেখার সুযোগ আমাদের হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেখেছি শত শত তথ্য উপাত্ত ঘেটে ৩০০ আসনের ভোটার, দল অনুযায়ী সম্ভাব্য ভোটার, উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই এসব বিচার বিশ্লেষণ করছেন। নির্ঘুম সেইসব দিন-রাত্রির বিনিময় চিনি কখনো চাননি কোথাও। ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ প্রতিটি নির্বাচনেই তিনি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি / উপ-কমিটির সদস্য হয়ে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তিনি কাজ পাগল মানুষ। সততা, দক্ষতা, একনিষ্ঠতা, আনুগত্য দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির পাশে থেকেছেন সবসময়।

বৃহত্তর ফরিদপুরের মাদারীপুরের এই সূর্য সন্তান তার এলাকার শিক্ষা বিস্তারের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন একাধিক স্কুল-কলেজ। শুধু প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষ্যন্ত হননি, সেখানকার শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য তিনি চেষ্টা করেন সবসময়। তার সেই স্কুল কলেজগুলো জেলার অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। দেশের নানা প্রান্তে অনেক গরীব, দুঃখী, প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তিনি করে দিয়েছেন।

তার অবদান, গুণ, কর্মজীবনের খুব ক্ষুদ্র অংশই আমি জানি। তথ্য কমিশনের সূচনালগ্নে তার সঙ্গে থেকে কাজ করার কিছু সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তথ্য কমিশন, বাংলাদেশ কে তিনি যেভাবে দাঁড় করিয়েছেন তা নিজ চক্ষে দেখার সুযোগ আমাদের হয়েছিল। আমাদের ধারনায় তিন নিজেই একজন প্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তিনি জাতির জনকের কণ্যা ও বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে তার সমসাময়িক রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক বিশ্লেষণগুলো অভিপ্রায় ও মতামত আকারে দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন। সরকারের প্রশাসন ও কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময়ে তার মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে তিনি সৎ, দক্ষ ও যোগ্য করার প্রয়াস পেয়েছেন । প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে তিনি সবসময় উচ্চ শ্রদ্ধার আসনে আসীন থেকেছেন।

সার্বক্ষনিক তিনি আমার মতো হাজারো তরুণের মাথার উপর বটবৃক্ষ হয়ে আছেন। প্রতিনিয়ত দিয়ে চলেছেন পরামর্শ, উপদেশ। কোন অবস্থাতেই তিনি দেশ, মানুষের কথা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এসব কে ভুলে যান না। তার জীবনাচারের সঙ্গে মিশে গেছে বঙ্গবন্ধুর সেই দৃঢ় নৈতিক, মানসিক আদর্শের ধারা। গতবছর বইমেলাতে তার উৎসাহ, অনুপ্রেরনা ও দিক নির্দেশনায় আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের শতাধিক শিশু, কিশোর ও তরুণের একগুচ্ছ ছড়া নিয়ে প্রকাশ করেছিলাম ‘ছন্দে-ছড়ায় বঙ্গবন্ধু’ নামক একটি গ্রন্থ। দেশ বিদেশের শিশু কিশোর মননে বঙ্গবন্ধুর জন্য যে অকৃত্রিম ভালবাসা সেটার প্রকাশ সেখানে ছিলো।

তার কবিতা, উপন্যাস, গল্পের বইয়ের সংখ্যা অগনিত। আমি সাহিত্য সমালোচক নই বা সেই মানের সাহিত্য বোদ্ধাও নই। তবুও তার যে সকল কাব্যগ্রন্থ আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে তাতে বুঝেছি সাহিত্য মানের বিচারে সেগুলো কালোত্তীর্ন। শহুরে যান্ত্রিক জীবনের গন্ডিতে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন গ্রামের শান্ত সুনিবিড় ছাড়ায় জড়ানো ভালবাসার ফুল। অসংখ্য ভক্ত, পাঠক সেখানে খুঁজে পান জীবনসুধার শান্ত ধারা। এটা নিশ্চিত যে, দেশে যারা প্রতিষ্ঠিত বইবোদ্ধা রয়েছেন তারা ব্যস্ত তাদের নিজেদের বই রচনায় আর প্রচারে। অন্যের লেখা বই পড়ে তা নিয়ে দুটো ভালো কি মন্দ কথা বলার সময়ই কই তাদের!

ব্যস্ত নাগরিক জীবনে শান্তির পরশ নিয়ে আসা একজন শক্তিমান কবি ও কথাসাহিত্যিক কে কি আমরা নীরব নিভৃত কোন থেকে নিয়ে এসে তার আলোকিত জীবন ও দর্শন কে সবার সামনে তুলে ধরার একটু প্রয়াস নিতে পারি না ? বঙ্গবন্ধুর এই সৈনিক কখনো কিছু চেয়ে নেন না। এটা তার ব্যক্তিত্বের উজ্জ্বলতা। কিন্তু দেশের কি উচিৎ নয় তাকে সম্মানিত করা ? বাংলা একাডেমী পুরষ্কার, অমর একুশে ও স্বাধীনতা পুরষ্কার – তিনটি পদকের জন্যই তিনি আরো আগে যোগ্য হয়েছেন। আমরা কি তার এই সম্মানগুলো দিতে কার্পন্য করব ? সরকারের কাছে জোর দাবী জানাই তাকে বাংলা একাডেমী, অমর একুশে ও স্বাধীনতা পুরষ্কার প্রদানের জন্য।

পরিশেষে আমাদের শ্রদ্ধেয় স্যার জনাব আজিজুর রহমান আজিজের (Azizur Rahman Aziz) কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি তাকে না জানিয়ে বা তার কোন সম্মতি না নিয়েই এই দাবী সকারের কাছে তুলে ধরছি বলে। জানিনা ফেসবুকের এই পোস্ট তেমন কারো চোখে পড়বে কিনা। তবে এই ছাড়া আমাদের দাবী জানানোর আর কোন উপযুক্ত মাধ্যমও খুঁজে পাচ্ছি না।

S M Saifur Rahman এর ফেসবুক থেকে নেওয়া