পাবনায় চায়না দুয়ারী জালে আটকা পড়ল ভয়ঙ্কর বিষধর সাপ রাসেল’স ভাইপার

পাবনা সদর উপজেলার চরাঞ্চলে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী জালে ধরা পড়েছে অত্যন্ত বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার। খবর পেয়ে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের সদস্যরা প্রাণীটিকে জীবিত উদ্ধার করে।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার হিমায়েতপুরের চর ভবানীপুর গ্রামের এক জেলের চায়না দুয়ারীতে বিষাক্ত সাপটি আটকা পড়ে।

টিমের রেস্কিউয়ার এবং সংগঠনটির সভাপতি মো. রাজু আহমেদ জানান, শনিবার সকালে আমাদের হটলাইনে ফোনকল আসে। আমরা কল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিমের সাধারণ সম্পাদক প্রীতম সুর রায়কে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই এবং সাপটিকে উদ্ধার করি। সাপটিকে উদ্ধারের পর সেখানে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং সাপে কামড়ালে করণীয় সম্পর্কে সকলকে দিকনির্দেশনা দেই।

তিনি জানান, ২০২০ সালে সিদ্দিকুর রহমান রাব্বি প্রতিষ্ঠিত স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের সদস্যরা মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে একটি সহাবস্থান তৈরি এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বন্যপ্রাণী মূলত সাপ নিয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। বর্তমানে এই টিমটিতে ২৫ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রেস্কিউয়ার রয়েছেন। যারা বিপদগ্রস্ত অথবা মানুষের বাসস্থানে ঢুকে পড়া সাপ বা অন্যকোনো বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে আবার সেগুলোকে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেয়।সংগঠনটি পর্যন্ত প্রায় ৩০০০ সাপ উদ্ধার করেছে।

এদিকে রাসেল ভাইপার সম্পর্কে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, রাসেলস ভাইপার (Russell’s Viper) সাপটি ‘চন্দ্রবোড়া’ বা ‘উলুবোড়া’ নামেও পরিচিত। এটি ইঁদুর ও টিকটিকি খায়। বসতবাড়ির আশেপাশে এদের প্রাচুর্যতা বেশি থাকায় খাবারের খোঁজে রাসেলস ভাইপার অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে এবং মানুষকে দেখে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে কখনও কখনও আক্রমণও করে বসে।

তিনি বলেন, সাধারণত পদ্মার চরাঞ্চল, নদী অববাহিকা ও বরেন্দ্র এলাকায় উঁচু-নিচু জমিতে এই সাপটি বেশি দেখা যায়। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে এর প্রজননকাল। এটি ডিম দেওয়ার বদলে সরাসরি ৬-৬৩টি বাচ্চা প্রসব করে। দেখতে মোটা, লম্বায় ২ থেকে ৩ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই সাপের গায়ে ছোপ-ছোপ গোলাকার কালা দাগ থাকে। ঘন ঘন জিহ্বা বের করে হিসহিস শব্দ করে। সাপটি সম্পর্কে যার ধারণা নেই তিনি এটিকে অজগর ভেবেই ভুল করবেন।

জোহরা মিলা বলেন, আইইউসিএনের ২০১৫ সালের লাল তালিকা অনুযায়ী রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশে সংকটাপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। এই সাপের বিষ ‘হেমোটক্সিন’ হওয়ায় মাংস পঁচেই দংশনের শিকার ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তাই সাপটির কবল থেকে বাঁচতে সচেতনতাই কার্যকর পথ। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী সাপটি সংরক্ষিত।

এ বিষয়ে পাবনা অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। রাসেল’স ভাইপার আমাদের দেশের সাপ নয়, এগুলো ভারত থেকে আসে। ভারত হয়ে পদ্মা নদী দিয়ে রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও পাবনার কিছু অঞ্চলে এগুলো পাওয়া যাচ্ছে।