দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় অঘটনের জন্ম দিলো নেদারল্যান্ডস

ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১৩তম আসরে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দ্বিতীয় অঘটনের জন্ম দিলো নেদারল্যান্ডস।

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ৩৮ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। গত রোববার ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়ে চলমান আসরে প্রথম আপসেট ঘটিয়েছিল আফগানিস্তান। ওয়ানডে বিশ্বকাপের মঞ্চে তৃতীয় জয় পেল নেদারল্যান্ডস। ইউরোপীয় দলটি এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার হারালো দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের দুর্দান্ত হাফ-সেঞ্চুরির সাথে লোয়ার অর্ডারে বিভিন্ন জুটিতে ১৩৭ বলে ১৬৩ রান যোগ হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৪৩ ওভারে ২৪৫ রান করে নেদারল্যান্ডস। এডওয়ার্ডস ৬৯ বলে অপরাজিত ৭৮ রান করেন। জবাবে নেদারল্যান্ডসের বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২০৭ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এই প্রথম ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারালো নেদারল্যান্ডস। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে সেমিফাইনালে উঠার সুর্বন সুযোগ হাতছাড়া করেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা।

ধর্মশালায় বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের দুই দুই ঘন্টা পর শুরু হওয়ায় ৪৩ ওভারে নামিয়ে আনা ম্যাচে টস জিতে নেদারল্যান্ডসকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমনন্ত্রন জানায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাট হাতে নেমে সাবধানে এগোতে থাকেন নেদারল্যান্ডসের দুই ওপেনার বিক্রমজিত সিং ও ম্যাক্স ও’দাউদ। ৬ ওভারে ২২ রান তুলেন তারা। সপ্তম ওভারের প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে প্রথম বলেই বিক্রমজিতকে ২ রানে আউট করেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার কাগিসো রাবাদা। বিক্রমজিতকে শিকার করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৯৫ ম্যাচে ১৫০তম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন রাবাদা।

পরের ওভারে ও’দাউদকে ১৮ রানে বিদায় দেন পেসার মার্কো জানসেন। চার নম্বরে বাস ডি লিডেকে ২ রানের বেশি করতে দেননি রাবাদা। রাবাদা-জানসেনের পর অন্য দুই পেসার জেরাল্ড কোয়েৎজি ও লুঙ্গি এনগিদিও সাফল্য পান। তিন নম্বরে নামা কলিন অ্যাকারম্যানকে ১২ রানে বোল্ড করেন কোয়েৎজি। সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখটকে ১৯ রানে শিকার করেন এনগিদি। এতে ৮২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নেদারল্যান্ডস।

এরপর ষষ্ঠ থেকে নবম উইকেট পর্যন্ত লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের সাথে জুটি বেঁধে ১৩৭ বল মোকাবেলা করে ১৬৩ রান যোগ করেন অধিনায়ক এডওয়ার্ডস। ষষ্ঠ উইকেটে তেজা নিদামানুরুর সাথে ৪০ বলে ৩০, সপ্তম উইকেটে লোগান ফন বিকের সাথে ৪১ বলে ২৮, অষ্টম উইকেটে রোলফ ফন ডার মারুকে নিয়ে ৩৭ বলে ঝড়ো গতিতে ৬৪ রান এবং নবম উইকেটে আরিয়ান দত্তকে নিয়ে ১৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪১ রান যোগ তুলেন এডওয়ার্ডস। এতে ৪৩ ওভারে ৮ উইকেটে ২৪৫ রানের বড় সংগ্রহ পায় নেদারল্যান্ডস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান নেদারল্যান্ডসের। এর আগে ২০১৩ সালে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৫৮ রান করেছিলো ডাচরা।

নিদামানুরু ২০, বিক ১০, মারু ১৯ বলে ২৯ এবং আরিয়ান ৯ বলে অপরাজিত ২৩ রান করেন। ৫৩ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে অনবদ্য ৭৮ রান করেন এডওয়ার্ডস। নেদারর‌্যান্ডসের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ১৪ হাফ-সেঞ্চুরি করা রায়ান টেন ডসেটকে স্পর্শ করেন এডওয়ার্ডস। ডসেট ৩২ ইনিংসে ও এডওয়ার্ডস ৩৮তম ইনিংসে ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার এনগিডি ৫৭ রানে, জানসেন ২৭ রানে ও রাবাদা ৫৬ রাানে ২টি করে উইকেট নেন।
২৪৬ রানের টার্গেটে দলকে ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা ও কুইন্টন ডি কক। ৮ ওভারে ৩৬ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন তারা। আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ডি কককে ২০ রানে থামান স্পিনার অ্যাকারম্যান।

ছয় বল পর ১৬ রান করা বাভুমাকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন স্পিনার মারু। এরপর ১১তম ওভারে আইডেন মার্করামকে ১ রানে পেসার পল ফন মিকেরেন এবং পরের ওভারে রাসি ভ্যান ডার ডুসেনকে ৪ রানে মারু শিকার করেন। এতে ৪৪ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২১ বল ও ৮ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা।

শুরুর ধাক্কা সামলে উঠতে পঞ্চম উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন করেন ডেভিড মিলার ও হেনরিচ ক্লাসেন। ৪৫ বলে ৪৫ রান যোগ হবার পর এই জুটি ভেঙ্গে নেদারল্যান্ডসকে ব্রেক থ্রু এনে দেন পেসার বিক। ২৮ বলে ২৮ রান করা ক্লাসেনকে শিকার করেন বিক। ২৫তম ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে জানসেনকে ৯ রানে ফিরিয়ে দেন মিকেরেন।
দলীয় ১০৯ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার ষষ্ঠ উইকেট তুলে নিয়েও স্বস্তিতে ছিলো না নেদারল্যান্ডস। কারন তখনও উইকেটে ছিলেন ২৩ রানে ক্যাচ দিয়ে লিডের হাতে জীবন পাওয়া মিলার। ৩১তম ওভারে ডাচদের চিন্তা দূর করেন বিক। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৩ রান করা মিলারকে বোল্ড করেন বিক।
দলীয় ১৪৫ রানে মিলার ফেরার পর শেষ পর্যন্ত ১ বল বাকী থাকতে ২০৭ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ হারে দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষদিকে কেশব মহারাজ ৪০ রান করে দলের হারের ব্যবধান কমান। নেদারল্যান্ডসের বিক ৬০ রানে ৩ উইকেট নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
নেদারল্যান্ডস : ২৪৫/৮, ৪৩ ওভার (এডওয়ার্ডস ৭৮*, মারু ২৯, জানসেন ২/২৭)
দক্ষিণ আফ্রিকা : ২০৭/১০, ৪২.৫ ওভার (মিলার ৪৩, মহারাজ ৪০, বিক ৩/৬০)।
ফল : নেদারল্যান্ডস ৩৮ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা:স্কট এডওয়ার্ডস(নেদারল্যান্ডস)।