পঞ্চগড়ের খালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফেরদৌসী বরখাস্ত

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার খালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফেরদৌসী বেগমের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত প গড়ে কারাদÐসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত করায় চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত মাসের ৮ তারিখ বরখাস্তের আদেশ প্রদান করেন প গড়ের প্রাক্তন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাহাব উদ্দিন।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৬ জুন তিনি সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর ২০২০ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে খালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে বদলীর মাধ্যমে যোগদান করেন।

যোগদানের পর থেকে নিয়মিত স্কুলে আসলেও ২২ ফেব্রæয়ারি ২০২৩ থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্কুলে আসেননি তিনি। আরও জানা যায়, বিদ্যালয় কিংবা উপজেলা শিক্ষা অফিসের কোনো অনুমোদন ছাড়াই কোন প্রকার ছুটি না নিয়ে দেড় বছর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত সহকারী শিক্ষিকা ফেরদৌসি বেগম।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা শিক্ষা অফিসের চলতি বছরের গত মার্চ মাসের ৭তারিখের ৮৬ নং স্বারক পত্রে এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চগড় এর গত আগস্ট মাসের ১৪ তারিখের ৫৭৬ নং আদেশ মোতাবেক ওই শিক্ষিকাকে ১৮৮১ সালের দি নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রামেন্টস এ্যাক্ট এর ১৩৮ ধারায় অপরাধ দোষী সাব্যস্ত করে ১০ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও চেক বর্ণিক ৫লাখ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন এবং পিটিশন নং ২০৮/২০২১ যাহার সিআর ৪২১/২০২১ (পি) নং মামলায় গত বছরের মে মাসের ৩০ তারিখ একই আইনের একই ধারায় অপরাধ দোষী সাব্যস্ত করে ১বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও চেক বর্ণিক ৪লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করেন।

এই দুই মামলায় আদালত কর্তৃক দেড় বছরের কারাদÐসহ অর্থদন্ড প্রদান করায় সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪২ এর (১) ধারা অনুযায়ী ওই শিক্ষিকাকে গত বছরের মে মাসের ৩০ তারিখ হতে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, তিনি তার চাকরি দেখিয়ে এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নেয়া এবং বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা হাওলাদ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই টাকা পরিশোধ না করে মাঝে মধ্যেই বসবাসের স্থান পরিবর্তন করতেন। এরপর দুটি মামলায় সাজা হওয়ার কারণে তিনি স্কুলে না আসে আত্মগোপনে আছেন।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ফেরদৌসী দীর্ঘদিন থেকে স্কুলে আসেন না। তাকে বার বার স্কুলে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিলো। তিনি স্কুলে আসেননি। তার পরিবার পরিজন নিয়ে কথায় থাকেন তা আমার জানা নেই। তবে তিনি শিক্ষিকা হিসেবে ভালো ছিলেন।

ওই সহকারী শিক্ষিকার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এক পর্যায় ওই সহকারী শিক্ষিকার বিষয়ে জানার জন্য তার মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তার মা বলেন, ‘কে আপনি, কেন আমার মেয়ের বক্তব্য নিতে চাচ্ছেন? যেখানে তার অফিস তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়নি সেখানে আপনি (সাংবাদিক) কেন এই বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন? আপনার মতো কত সাংবাদিক মার খেয়েছেন ইত্যাদি কথা বলে মেয়ের বিষয়ে জানতে কোনো সুযোগ দেয়নি’

এদিকে ওই সহকারী শিক্ষিকার শ্বশুর বাড়ী উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের দেবুপাড়া এলাকায় সরেজমিনে গেলে শ্বশুর বাড়ীর লোকজন বলেন, তারা (মেয়ে-ছেলে) কথায় থাকেন আমাদের জানা নেই। বাড়ীতে থাকা ওই শিক্ষিকার চাচী শাশুড়ী বলেন, আমরা শুনছি ওই মেয়ে নাকি অনেক টাকা হাওলাদ করেছেন।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই শিক্ষিকা যখন ওই স্কুলে যোগদান করে তার আগে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও লোকজনের কাছে বেতনের চেক দিয়ে ঋণ নিয়েছিলো। সময় মতো লোন পরিশোধ করতে না পেরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলো মামলা করতে শুরু করলো। এতে দুটি মামলার দেড় বছরের সাজা হয়ে যায়। তখন থেকে তিনি পলাতক। প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হতে তিনটি চিঠি তার স্বামীর ঠিকানায় ও তার বাপের বাড়ির ঠিকানায় পাঠানো হয়েছিলো। পরবর্তীতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠানো হয়। আইন মোতাবেক তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমেশ চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পঞ্চগড়ে যোগদানের কয়েকদিন হলো এ বিষয়ে অবগত নই। তবে তিনি বলেন, যদি চাকরি থেকে ওই শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করা হয় তাহলে সেটি বরখাস্ত বলেই গণ্য হবে, যতক্ষণ না সে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে পুনর্বহালের আবেদন করবে।