কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে ইবিতে ত্রিমুখী আন্দোলন

কক্ষ বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ত্রিমুখী বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রোববার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে প্রশাসন কর্তৃক বরাদ্দকৃত কক্ষ ফিরে পাওয়ার দাবিতে অবস্থান নেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

তাদের অভিযোগ, বিগত প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনে চতুর্থ তলার কিছু রুম চারুকলা বিভাগকে বরাদ্দ দেন। সরকার পতনের পর তাদের নামে বরাদ্দকৃত কক্ষগুলো ফোকলোর স্টাডিজ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ দখলে নিয়েছে। এবং সেখান থেকেই এই দুই বিভাগ নিয়মিত শ্রেণী কার্যক্রম পালন করছেন। অথচ বরাদ্দ পেয়েও ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করার সুযোগ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের।

পরে দুপুর সাড়ে বারোটায় একই স্থানে দখলদার আখ্যা দেয়ার প্রতিবাদে পাল্টা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ফোকলোর স্টাডিজ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের যাত্রা শুর হয়। এই বিভাগের সাতটি ব্যাচ চলমান।

অথচ আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ কক্ষ নেই। তাই বিগত ছয় মাস ধরে আমরা রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের কিছু কক্ষে ক্লাস-পরীক্ষা করে আসছি। এখন চারুকলা বিভাগ দাবি করছে, রুমগুলো তাদের ছেড়ে দিতে হবে। এমনকি ডিন অফিস থেকেও ছেড়ে দেয়ার নোটিশ দিয়েছে। তবে আমরা রুম ছাড়ব না। কারণ আমাদের সাথে বারবার বৈষম্য করা হচ্ছে। এমনকি এর আগে যখন আমরা রুমে উঠি তখন এক প্রকার মৌখিকভাবে উঠার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। আমরা আমাদের বিভাগের নামে রুমগুলো বরাদ্দ চাই।

পরে দুপুর দেড়টার দিকে তিন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে তিনটি প্রতিনিধি দল উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসময় উপাচার্য কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন ও চারুকলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান ক্যাম্পাসে ফিরলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, কোন বিভাগের সাথে বৈষম্য করা হবে না। যার যার প্রাপ্য অধিকার সে পাবেন। আমাকে একটু সময় দেন, ডিন মহোদয় ও চারুকলা বিভাগের সভাপতি ক্যাম্পাসে আসলে তিন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে বসে বিষয়টি সমাধান করব।

তবে উপাচার্যের সাথে আলোচনা শেষেও বরাদ্দকৃত রুম ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, গত ৮ অক্টোবর কলা অনুষদের ডিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের চতুর্থ তলার ২৩টি ও পঞ্চম তলার একটি কক্ষ চারুকলা বিভাগের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে কাগজে-কলমে বরাদ্দ পেলেও কক্ষগুলো ব্যবহার করতে পারছে না বিভাগটি। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ চারুকলা বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত ওই কক্ষগুলো নিজেদের দখলে নিয়ে ব্যবহার শুরু করেছে।

ফলে এতদিন অন্য একটি বিভাগ থেকে ধার করা অফিস কক্ষ ও টিএসসিসির কিছু কক্ষে শ্রেণি কার্যক্রম চলছিল। এদিকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও ফোকলোর স্টাডিজকে একই ভবনের পঞ্চম তলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে বিভাগ দুটি নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষগুলোতে না গিয়ে চতুর্থ তলার চারুকলার জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষগুলো ব্যবহার অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়াও আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগকে চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হলেও তারা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত তৃতীয় তলার কক্ষগুলো দখল করে ব্যবহার শুরু করছে বলে জানা গেছে।

এবিষয়ে চারুকলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক। কর্তৃপক্ষ থেকে বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষেই তাদের উঠতে দেওয়া উচিত। তবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির যেনো সৃষ্টি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার।

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি আতিফা কাফি বলেন, উপাচার্য স্যার আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন কক্ষগুলো পুনরায় বন্টণের জন্য। আমরাও আলোচনা করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব। উপাচার্য আশ্বস্ত করেছেন খুব দ্রুত এটির সমাধান করা হবে।

ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি ড. আবু শিবলী মো. ফতেহ আলী চৌধুরী বলেন, প্রশাসন যেখানে বরাদ্দ দিবে সেখানে যাব। এখানে আমি প্রশাসনের আওতায় কাজ করছি। কিন্তু বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই রুমগুলো ছাড়তে চাচ্ছে না। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা এখন আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তারা আজও আন্দোলন করেছে। আমি তাদের বুঝিয়েছিলাম যে এভাবে আন্দোলন করে কিছু হবে না। প্রশাসন যেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেমনই হবে৷ কলা অনুষদের ডিন বাইরে আছে, তিনি আসলে খুব দ্রুত এটির সমাধান করা হবে বলে উপাচার্য আশ্বাস দিয়েছেন।

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, ছোট একটি সমস্যাকে বড় করে তোলা হচ্ছে। আমরা সবগুলো বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে বসে কক্ষ বরাদ্দের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু বরাদ্দকৃত কক্ষে না গিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টির সমাধান শিক্ষকদের হাতেই রয়েছে বলে আমি মনে করি।

তারা শিক্ষার্থীদের বললে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে যেতে শিক্ষার্থীরা বাধ্য উপাচার্যের নির্দেশে বিষয়টি নিয়ে আমি ডেভোলপমেন্ট স্টাডিজ ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতির সঙ্গেও আলাদাভাবে কথা বলেছি। তারপরও নির্দেশ না মেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এখন কেউ যদি গায়ের জোরে নির্দেশ অমান্য করে, তাহলে আমাদের করার কী থাকে, আমরা তো আর পুলিশ প্রশাসন না আমরা মনে হয়, উপাচার্যকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য পরিকল্পিতভাবেই এসব করা হচ্ছে

উল্লেখ্য, একই দাবিতে গত ২৩ অক্টোবর মানববন্ধন করে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্য অতি দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা।