খাগড়াছড়ির দীঘিনালাতে শহীদ নবায়ন চাকমা’র ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা দীঘিনালা উপজেলায় শহীদ নবায়ন চাকমা’র ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দীঘিনালায় ইউপিডিএফ’র স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউপিডিএফ সংগঠক শহীদ নবায়ন চাকমা(সৌরভ)-এর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা আয়োজন করা হয়।
সেনা নির্যাতনে হত্যার শিকার ইউপিডিএফ সংগঠক শহীদ নবায়ন চাকমা(সৌরভ)-এর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দীঘিনালায় স্মরণসভা করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) দীঘিনালা ইউনিট।
বৃহস্পতিবার(১৬ই মার্চ ২০২৩) বিকেল ৩টায় আয়োজিত স্মরণসভায় ইউপিডিএফ-এর দীঘিনালা ইউনিটের সমন্বয়ক মিল্টন চাকমার সভাপতিত্বে ও সংগঠক সুজয় চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক মন্টু চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক পিংকু চাকমা, চিনেলচড়া গ্রামের মুরুব্বী আর্য প্রিয় চাকমা, বাগান পাড়া গ্রামের মুরুব্বী মঙ্গল চন্দ্র চাকমা ও বাগান পাড়া যুব সমাজের প্রতিনিধি নবীন বিকাশ চাকমা।
উল্লেখ্য, স্মরণসভাটি গতকাল করার কথা থাকলেও বিরূপ প্রাকৃতিক কারণে করা যায়নি। স্মরণসভা শুরুতে শহীদ নবায়ন চাকমাসহ অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
স্মরণসভায় ইউপিডিএফ নেতা মিল্টন চাকমা বলেন, শহীদ নবায়ন চাকমা(সৌরভ) ছিলেন পার্টির বিশ্বস্ত নেতা। পার্টির কাজের কারণে তিনি এই এলাকায় খুবই পরিচিত মুখ ছিলেন। তাঁর দাহক্রিয়া ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনগণের উপস্থিত তার প্রমাণ। সেনাবাহিনী সৌরভকে হত্যা করলেও তার চেতনাকে হত্যা করতে পারেনি। তার গড়ে তোলা শত শত সৌরভ এখনো কাজ করছে।
তিনি বলেন, অমানষিক নির্যাতনের পরও তিনি পার্টির কোন গোপনীয়তা কথা প্রকাশ করেননি এবং কোন কর্মীকে বিপদের মুখে ফেলে দেননি। এটাই তার কাছ থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে। জীবন উৎসর্গ করে হলেও নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রতি অবিচল থাকাটাই হচ্ছে একজন রাজনৈতিক কর্মীর গুণ। সৌরভ আমাদের প্রেরণা। তাঁর আশা-আকাঙ্খা ও স্বপ্নকে আমাদের বাস্তব রূপ দিতে হবে। তিনি আমাদের কাছে স্বশরীরে না থাকলেও তাঁর চেতনা-কর্ম তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সৎ সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবো।
মন্টু চাকমা বলেন, শহীদ নবায়ণ চাকমা(সৌরভ)-এর আত্মত্যাগ আমাদের সেই শিক্ষা দেয় যে, শত নির্যাতনে শত্রুর কাছে মাথা নত না করা। নিজের জীবন উৎসর্গ করে তিনি পার্টি ও জনগণের প্রতি তার বিশ্বস্ততার প্রমাণ রেখে গেছেন।
যুব নেতা পিংকু চাকমা বলেন, আমাদের যুব সমাজকে শহীদ সৌরভের আত্মবলিদানের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে শত সৌরভ হয়ে পার্টির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। অধিকারের প্রয়োজনে আমাদের প্রত্যেককে সৌরভ হতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বাগান পাড়া যুব সমাজের প্রতিনিধি নবীন বিকাশ চাকমা বলেন, সৌরভকে যেভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে তা বর্ণনা করার মতো নয়। ঘটনাটি আমাদের গ্রামে ঘটেছে। নব্যমুখোশ বাহিনীর সহযোগীতায় সেনাবাহিনী নির্যাতন করতে করতে তাকে হত্যা করেছে। এই ধরনের হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে সকল শ্রেণির মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার।
চিনেলছড়া গ্রামের মুরুব্বী আর্য প্রিয় চাকমা বলেন, পার্টির কাজের সুবাদে নবায়ন চাকমা সৌরভ এলাকায় খুবই পরিচিত মুখ। অনেক বছর ধরে আমরা তাকে চিনি। খুবই অমায়িক ছিলেন, কথা কম বলেন কিন্তু‘ সবসময় মানুষকে সুপরামর্শ দিতেন। সবসময় অভিভাবকের মত জনগণকে সংগঠিত করেছেন এবং পার্টির প্রতি আস্থা রাখতে বলতেন। তার শূন্যতা আজ আমরা অনুভব করছি।
মঙ্গল চন্দ্র চাকমা বলেন, সৌরভের স্মরণে পার্টির আজকের প্রোগ্রাম আমাকে অনুপ্রাণিত করছে। জনগণকে অবশ্যই পার্টিকে সহায়তা করা দরকার, এটা শুধু কর্মীদের কাজ নয়। সৌরভ প্রায় সময় আমাদের গ্রামে থাকতো, আমরা খুব কাছ থেকে তাকে দেখেছি। তাকে হত্যা করার একটা কারণ হলো তিনি জনগণের কাছে খুব প্রিয় মুখ ছিলেন। তার পরিকল্পনা, কাজের ধরন, পার্টির প্রতি বিশ্বস্ততা সেনাবাহিনীর কাছে চক্ষুশূল হয়েছিল। সেই কারণে তাকে নির্যাতন করতে করতে মেরে ফেলেছিল। তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণেই পার্টি কাজ করছে, তাই জনগণকেই পার্টি কর্মীদের রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত বছর ১৫ই মার্চ ভোররাতে দীঘিনালা জোনের একদল সেনা সদস্য নবায়ন চাকমা সৌরভকে আটক করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন