চতুর্থবারের মতো বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন
আবারও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি নির্বাচিত হলেন সাবেক ফুটবলার কাজী মো. সালাউদ্দিন। এ নিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে হওয়া নির্বাচনে জিতেছেন তিনি।
নতুন মেয়াদে বাফুফের সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন আরেক সাবেক ফুটবলার আবদুস সালাম মুর্শেদী।
কাজী সালাউদ্দিনের মতো তিনি টানা চতুর্থবারের মতো সিনিয়র সহ-সভাপতি হলেন।
বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে ১৩৯ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ১৩৫টি। দু’জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন না, ভোট দেননি আরও দুজন।
নির্বাচনের আগের উত্তাপের প্রতিফলন পড়ল না ভোটাভুটিতে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি পদে আবারও কাজী সালাউদ্দিনকে বেছে নিয়েছেন কাউন্সিলররা।
রাত ৮টা ২০ মিনিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ সালাউদ্দিনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। ৯৪ ভোট পেয়ে চতুর্থ দফায় নির্বাচিত হলেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার।
রাজধানীর একটি হোটেলে শনিবারের নির্বাচনে ১৩৯ কাউন্সিলরের মধ্যে ১৩৫ জন ভোট দেন। ৪ জন ছিলেন অনুপস্থিত। চট্টগ্রাম আবাহনীর কাউন্সিলর তরফদার রুহুল আমিন এবং ফরিদপুর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ডিএফএ) সভাপতি নজরুল ইসলাম খন্দকার, শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের কাউন্সিলর সাফওয়ান সোবহান তাজবীর ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের কাউন্সিলর মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান এজিএমে ছিলেন না, ভোটও দেননি।
সালাউদ্দিনের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাদল রায় পেয়েছেন ৪০ ভোট। ১ ভোট পেয়েছেন আরেক সভাপতি প্রার্থী মানিক। এবার নির্বাচনে সভাপতি পদে শুরুতে প্রার্থী ছিলেন তিন জন। এদের মধ্যে বাদল রায় সরে দাঁড়ান। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যালট পেপারে নাম ছিল বাদলের।
৮৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছিলেন সালাউদ্দিন। গতবার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৩৩ ভোট বেশি পেয়েছিলেন তিনি। এবার পেয়েছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৫৪ ভোট বেশি।
২০০৮ সালে সালাউদ্দিন প্রথমবারের মতো বাফুফের সভাপতি হন। ২০১২ সালে দ্বিতীয় ও ২০১৬ সালে তৃতীয় মেয়াদে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের দায়িত্ব পান স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই ফরোয়ার্ড।
দেশের ফুটবলের কিংবদন্তি সালাউদ্দিন ক্লাব ক্যারিয়ারের সোনালী সময়টা কাটান ঐতিহ্যবাহী আবাহনী লিমিটেডে; খেলেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রেও।
সংগঠক হিসেবেও ঘরে-বাইরে পরিচিত মুখ সালাউদ্দিন। তিন দফায় বাফুফে সভাপতির দায়িত্ব পালনের আগে ছিলেন সংস্থাটির সহ-সভাপতিও। দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের টানা তৃতীয়বারের সভাপতি (বর্তমানেও দায়িত্বে আছেন)।
গত তিন মেয়াদে সালাউদ্দিনের সেরা সাফল্য ফুটবলকে নিয়মিত মাঠে রাখা। কোটি টাকার সুপার কাপ, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপের আয়োজন, লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আনা, বয়সভিত্তিক ফুটবলে মেয়েদের সাফল্য তার এই তিন মেয়াদের উল্লেখযোগ্য পাওয়া।
এসময় ব্যর্থতাও আছে ঢের। ঘরোয়া সূচি ঠিকঠাক অনুসরণ করতে পারেনি সালাউদ্দিনের কমিটি। জাতীয় দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের চার আসরে পেরুতে পারেনি গ্রুপ পর্ব। সিলেটে একাডেমি প্রতিষ্ঠা করলেও শেষ পর্যন্ত তা বন্ধ হয়ে গেছে, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১৮৭।
সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ৯১ ভোট পেয়ে এবারও নির্বাচিত হয়েছেন সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ‘সম্মিলিত পরিষদের’ আব্দুস সালাম মুর্শেদী। প্রতিদ্বন্দ্বী ‘সমন্বয় পরিষদের’ শেখ মোহাম্মদ আসলাম পেয়েছেন ৪৪ ভোট।
চার সহ-সভাপতি পদের তিনটিতে নির্বাচিত হয়েছেন সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন পরিষদের ইমরুল হাসান, কাজী নাবিল আহমেদ, আতাউর রহমান মানিক। তাবিথ আওয়াল ও মহিউদ্দিন আহমেদের ভোট সমান হওয়ায় আগামী ৩১ অক্টোবর দুজনকে নিয়ে পুনরায় ভোটাভুটি হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক।
বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) গত বছরের আয়-ব্যয়ের রিপোর্ট এবং আগামী বছরের বাজেট কোনো আপত্তি ছাড়াই অনুমোদন হয়।
সালাউদ্দিনের প্যানেলের এবার দেওয়া ৩৬ দফা ইশতেহারে আগামী চার বছরের মধ্যে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে ১৫০-এর কাছাকাছি নিয়ে আসা, ঘরোয়া ফুটবলের ‘সুনির্দিষ্ট পঞ্জিকা’ প্রণয়ন, নির্ধারিত সময়ে দলবদল, জেলা ফুটবল লিগগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আয়োজন, প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় বিভাগ লিগে অংশ নেওয়া দলগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় আনা ও বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলো আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
ছয় বছর বিরতি দিয়ে শুরু হওয়া মেয়েদের লিগের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও এসএ গেমসে শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার অঙ্গীকারও আছে।
ইশতেহারে আরও আছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন স্টেডিয়ামের সংখ্যা বৃদ্ধি, দেশের চারটি স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজন, টার্ফগুলোর পুনঃউন্নয়ন, ঘরোয়া ফুটবলের দলগুলোর হোম ভেন্যুর প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরণ এবং আন্তর্জাতিক মানের জিমনেশিয়াম তৈরির উদ্যোগের কথাও।
২০০৩ সালে সবশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। এসএ গেমসে সর্বশেষ মুকুট জিতেছিল ২০১০ সালে। বর্তমানে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৮৭তম স্থানে থাকা দল সাফের গত চার আসরের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ে। ভারত ও পাকিস্তানের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও গত এসএ গেমসের ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় দল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন