পার্বত্য রাঙ্গামাটিতে পুলিশের সামনে সন্ত্রাসী গ্রুপের সশস্ত্র মহড়া! প্রশাসনের নিরব ভূমিকা

পার্বত্য রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাধীন আসামবস্তির কাপ্তাই সড়কের বড়াদাম এলাকায় পুলিশের সামনে দিনদুপুরে সন্ত্রাসী গ্রুপের সশস্ত্র মহড়া দেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকার সাধারণ মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

রাঙামাটিতে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের সামনে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সশস্ত্র মহড়া দেওয়ার পরও এ ব্যাপারে প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র-যুব ও নারী সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী চার সংগঠন।

গত ১৯শে সেপ্টেম্বর পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে আসামবস্তির কাপ্তাই সড়কের বড়াদাম এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের সামনে সন্ত্রাসী গ্রুপের সশস্ত্র মহড়া দিয়ে কিছু দূরত্ব বজায় রেখে হেঁটে হেঁটে চলে যেতে দেখা গেছে। তবে এসময় সড়কে এলাকার কাউকে দেখা যায়নি। আর তারা কোন আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল, তা কেউ স্বীকার করছে না।
স্থানীয় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা এই দৃশ্য দেখেছেন, তারা জানান, তারা সর্বমোট ছয় জন ছিল। তাদের কোমরে ও হাতে একে-৪৭ রাইফেল দেখা গেছে। কারো কারো গায়ে ছিল শাট, গেঞ্জি, ফুল প্যান্ট, হাফ প্যান্ট আর মাথায় ছিল গামছা বাঁধা অবস্থায়। আরেক জনকে দেখা যায় হাফ প্যান্ট কোমরে একটি ব্যাগ ঝুলানো ও কালো ছাতা। দূরত্ব বজায় রেখে সবাইকে বড়াদাম এলাকায় চলে যেতে দেখা গেছে।

এদিকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভানেত্রী কণিকা দেওয়ান, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নীতি চাকমা শুক্রবার(২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২২) সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘গত ১৯শে সেপ্টেম্বর ইনস্টাগ্রামের একটি আইডি থেকে ভিডিও পোস্ট করা হয়, পরে সেখান থেকে স্ক্রিনরেকর্ড ভিডিওটি ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায় দিন দুপুরে ভারী অস্ত্র হাতে একদল যুবক একটি পুলিশ ভ্যানের পাশ ও সামনে দিয়ে লাইন করে হেঁটে যাচ্ছ, আর এ সময় উক্ত ভ্যানে( গাড়ির নম্বর ‘জেলা পুলিশ, রাঙ্গা-১০’) থাকা এক পুলিশ সদস্য হেসে হেসে এই দৃশ্যটি ভিডিও ধারণ করছে। এছাড়া ভিডিওটিতে পুলিশের গাড়িতে থাকা একজনকে ছাতা মাথায় দিয়ে হেঁটে যাওয়া সন্ত্রাসীকে সালাম দিতেও শোনা যায়।

নেতৃবন্দ আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কর্মকর্তারা দেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে তাদের জিরো টলারেন্স নীতি থাকার কথা প্রায় সময় বলে থাকেন। কিন্তু রাঙামাটিতে পুলিশের সহাস্য উপস্থিতিতে দিন দুপরে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়া চলার ৭দিন অতিক্রম হতে চললেও এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কিংবা পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কোন পদক্ষেপ কিংবা প্রতিক্রিয়া ও বক্তব্য আমরা এখনও দেখতে পাইনি, যা উক্ত সন্ত্রাসীদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের সম্পর্কের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।
প্রশাসনের কোন কোন মহলের মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া রাঙামাটি শহরে কোন সন্ত্রাসী বাহিনীর পক্ষ এভাবে প্রকাশ্য মহড়া দেয়া সম্ভব নয় বলে নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেন।

তারা আরো বলেন, গত ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২২বিকেলে বান্দরবান জেলা শহরের উজানি পাড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তথাকথিত মগ পার্টি নামে একটি সশস্ত্র দল ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। গত ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২২ বান্দরবান আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন যে, তিনি সন্ত্রাসীদের অবস্থানের বিষয়ে বান্দরবান পুলিশ সুপারকে অবহিত করে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। কিন্তু তারপরও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

চার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, এসব ঘটনায় প্রমাণ হয় যে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসনের একটি অংশ পিসিজেএসএস ও জুম্ম রাজাকারদের গুটি হিসেবে ব্যবহার করে এই অঞ্চলকে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করতে একটি সুগভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে পুলিশের সামনে প্রকাশ্য সশস্ত্র মহড়ায় অংশ নেয়া পিসিজেএসএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ঠ্যাঙারে বাহিনীর ব্যবহার, মদদদান ও পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। এছাড়া প্রকাশ্যে পুলিশের নাকের ডগায় সন্ত্রাসীদের বিচরণ ও অবস্থান সত্বেও কেন তাদের বিরুদ্ধে কোনরূপ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি সে বিষয়ে রাঙামাটি ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কৈফিয়ত চাওয়া ও তাদের অপসারণের জন্য সরকারের কাছে তারা দাবি জানান। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ’ প্রচার ও প্রকাশনা বিবাগের প্রধান নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া উক্ত ভিডিওতে প্রদর্শিত মহড়ার স্থানটি রাঙামাটি সদর উপজেলাধীন আসামবস্তির কাপ্তাই সড়কের বড়াদাম এলাকায় বলে জানা গেছে, যা সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পিসিজেএসএস’র আস্তানা বলে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত।’ তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস) কেন্দ্রীয় কমিটি’র প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের সজীব চাকমা এই ভিডিও ধারনটি তাদের নয় অস্বীকার করেছেন। পার্বত্য শান্তিচুক্তির অস্ত্র সমর্পনের পর তারা গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আন্দোলনের বিশ্বাসী এবং এটি উদ্দেশ্য প্রনোদিত।

এ ব্যাপারে রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ জানান, ব্যাপারটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ ব্যাপারটি নিয়ে আমরা কাজ করছি।