খাগড়াছড়িতে ভূমি বেদখল বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে মাটিরাঙ্গায় ইউপিডিএফের বিক্ষোভ

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ভূমি বেদখল বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে ইউপিডিএফে’র বিক্ষোভ মিছিল করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বেদখলকৃত ভুমি ফেরত দান, সেটলারদের সমতলে পুনর্বাসন, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুুদের নিজ জমিতে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপুরণ প্রদান এবং ভুমি বেদখল বন্ধের দাবিতে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)।

রোববার(২৫শে সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার সময় মাটিরাঙ্গা উপজেলার ওয়াছু এলাকায় ইউপিডিএফ’র মাটিরাঙ্গা-গুইমারা ইউনিটের উদ্যোগে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ইউপিডিএফ’র গুইমারা ইউনিটের সংগঠক তানিমং মারমার সভাপতিত্বে ও নিশান মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি রজেন্টু চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর মাটিরাঙ্গা উপজেলা সভাপতি অনিমেষ চাকমা।

সমাবেশে যুব ফোরাম নেতা রজেন্টু চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভ‚মি সমস্যা। এদেশের শাসকগোষ্ঠি পরিকল্পিতভাবে লক্ষ লক্ষ সেটলার বাঙালিকে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে তাদেরকে পাহাড়িদের জায়গায় পুনর্বাসনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে এই ভুমি সমস্যাকে জটিল করে তুলেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের ওপর যে নিপীড়ন-নিপীড়ন শুরু করা হয়েছিল দীর্ঘ ৫০বছরেও তা চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড়িদের লক্ষ লক্ষ একর ভুমি বেদখল করা হয়েছে। এখানে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো সেটলার ও ভুমিদস্যুদের সহযোগীতা দেয়ায় দিন দিন ভুমি বেদখলের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন পার্বত্য জেলায় প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও ভুমি বেদখলের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে।

সাম্প্র্রতিক সময়ে বান্দরবানের লামা উপজেলায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক প্রশাসনের সহযোগিতায় ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০একর জুমভুমি জবরদখল করে সেখান থেকে তাদেরকে উচ্ছেদের যে চেষ্টা চলছে তার জন্য তিনি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুনর্বাসিত সেটলার বাঙালিদের সমতলে সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, যতদিন এই অঞ্চলে সেটলাররা থাকবে ততদিন এই ভ‚মি সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ অধিকাংশ ভ‚মিই এখন সেটলার বাঙালিরা বেদখল করে ফেলেছে। কাজেই তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে পুনর্বাসনের মাধ্যমেই এখানকার ভ‚মি সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।

পিসিপি নেতা অনিমেষ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের ন্যায্য আন্দোলন দমনের লক্ষ সরকার পাহাড়িদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন ও ভুমি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। মাটিরাঙ্গাসহ গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন ভুমি আগ্রাসন চলছে। গত জুলাই মাসে মহালছড়ির মাইসছড়ি জয়সেন পাড়ায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সেটলাররা পাহাড়িদের ৩৭টি ঘরবাড়ি ভাংচুর ও জ্বালিয়ে দিয়েছে। কিন্তুু প্রশাসন বরাবরেই মতোই সেটলারদের পক্ষবলম্বন করায় পাহাড়িরা এখনো তাদের বসতভিটায় ফিরতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, কখনো বিভিন্ন বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনের নামে, কখনো পর্যটনের নামে, কখনো উন্নয়ন কিংবা সড়ক নির্মাণের নামে এই ভুমি বেদখলের মহোৎসব চলছে। আর এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে খুন, গুম, গ্রেফতারসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

তিনি ভুমি বেদখলসহ অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহবান জানান।
ইউপিডিএফ সংগঠক ও বিক্ষোভ সমাবেশের সভাপতি তানিমং মারমা বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার নীলনক্সা বাস্তবায়ন করে চলেছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার নিজেকে অসা¤প্রদায়িক ও সংখ্যালঘু দরদী হিসেবে বুলি আওড়ালেও কার্যত উগ্রসা¤প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে। ২০১১সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে আর ২০১৫সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক দমনমূলক ১১নিদের্শনা জারি করে পার্বত্যাঞ্চলে দমন-পীড়ন বাড়িয়ে দিয়েছে। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ভিন্ন ভাষাভাষী জাতি ও সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের লোকজন সা¤প্রদায়িক হামলা, মামলাসহ ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদের শিকার হচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, সরকার দশকের পর দশক ধরে বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুনর্বাসিত সেটলার বাঙালিদের রেশন সুবিধা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বহাল রেখে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই সেটলাররা পার্বত্য চট্টগ্রামে গণহত্যা, সা¤প্রদায়িক হামলা, ভুমি বেদখল, নারী নির্যাতনসহ নানা অপরাধকর্ম সংঘটিত করছে। অন্যদিকে সরকারের প্রতিশ্রæতি ও চুক্তি মোতাবেক ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তুুদের পুনর্বাসনে সরকার এখনো সঠিক কোন উদ্যোগ নেয়নি। ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীরা এখনো তাদের ভিটেমাটি ও জমিজমা ফেরত পায়নি।
সমাবেশ থেকে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত ভ‚মি বেদখল বন্ধ করা এবং এ যাবত বেদখলকৃত সকল জমি ফিরিয়ে দেওয়া, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের নিজ নিজ জমিতে যথাযথ পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করা, পাহাড়িদের প্রথাগত ভুমি অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান, সেটলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে পুনর্বাসন করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায় দমনপীড়ন বন্ধ ও সেনাশাসন ‘অপারেশন উত্তরণ’ তুলে নিয়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা জোর দাবি জানান।

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জাননো হয়।