রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে আরেক মাইলফলক
পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রথম ইউনিটের কাজ এগিয়ে চলার মধ্যেই উদ্বোধন হলো দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ।
শনিবার দুপুরে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বরিসভ যৌথভাবে এই কাজ উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বেলা ১১টা ৫০ এ বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে রূপপু পৌঁছেন। কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধনের জন্য এর আগে থেকেই সেখানকার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অন্য অতিথিরা। প্রধানমন্ত্রী গাড়িতে করে অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হন বেলা ১২টায়।
সেখানে আগে থেকে অপেক্ষায় ছিলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরিফ ডিলু, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, সেনা প্রধান আজিজ আহমেদ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী ছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী রুশ সংস্থা রোসাটমের উপপরিচালক নিকোলাই স্পাসকি, বাংলাদেশে রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার আই ইগ্নাতভ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন সেখান।
সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে একদিনে প্রধানমন্ত্রী ও বিজ্ঞান মন্ত্রী এবং অন্যদিকে রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী ও রোসাটমের উপপরিচালক যৌথভাবে বোমাত টিপে কংক্রিট ঢালাই কাজ উদ্বোধন করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী ও রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী প্রতীকী পিলারে কংক্রিট ঢালেন। এরপর অন্য অতিথিরাও সেখানে কংক্রিট ঢালেন।
মূল সাইটে যেখানে সংক্রিট ঢালা হচ্ছে, সেখানে অবশ্য হাতের ছোঁয়া ছিল না। বিশাল একটি ক্রেনের সাহায্যে সেখানে সংক্রিট ঢালার ব্যবস্থা ছিল। এই কংক্রিট মেশানোতেও হাতের ছোঁয়া নেই। যন্ত্রের মাধ্যমে মেশানো হচ্ছে পাথর, সিমেন্ট, বালু।
রূপপুরে পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ পাওয়ার এই উদ্যোগটি বাংলাদেশের স্বপ্নের প্রকল্প। পাকিস্তান শাসনামলেই ৬০ এর দশকেই সেখানে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাশিয়া সফর করে সেখানে ২০০ মেগাওয়াটের একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে আলোচনা করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে তার মৃত্যুর পর আটকে দেয়া হয় সেই উদ্যোগ। এরপর
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে সেখানে ৬০০ মেগাওয়াটের একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এটি আর এগিয়ে নেয়নি।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের আগে ইশতেহাতে এই প্রকল্পটি এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার করে আওয়ামী লীগ। আর ক্ষমতায় আসার পর রাশিয়ার সঙ্গেই আলোচনা শুরু করে।
২০১০ সালের ২১ মে পারমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে চুক্তি হয় মস্কোতে। আর ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর দুই হাজার চারশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দুটি চুল্লি নির্মাণে রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ।
গত বছরের ২১ জুন বিএইআরএ রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের লাইসেন্স দেয় এবং ৪ নভেম্বর প্রথম ইউনিটের নকশা এবং নির্মাণ কাজের লাইসেন্স দেয়। আর ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী প্রথম ইউনিটের মূল নির্মাণ কাজের (এফসিপি) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চুক্তি অনুসারে এটি নির্মাণের জন্য সাড়ে পাঁচ বছর সময় পাবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। সে অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুনে কেন্দ্রটির এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালের এপ্রিলে একই ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট চালু হওয়ার কথা।
এ প্রকল্পে রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বাধুনিক (থ্রি প্লাস জেনারেশন) ‘ভিভিইআর-১২০০’ প্রযুক্তির পরমাণু চুল্লি ব্যবহার করা হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে এই প্রকল্প ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া। দেশটির ঠিকাদার ইতিমধ্যে প্রকল্প সাইটে কাজ করছে। এছাড়া ভারতের গ্লোবাল সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার এনার্জি পার্টনারশিপ (জিসিএনইপি) কে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ এবং তদারকির জন্য পরামর্শক সংস্থা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিএইসি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে মোট ব্যায় ধরা হয়েছে ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে রাশিয়া ঋণ হিসেবে দেবে ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার। আর ভারত ঋণ দেবে এক বিলিয়ন ডলার। বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে দেবে।
রূপপুরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পটুয়াখালীর পায়রাতেও আরও একটি বড় আকারের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা আছে সরকারের।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন